কুবের উবাচ
প্রিয়ম চৌধুরী (৪৬)
• স্ত্রী সুদীপ্তা (৩৯) • ছেলে (১৬) • বাবা (৭৫) • মা (৬৫) • বেসরকারি সংস্থার কর্মী
• পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী • পিএফ বা গ্র্যাচুইটি নেই • নিজের ফ্ল্যাট
• ছেলে পড়ে একাদশ শ্রেণিতে • স্বপ্ন ছেলের উচ্চশিক্ষা • লক্ষ্য, ছাপান্নতেই সচ্ছল অবসর
 
মাসে নিট আয়
বেতন
১,১২,৫০০
ভাড়া থেকে
৭,০০০
এমআইএসের সুদ
৬,০০০
টাকা রাখেন (বছরে)
• রেকারিং ডিপোজিট ২,৪০,০০০
• বিমা ও পেনশন প্রকল্প

১,৮৭,০৬৩

• এসআইপি ৬০,০০০
খরচ (মাসে)
• সংসার চালাতে ৩০,০০০
• ছেলের পড়াশোনা ১০,০০০
• দ্বিতীয় ফ্ল্যাটের কিস্তি
(দিতে হবে আরও ৮ বছর)
২২,০০০
• বাবা ও মাকে ১০,০০০
• পেট্রোল ৬০০০
• স্বাস্থ্যবিমা (বছরে) ৫০০০
সম্পদ
• ফিক্সড ডিপোজিট
৬,০০,০০০
• এমআইএস ৯,০০,০০০
• এনএসসি ২,৫০,০০০
(মেয়াদ ফুরোবে ২০১৭ সালে)
প্রকল্প বিমার অঙ্ক প্রিমিয়াম মেয়াদ শেষ
এইচডিএফসি ক্রেস্ট
বিড়লা এসএল সরল জীবন
এলআইসি জীবন আনন্দ
এলআইসি এনডাওমেন্ট
এলআইসি জীবন সরল
পেনশন প্রকল্প
ওয়েলথ্‌ প্লাস
২,৫০,০০০
৫,০০,০০০
১,০০,০০০
৬,৫০,০০০
১,২৫,০০০
২,০০,০০০
১,০০,০০০
৫০,০০০
৫০,৯১৬
৮০২৭
৪২,০০০
৬১২০
১০,০০০
২০,০০০
২০১৫
২০২৮
২০২৫
২০১৯
২০২৪
২০২৭
২০১৮
মোট ১৯,২৫,০০০ ১,৮৭,০৬৩
 
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
প্রিয়মের বয়স ৪৬। বেতনকে যদি মাপকাঠি ধরি, তা হলে বলতেই হয়, এখনও পর্যন্ত তাঁর কেরিয়ার তারিফ করার মতো। বুদ্ধি, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের জোরে প্রিয়ম কাজের জায়গায় যেমন সাফল্য পেয়েছেন, তেমনই যত্ন নিয়ে সাজিয়েছেন সঞ্চয়ের ঝুড়িও। চেষ্টা করেছেন, টাকা যতটা সম্ভব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখতে। যা নিঃসন্দেহে দূরদর্শিতার পরিচয়।
শুধু তা-ই নয়। প্রিয়মের চিঠি পড়ে অন্তত মনে হল, বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্যেও অবহেলা করছেন না তিনি। সব মিলিয়ে, অন্তত এই মুহূর্তে তাঁর পরিবার সচ্ছলতার পোক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে।
এত ভালর ভিড়ে অবশ্য নিজের চিন্তা বা উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন প্রিয়ম। আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন নিজের স্বপ্নের কথা। আজ আমাদের চেষ্টা হবে তাঁর টাকা এমন ভাবে রাখার পরামর্শ দেওয়া, যাতে স্বপ্ন পূরণ হয়। কর্পূরের মতো উবে যায় উদ্বেগও। আসুন সেই চেষ্টা করি।

