মেরেকেটে বছর ছয়েক বয়স তাদের। জানলায় দাঁড়িয়ে সকাল থেকে হাপুস চোখে কেঁদে চলেছে। কী হয়েছে?
পড়শিদের প্রশ্নে যমজ দুই বোন, গ্রেসি আর জেসি জানায়, মা তাদের ঘরে বন্ধ করে দিদির কাছে চলে গিয়েছে। দিদি কোথায় থাকে? দুই বোন ফুঁপিয়ে জানায়, রাঁচি।
রানাঘাটের গাংনাপুর এলাকার বেগোপাড়ার এক চিলতে ঘরে দুই বোনকে ‘বন্দি’ করে সটান রাঁচি! খানিক অপেক্ষার পরে পাড়া-পড়শি পুলিশে খবর দেন। বুধবার দুপুরে সে বাড়ির তালা ভেঙে উদ্ধার করা হয় দুই বোনকে। পরে তাদের পাঠানো হয় সরকারি নিরাপত্তায়।
বিকেলের দিকে হন্তদন্ত হয়ে থানায় প্রবেশ মা আনু অধিকারীর। উদ্বিগ্ন গলায় বলেন, “বাচ্চা দু’টিকে দিন, বাড়ি নিয়ে যাই।” কিন্তু তাদের ঘর-বন্দি করে রেখে চলে গিয়েছিলেন কেন? মহিলা জানান, বড় মেয়ে, জেনি রাঁচিতে একটি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছুটি পড়েছে বলে তাঁকে হস্টেল থেকে বাড়ি আনতে গিয়েছিলেন। দুই যমজ বোনকে বুঝিয়ে সোমবার দুপুরে বেরিয়ে পড়েন তিনি। |
আনুদেবী বলেন, “তা ছাড়া খাবার, জল সব গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলাম।” কিন্তু দুই সদ্য-বালিকাকে একলা রেখে দু-রাত্রির জন্য চলে যাওয়া যায়? মহিলার উত্তর: “ওরা নিজেরাও বলেছিল, মা যাও, আমরা ঠিক থাকতে পারব। পাড়ার দু-এক জনকে বলেও গিয়েছিলাম। আমার অন্য দুই মেয়েই ওড়িশায় পড়াশোনা করে। মাঝে মাঝেই তাদের কাছেও যেতে হয়।”
পড়শিরা জানান, কিছু জানিয়ে যাননি আনুদেবী। ডন বসকো পাড়ায় ওই বাড়ির কর্তা নিখিল অধিকারী কচ্চিৎ বাড়িতে আসেন। তিনি রাঁচিতে একটি মিশনারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মাস ছয়েক ধরে যমজ মেয়েদের নিয়ে আনুদেবী একাই ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।
রানাঘাটের এসডিপিও আজহার এ তৌসিফ বলেন, “খবর পাওয়ার পরই শিশু দু’টিকে উদ্ধার করা হয়। তবে মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়নি। কেন এমন করলেন ওই মহিলা তা দেখা হচ্ছে।” রানাঘাটের মহকুমাশাসক সুজন রায়চৌধুরী বলেন, “মহিলা এ কাজ করলেন কী করে, বুঝতেই পারছি না। শিশু দু’টিকে কোনও সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে হবে।” নদিয়া জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, “মেয়ে দু’টি নিরাপত্তা কোথায় পেতে পারে সে ব্যাপারে রানাঘাটের মহকুমাশাসকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।”
কিন্তু নিরাপত্তার নামে সরকারি ঠিকানায়? শিশুদের স্বভাব ও আচরণ নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার নীলাঞ্জনা গোস্বামী বলেন, “মহিলা কোন পরিস্থিতিতে বাচ্চা দু’টিকে রেখে চলে গিয়েছিলেন তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। ও ভাবে বাচ্চাদের একা রেখে গেলে বিপদের সম্ভাবনা থাকেই। তা সত্ত্বেও বলছি, মা যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক হন, তা হলে মায়ের কোলই ওদের সেরা ঠিকানা।”
বিকেলে থানায় বড় মেয়ে জেনি বলেন, “মা বলেছিল, বোনেদের ঘরে আটকে রেখে এসেছে। শুনে মাকে খুব বকাবকি করলাম। তবে বিশ্বাস করুন, মা ওদের খুব ভালবাসে। ওরাও মায়ের কাছে ফিরতে পারলেই ভাল হয়।” |