মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য শুধু সরকারের উপর নির্ভর না করে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে যুক্ত করার উপর জোর দিলেন ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল। মঙ্গলবার মধ্য কলকাতায় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দফতরে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন পাওয়েল।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, বেশির ভাগ কর্পোরেট সংস্থাই এখন কোম্পানি বিষয়ক আইন মেনে ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ বা সামাজিক দায়িত্ব পালনে আগ্রহী। এই কাজের জন্য তারা ভাল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার খোঁজ করে। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ঠিক মতো কাজ করতে পারবে বলে আশ্বস্ত হলেই কর্পোরেট সংস্থাগুলি আর্থিক সাহায্য করে। ওই সাহায্য পেলে মা ও শিশু সংক্রান্ত প্রকল্প চালাতে অর্থের অভাব হবে না। তবে কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছে নিজেদের নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণের দায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেই নিতে হবে। |
তাঁর কথায়, “আমার বিশ্বাস, তারা যথাযথ পরিষেবা দিতে পারবে এমন একটা বিশ্বাস জাগাতে পারলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির প্রকল্পে ভারতের অনেক কর্পোরেট হোমরাচোমরা অর্থ সাহায্য করতে এগিয়ে যাবেন।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির উদ্দেশে পাওয়েলের আরও বক্তব্য, “কর্পোরেট জগতের ব্যক্তিত্বরা ব্যবসায়ী মানুষ। তাঁরা হয়তো আপনাদের বাণিজ্যিক মডেল বা ব্যালেন্স শিট দেখতে চাইতে পারেন। তবে তাঁদের কাছ থেকেই বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা অর্থের বড় অংশ পাওয়া যেতে পারে।” পাওয়েলের মতে, এই কাজের জন্য পশ্চিমবঙ্গের প্রধান-প্রধান ব্যবসায়ীদের সামনে একটা ‘প্রেজেনটেশনও’ দেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে এখানকার মার্কিন সংস্থাগুলি ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিতে শুরু করেছে।
এ দিন সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের কাজ পরিচালনায় আগ্রহ দেখান পাওয়েল। জানান, উত্তরপ্রদেশে ইতিমধ্যে ওই কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। সেখানে যে সব সংস্থা বা গোষ্ঠী প্রসূতিদের জন্য হাসপাতাল বানিয়ে দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে কাজ করছে। ওই হাসপাতালগুলিতে সরকারি ‘আশা’ কর্মীরা কাজ করছেন। সরকার থেকেই সেখানে মায়ের গর্ভকালীন স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং প্রসবের পরে মা ও শিশুর পরিচর্যার কাজ দেখা হচ্ছে। এ দিন পাওয়েল আরও জানান, গত জুনে ওয়াশিংটনে মার্কিন স্বাস্থ্যসচিবের উপস্থিতিতে ভারত ও ইথিওপিয়ার সঙ্গে ‘গ্লোবাল কল ফর অ্যাকশন অন চাইল্ড সার্ভাইভাল’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত জানুয়ারিতে মহাবলীপুরমে এই প্রকল্পের উদ্বোধনে স্বাস্থ্যসচিব হাজির ছিলেন।
তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, সারা পৃথিবীর শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে ২০ শতাংশ ভারতীয়। ৫ বছর হতে-হতে যত শিশু মারা যায় তার ২০ শতাংশও ভারতীয়। মৃত্যুর কারণ মূলত ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়া। তা ছাড়া, জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসকষ্টেও অনেক শিশুর মৃত্যু হয়। ‘গ্লোবাল কল ফর অ্যাকশনে’ এই মূল কারণগুলি আলাদা করে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। যাতে সেগুলি সহজে নিরাময় করা যায়।
তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গেও এমন ১১টা জেলা আছে যেগুলি সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়া। যে জেলাগুলি ভাল ফল করছে সেখান থেকে প্রকল্পগুলিকে এই পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতে স্থানান্তর করতে হবে।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে সাহায্য হিসাবে দেওয়া অর্থ খুব পরিকল্পিত ভাবে ব্যয় করতে চাইছে বলে জানিয়েছেন পাওয়েল। তাই এই কাজের দায়িত্ব তাঁরা অত্যন্ত দক্ষ ব্যক্তির হাতে দিতে চান। যাতে কেবল মার্কিন সাহায্যের অর্থই নয়, ভারত সরকারের দেওয়া টাকাও ঠিকঠাক ভাবে কাজে লাগানো হয়। |