সচ্ছল অবসর
প্রথমে উদ্বেগের কথাতেই আসি। প্রিয়ম জানিয়েছেন, তিনি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। যেখানে পিএফ কিংবা গ্র্যাচুইটি নেই। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। আবার আর বছর দশেকের বেশি চাকরি করার ইচ্ছেও নেই। তাই ছাপ্পানয় নিশ্চিন্ত, সচ্ছল অবসরের টোটকা চেয়েছেন তিনি।
পিএফ বা গ্র্যাচুইটি না-থাকা সত্ত্বেও প্রিয়ম এখনও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলেননি। তাঁর সঞ্চয়-কৌশলে এটা একটা মস্ত ফাঁক। তা ভরাট করতে আমার পরামর্শ
(১) অবিলম্বে একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলুন। শুরু করুন সেখানে প্রতি মাসে ৮৫০০ টাকা জমানো দিয়ে।
(২) গত দু’বছর ধরে এসআইপি (সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) প্রকল্পে মাসে ৫ হাজার টাকা প্রিয়ম জমাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু আমার মতে তা বড্ড কম। তাঁর এখন যা বয়স কিংবা আয়, সেই অনুপাতে এই অঙ্ক অন্তত ১০ হাজার হওয়া উচিত।
(৩) এই সব ক্ষেত্রে টাকা সংস্থানের জন্য প্রয়োজনে রেকারিং ডিপোজিট সামান্য কমাতে পারেন। এখনকার মাসে ২০ হাজারের বদলে তা করতে পারেন ১৫ হাজার টাকা।

কারণটাও বলি
প্রিয়মের চিঠি পড়তে গিয়ে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখেছি আমি। কোনও সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখার সময়ে তিনি ঝুঁকির থেকে শত হস্ত দূরে।
যে-কারণে এসআইপি-র মাধ্যমে শেয়ার বাজারে লগ্নি তাঁর বেশ কম। অথচ সেই প্রিয়মই বিমা প্রকল্পে টাকা ঢালার সময়ে লগ্নি করেছেন এক গুচ্ছ ইক্যুইটি নির্ভর প্রকল্পে (এ নিয়ে পরে বিশদে আলোচনা করব)। আমি মনে করি, রেকারিং ডিপোজিটের মতো প্রকল্পে আয়ের একটা বড় অংশ তুলে রাখলে, ঝুঁকি কমে ঠিকই। কিন্তু তেমনই একটু বেশি রিটার্ন (যা মূল্যবৃদ্ধির হারকে বেশ কিছুটা ছাপিয়ে যাবে) পেতে হলে কিছুটা ঝুঁকি নেওয়াও প্রয়োজন। আর মনে রাখবেন, দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার বাজারে লগ্নি করলে, তার মতো রিটার্ন দেওয়া অন্য কারও পক্ষে বেশ শক্ত। বুদ্ধি করে লম্বা সময়ের জন্য (অন্তত ৫-১০ বছর) সেখানে টাকা খাটাতে পারলে, ঝুঁকিও অনেকটাই কমে। লগ্নির সময়ে এ বিষয়টি মাথায় রাখলে, আখেরে লাভ হতে পারে।

বিমা কিন্তু সঞ্চয় নয়
প্রিয়মের বিমায় বিনিয়োগ বেশ মোটাসোটা (সঙ্গের সারণি দেখুন)। অথচ তার তুলনায় বিমার কভারেজ অনেকটাই কম। এমনটা কেন?
আসলে প্রিয়ম অনেক প্রকল্পই তার কভারেজের জন্য বাছেননি। বরং তাতে টাকা ঢেলেছেন ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের কথা ভেবে। আমি সঞ্চয়ের পরামর্শ দিতে গিয়ে যত জনের সঙ্গে কথা বলি, তাঁদের অধিকাংশই অবশ্য এই একই ভুল করেন।
মনে রাখবেন, বিমা কিন্তু আসলে সুরক্ষা কবচ। সঞ্চয়ের মাধ্যম সে ভাবে নয়। কারণ, ইউলিপ হোক বা এনডাওমেন্ট প্রকল্প, সেখানে প্রিমিয়াম গুনতে হয় অনেক বেশি। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হল, তুলনায় অল্প টাকায় টার্ম পলিসি (যেখানে শুধু ঝুঁকিরই কভারেজ মেলে। এমনিতে মেয়াদ শেষে টাকা পাওয়া যায় না) করা। বাকি টাকা বরং বেশি রিটার্নের বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করা ভাল।
এখানে প্রিয়মকে বিমার বিষয়ে আমার দু’টি পরামর্শ
(১) আপনার বিমার কভারেজ যথেষ্ট কম। সেই ফাঁক ভরাট করতে আরও ২৫ লক্ষ টাকার বিমা করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আপনার উচিত টার্ম পলিসি করা। তা হলে প্রিমিয়ামও বেশি লাগবে না।
(২) যে-সব ইউলিপ প্রকল্পে আপনি বার্ষিক প্রিমিয়াম দেন, তা প্রতি মাসে দেওয়া ভাল। কারণ, তাতে শেয়ারের হঠাত্‌ ওঠা-নামার ধাক্কা তুলনায় কম লাগবে। অর্থাত্, গড়ের সুবিধা পাবেন আপনি।

