দেশীয় নানা প্রজাতি তো আছেই। এ বার উৎপাদন বাড়াতে তাইল্যান্ডের বিশেষ প্রজাতির ধানের পরীক্ষামূলক চাষের পরিকল্পনা নিল কৃষি দফতর। ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রর মাধ্যমে চিরাং সাব ১ নামে ওই ধানের বীজ আনা হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। জুন মাসের শেষ নাগাদ শিলিগুড়ি মহকুমার দুটি ব্লকে বীজ বোনার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়েছে। শুধু শিলিগুড়ি মহকুমায় নয়। কৃষি অধিকারিকরা জানান, চিরাং সাব-১ প্রজাতির ধানের পরীক্ষামূলক চাষের উদ্যোগ উত্তরবঙ্গে এই প্রথম। চাষের কাজ সরজমিন দেখতে জুলাইয়ে ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তিন বিজ্ঞানী শিলিগুড়িতে আসবেন। তাঁরা কয়েক দিন থেকে কৃষি আধিকারিক ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলবেন। প্রকল্প ঘিরে মহকুমা কৃষি আধিকারিকদের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক তুষারকান্তি ভূষণ বলেছেন, “আমরা ফলনে জন্য অপেক্ষায় আছি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই প্রজাতির ধান চাষ সফল হলে ধান উৎপাদনের ছবি পাল্টে যাবে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ির খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লকে ১০০ হেক্টর জমিতে ওই ধানের পরীক্ষামূলক চাষ করা হবে। কাজের সুবিধার জন্য দশটি ফার্মার্স ক্লাবকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ক্লাব পিছু ১০ হেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হবে। জুন মাসের শেষ থেকে বীজ বোনার কাজ শুরু হবে। খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লকের কৃষি আধিকারিক মেহফুজ আহমেদ জানান, ১২০ দিনে ওই ধান খেত থেকে ঘরে তুলে নেওয়া সম্ভব। দেশীয় ধানের ক্ষেত্রে সময় লাগে ১৫০ দিন। উৎপাদন সময় কমায় ধান কেটে জমিতে শীতকালীন ফসনের চাষ করা সম্ভব হবে। উৎপাদনেও অনেক এগিয়ে চিরাং সাব ১। হেক্টর প্রতি জমিতে চাষ করে দেশীয় উচ্চ ফলনশীল ধান ৩ টনের বেশি পাওয়া যায় না। চিরাং সাব ১ হয় প্রায় ৫ টন। উৎপাদন বাড়াতে কেন তাইল্যান্ডের প্রজাতিকে পছন্দ করা হল? কৃষি আধিকারিকরা জানান, উত্তরবঙ্গ ও তাইল্যান্ডের আবহাওয়া প্রায় একই রকম। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সমান। পরীক্ষামূলক চাষের জন্য তাইল্যান্ডের চিরাং সাব ১ প্রজাতির ধান বেছে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ওই ধান সংকর প্রজাতির নয়। উচ্চ ফলনশীল। তাই চাষিরা বীজ সংরক্ষণের সুবিধে পাবেন। চাল সরু হওয়ায় বাজারে চাহিদা ও দাম থাকবে বলেও মনে করেন কৃষি আধিকারিকরা। খড়িবাড়ি ফাঁসিদেওয়া ব্লকে পরীক্ষামূলক চাষ সফল হলে অন্য ব্লকে চাষ শুরু হয়ে যাবে। একশো হেক্টর জমির জন্য ৫ টন বীজ আনা হচ্ছে। ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে ওই বীজ শিলিগুড়িতে পৌঁছবে। এর পরে তা ফার্মার্স ক্লাবগুলির হাতে তুলে দেওয়া হবে। বীজতলায় চারা করে দেশীয় ধানের মতো বোনা হবে। বিজ্ঞানী ও কৃষি আধিকারিকরা দেখবেন ধান চারা তরাইয়ের আবহাওয়া কতটা মানিয়ে নিতে পারছে। নতুন করে রোগের সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা। সবশেষে উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে কিনা। খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লকের কৃষি আধিকারিক বলেন, “বীজ বোনার পরে চাষের কাজ খতিয়ে দেখতে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তিন বিজ্ঞানী এখানে এসে থাকবেন। তাঁরা সব খতিয়ে দেখবেন। সব কিছু ঠিক মতো হলে আগামী বছর থেকে আরও বড় এলাকায় ওই ধানের চাষ শুরু হয়ে যাবে।” |