লক্ষ্মীকমল হাসপাতাল
বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা, সমস্যায় স্থানীয় মানুষ
থ চলা শুরু হয়েছিল ব্লক হাসপাতাল হিসাবে। কিন্তু বর্তমানে কার্যত বেহাল মৌড়ির মহিয়ারী পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীকমল হাসপাতাল। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো সামান্য কিছু পরিষেবা মেলে এখান থেকে। বহু কাল ধরে বাড়িটির কোনও রকম সংস্কার না হওয়ায় তা ক্রমশই হয়ে উঠেছে ‘ভুতুড়ে বাড়ি’। দেওয়াল থেকে খসে পড়েছে ইট, গজিয়ে উঠেছে বটগাছ। হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডেও নামের পাশে লেখা ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র’। এখানে-ওখানে ভেঙে পড়েছে চাঙড়, উঠে গিয়েছে দেওয়ালের অংশ। বাইরের লোহার দরজা এবং পাঁচিলও অনেক জায়গায় ভগ্নপ্রাপ্ত অবস্থা। বর্তমানে আছেন একজন মহিলা ডাক্তার, একজন ফার্মাসিস্ট, দু’জন নার্স এবং একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। একতলার একটি ছোট ঘরে রোগী দেখা হয়। সেখানে একটি ভাঙা আলমারিতে রয়েছে কিছু ওষুধ। বিশাল জায়গা জুড়ে দাড়িয়ে থাকা এই হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে পরিষেবা বা পরিকাঠামো বলতে প্রায় আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
বহু মানুষের প্রত্যাশা ছিল এই হাসপাতাল ঘিরেই। ছবি: সুব্রত জানা।
দোতলা এই হাসপাতালে ঢুকে দেখা গেল, এক কালে পুরুষ বিভাগ, মহিলা বিভাগ এবং প্রসূতি বিভাগ সবই ছিল। বছর পাঁচ-ছয় আগেও হাসপাতাল দিনরাতে খোলা থাকত। হাসপাতালের পাশের কোয়ার্টারে থাকতেন ডাক্তার-নার্সরা। চিকিৎসা-সংক্রান্ত সব রকম পরিষেবাই পাওয়া যেত এখানে।
হাসপাতাল সংস্কারের কাজ শুরু করার কিছু দিন পর থেকেই পরিস্থিতি বদল হতে থাকে। বছর কয়েক আগেও প্রসূতি বিভাগ চালু ছিল এই হাসপাতালে। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের সমস্ত পরিষেবা। হাসপাতালের বদল হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, বহুকাল আগে স্থানীয় বাসিন্দা কমলকৃষ্ণ কুণ্ডু চৌধুরী ওই অঞ্চলে প্রায় ১৬ বিঘা জমি রাজ্য সরকারকে দান করেন। প্রস্তাব ছিল ওই অঞ্চলে ডাক্তারদের থাকার কোয়ার্টার-সহ একটি হাসপাতাল তৈরি করার। সেই মতো রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় গড়ে ওঠে এই হাসপাতালটি। মৌড়ির মহিয়ারী-১ ও ২, দুইল্যা, মাশিলা, আন্দুল গ্রাম পঞ্চায়েত এবং হাওড়া পুরসভার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রচুর মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে মাঝারি মাপের চিকিৎসাও এখানে অমিল। কোনও ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেও ভরসা বেসরকারি নার্সিংহোম বা বহুদূরের ডোমজুড় ব্লক হাসপাতাল। গরিব মানুষের পক্ষে তা-ও অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, প্রথম স্বাস্থ্যকর্মী এলেন সকাল ১০টায়। ধীরে ধীরে আসতে শুরু করলেন রোগীরা। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, এখানে এটাই নিয়ম। সকাল ১০টায় হাসপাতাল খোলার পর বন্ধ হয়ে যায় দুপুর ২টোর মধ্যেই। একজন মাত্র মহিলা ডাক্তার। তিনিও সপ্তাহে দু’দিনের বেশি আসেন না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এমনকী, প্রাথমিক অনেক ওষুধও পাওয়া যায় না বলে জানালেন তাঁরা। ফলে রোগীর সংখ্যা দিনের পর দিন কমে গিয়েছে।
মহিয়ারী-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সজল ঘোষ বলেন, “বছর দুই আগে হাসপাতাল সম্পূর্ণ ভাবে চালু ছিল। তারপর হঠাৎ ছাদ সংস্কারের কাজ শুরু করার কথা হয়। তারপর থেকেই পরিষেবা ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে। আমরা জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমস্ত জায়গায় চিঠিচাপাটি করেছি। স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু হাসপাতালের কোনও সংস্কার তো হলই না, বরং চালু হাসপাতাল বদলে গেল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। অনেক দৌড়াদৌড়ি করেও কোনও লাভ হয়নি।”
কিন্তু কেন এই দশা? ডোমজুড় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ভাস্কর চক্রবর্তী বলেন, “কোনও এক অজ্ঞাত কারণে রোগী কল্যাণ সমিতির টাকা লক্ষ্মীকমল হাসপাতাল পায় না। জেলা পরিবার এবং স্বাস্থ্যকল্যাণ দফতরের ফান্ড এবং অন্যান্য ফান্ড থেকে টাকাটা জোগাড় করতে হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীর একটা সমস্যা তো আছেই।” তথ্য না থাকায় ওই হাসপাতালের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা সাঁকরাইলের বিধায়ক শীতল সর্দার।
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, “আমি ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। অবিলম্বে স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন। পাশাপাশি পরিকাঠামো ও পরিষেবারও উন্নতি প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.