ঘুরপথে পেনশন
অবসরের পরের জীবন নিয়ে আমাদের সকলেরই চিন্তা থাকে। বিশেষত যাঁরা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। তাই অন্তত একখানা পেনশন প্রকল্পের বন্দোবস্ত আগেভাগে করতে চাই আমরা।
এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হল, অবসর জীবনের কথা মাথায় রেখে পেনশনের আগাম ব্যবস্থা করার তাগিদ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু তার জন্য যে পেনশন প্রকল্পেই লগ্নি করতে হবে, এমনটা নয়। তার পরিবর্তে ডেট (ঋণপত্র নির্ভর) মিউচুয়াল ফান্ড, রেকারিং ডিপোজিট, ফিক্সড ডিপোজিট, এমনকী এসআইপি-র মাধ্যমে শেয়ার বাজারে লগ্নি করেও প্রথমে একটা বড়সড় তহবিল গড়ে তুলতে পারেন আপনি। তার পর সেই তহবিলের টাকায় কিনতে পারেন পছন্দসই অ্যানুইটি প্রকল্প। সচ্ছল অবসর জীবনের জন্য এটাও কিন্তু মন্দ পথ নয়।
তা ছাড়া, প্রিয়মের সামনে এখনও অন্তত এক দশকের চাকরি-জীবন পড়ে রয়েছে। তাই বড়সড় পেনশন তহবিল তৈরির জন্য বেশ কিছুটা সময় পাবেন তিনি।

স্বাস্থ্য বিমা যথেষ্ট নয়
আজকাল চিকিত্সার যা খরচ, তাতে আমার মনে হয়, স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম হয়তো কিছুটা বাড়াতে হবে প্রিয়মকে। বছরে ৫ হাজার টাকা প্রিমিয়ামে নেওয়া বিমার কভারেজ যথেষ্ট না-ও হতে পারে।

বাড়ির ধার জলদি মেটান
প্রিয়মের ফ্ল্যাট দু’টি। একটির ধার ইতিমধ্যেই মেটানো সারা। কিন্তু দ্বিতীয়টির জন্য এখনও মাসিক কিস্তি গুনতে হবে ৮ বছর।
আমার মতে, হাতে বাড়তি টাকা এলেই ওই ধার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে ফেলা ভাল। এ ক্ষেত্রে এনএসসি এবং এমআইএসের টাকা ব্যবহারের কথা ভেবে দেখতে পারেন।

ছেলের উচ্চশিক্ষা
যে কোনও ভাল জিনিসের মতো আজকের এই আলোচনার শেষও স্বপ্ন সত্যি দিয়ে হওয়াই ভাল। প্রিয়মের ইচ্ছে ছেলের উচ্চশিক্ষা। দেখি, কী করলে সেই পথ আরও একটু মসৃণ হয়।
প্রিয়মের ছেলে এখন বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সেই হিসেবে ২০১৫ সালে তার স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার কথা। তাই সেই সময়ে পর্যাপ্ত টাকা পাওয়ার পথ খোলা রাখতে হবে। মূলত তিনটি জায়গায় রাখা টাকা ওই কাজে ব্যবহারের চিন্তা করতে পারেন
(১) ফিক্সড ডিপোজিটের ৬ লক্ষ টাকা কিংবা তার ভিত্তিতে নেওয়া ৯০% পর্যন্ত ওভার-ড্রাফট্।
(২) প্রতি মাসে রেকারিং ডিপোজিটে ২০ হাজার টাকা রাখেন প্রিয়ম। হয়তো তার একটা অংশ বিমার প্রিমিয়াম দিতে ব্যবহার করেন তিনি। কিন্তু তার পরেও যে-টাকা পড়ে থাকবে, ছেলের পড়াশোনায় তা স্বচ্ছন্দে কাজে লাগাতে পারবেন।
(৩) ২০১৫ সালেই এইচডিএফসি ক্রেস্টের টাকা হাতে পাবেন প্রিয়ম। যা দেখছি, তাতে সেখান থেকে তাঁর ৩.৭৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। ওই টাকাও ছেলের পড়াশোনায় কাজে আসবে বলেই আমার ধারণা।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.