ওকলাহোমার টর্নেডো
দেহের নীচে শিশুদের আগলে রাখেন শিক্ষিকা
বুকের কাছে বাচ্চা মেয়েটিকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরেছেন লোকটি। আর তাঁর পিছনে এক মহিলার হাত ধরে স্কুলের ভগ্নস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসছে অন্য একটি শিশু। অঝোরে কেঁদে চলেছে সে। মহিলার নাক-গলা-বুক ভেসে যাচ্ছে রক্তে। গত কাল টর্নেডো-বিধ্বস্ত ওকলাহোমার মুখ হয়ে উঠেছিল এরাই। সংবাদমাধ্যমের দৌলতে এদের ছবিই ছড়িয়ে পড়েছিল দুনিয়ার আনাচে-কানাচে।
আর আজ প্রকাশ্যে এল তাঁদের সাহসিকতার পরিচয়। জানা গেল, ওই মহিলাই কী ভাবে নিজের শরীরটাকে ঢাল করে আড়াল করে রেখেছিলেন তাঁর ছোট্ট পড়ুয়াদের। সামনের লোকটি লেডোনার স্বামী স্টিভ। কোলে তাঁদের সন্তান জর্ডন। ঝড় যখন প্রায় ঘাড়ের কাছে চলে এসেছে ব্রায়ারউড স্কুলের শিক্ষিকা লেডোনা কব তখনও ক্লাসে। সময় নেই, তাই ছোটদের নিয়ে লুকোনোর পথ খুঁজে পাননি। মাটির উপর শুয়ে পড়েন লেডোনা। নিজের শরীরের তলায় লুকিয়ে ফেলেন খুদে পড়ুয়াদের। টর্নেডোর দৈত্যাকার ফণা থেকে যতটা সম্ভব তাদের আগলে রাখা যায়।
লেডোনা বলেন, “হাতের কাছে যা পেয়েছি, আঁকড়ে ধরেছি। শুধু মনে হচ্ছিল, ঝড় যদি আমাকে উড়িয়ে নেয়, একটা বাচ্চাও বাঁচবে না। তাই ওদের জন্য হলেও, আমাকে পারতেই হবে।” বেশি ক্ষণ এ ভাবে কাটেনি। ঝড়ের তাণ্ডবে লেডোনার পিঠের উপর ভেঙে পড়ে ক্লাস ঘরের এক দিকের দেওয়াল। জ্ঞান হারান তিনি।
ছাত্রীকে নিয়ে ধ্বংসস্তূপ থকে বেরিয়ে আসছেন লেডোনা কব। —ফাইল চিত্র
ওই ব্রায়ারউড স্কুলেই পড়ে লেডোনার মেয়ে জর্ডনও। ঝড় থামতেই স্ত্রী ও মেয়ের সন্ধানে স্কুলে ছুটে আসেন লেডোনার স্বামী স্টিভ কব। ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে মেয়েকে ফিরে পেয়ে বুকের মধ্যে জাপটে ধরেন তিনি। বললেন, “মেয়েকে বোঝাতে চেয়েছিলাম, দুনিয়ার সেরা বাবা আমিই। জানাতে চেয়েছিলাম, সে এখন নিরাপদ, সব ঠিক হয়ে যাবে।” ছোট্ট জর্ডন যদিও কিছুতেই ভুলতে পারছে সেই বিভীষিকার কথা। বলল, “মনে হচ্ছিল ঝড় আর থামবে না। প্রায় ১ ঘণ্টায়ে গিয়েছিল। আমরা যে বেঁচে যাব, ভাবতেই পারিনি।” বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলবাড়ির ভগ্নস্তূপের তলায় আটকে পড়েছিল জর্ডনও। জানাল, তার পায়ের উপর প্রচুর ইট পড়েছিল। “প্রাণপণে চেষ্টা করছিলাম ইটগুলো সরানোর। ঝড় তখনও থামেনি। এত ব্যথা করছিল, আমি চিৎকার করলাম। কিন্তু কারও কানে গেল না।”
ঝড় থামার পর স্বামী-কন্যাকে পেয়েও কিন্তু স্কুল ছেড়ে চলে যাননি লেডোনা। জানালেন, ছোটরা তখনও ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। কেউ কেউ বাবা-মাকে খুঁজে পেলেও অনেকেই একা দাঁড়িয়ে।
লেডোনা বারবারই বলছিলেন, “ওরা আমার খুব প্রিয়।” লেডোনার জন্য আজ সুখবর আছে ব্রায়ারউড স্কুলে শিক্ষক কিংবা পড়ুয়া, সকলেই বেঁচে গিয়েছেন দৈত্যাকার ঝড়ের আক্রোশ থেকে।
আবহবিদেরা আজ জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমার পরমাণু বোমার থেকেও শক্তিশালী ছিল ওকলাহোমার টর্নেডো। ঝড় চলাকালীন গোটা সময়টা সেই পরমাণু বিস্ফোরণের থেকেও কখনও আট গুণ, কখনও বা প্রায় ৬০০ গুণ বেশি শক্তি ছিল তার।
গত কাল সকালে জানা গিয়েছিল, ৯১ জন মারা গিয়েছেন। পরে রাত বাড়তে সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ২৪। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার তাঁরা একশো জনের বেশি লোককে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে উদ্ধার করেছেন। কিন্তু কাল আর কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নীচে আর কোনও দেহ নেই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.