প্রায় তিন বছর আগে শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সেই হাসপাতালেরই উদ্বোধন করলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা হল কংগ্রেস-তৃণমূলে।
২০০৯-এ রেলমন্ত্রী হয়ে মমতা চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিংহের নামে টালিগঞ্জে হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেটির শিলান্যাসও হয়। মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর দলেরই দীনেশ ত্রিবেদী এবং পরে মুকুল রায় রেলমন্ত্রী হন। কিন্তু তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পরে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী রেল প্রতিমন্ত্রী হন। মঙ্গলবার টালিগঞ্জের ওই হাসপাতালের উদ্বোধন হল তাঁরই হাতে। এ দিন অধীরবাবু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢোকার সময় হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থক। তাঁদের অভিযোগ, এই প্রকল্প রূপায়ণে অধীরবাবুর কোনও কৃতিত্ব নেই। তাই উদ্বোধনও তাঁর করার কথা নয়। তৃণমূল সমর্থকদের ওই বিক্ষোভে এ দিনের অনুষ্ঠানে কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। তবে ওই বিক্ষোভ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, তৃণমূল তো কেন্দ্রের অনেক প্রকল্প নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছে। রেলের অনেক উড়ালপুলও আগেভাগে উদ্বোধন করে দিয়েছে। |
অনুষ্ঠানে তৃণমূলের সাংসদ কবীর সুমনের উপস্থিতির জেরে তৃণমূল সমর্থকদের গলা চড়তে থাকে। কবীর সুমনকে প্রায় জড়িয়ে ধরে অধীর মঞ্চে উঠে যান। তাঁকে বসান নিজের পাশের আসনটিতেই। সুমনবাবু তাঁর বক্তব্যে তির্যক ভঙ্গিতে বলেন, “অনেকেই বড় হলে পাল্টে যান। কিন্তু মন্ত্রী হয়েও অধীরবাবু একই আছেন।” তাঁর কথায়, “আমি রাজনীতির লোক নই। পরের বার আর নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছি না।” অধীরবাবুকে সুমনের অনুরোধ, “রেল অনেক কাজ করে। তাই নেতানেত্রীর ছবি না দেখিয়ে কাজগুলির বেশি বেশি করে প্রচার করুন।” অনেকেই মনে করছেন, তৃণমূল সাংসদ পরোক্ষে তাঁর দলনেত্রীকেই কটাক্ষ করলেন। আবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখান টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের একাংশ। তপন সিংহের নামাঙ্কিত হাসপাতালের উদ্বোধনে তাঁর ছবিতে মালা দেওয়া হয়নি। বিক্ষোভে হাজির ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজ চক্রবর্তী, শ্রীকান্ত মোহতা। অধীরবাবুও পাল্টা সুমনের সুখ্যাতি করে বলেন, “আমি সুমনকে সাংসদ নয়, শিল্পীই মনে করি। আমরা চলচ্চিত্রকার তপন সিংহের নামাঙ্কিত হাসপাতাল উদ্বোধন করছি। সেখানে এক শিল্পীকে পাশে পেলাম।” এটি যে রেলকর্মীদের জন্য নয়, তা এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন অধীরবাবু। বলেন, “নতুন এই রেলকর্মীরা তো চিকিৎসা পরিষেবা পাবেনই। সাধারণ মানুষও টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাতে পারবেন।”
মেট্রো রেল সূত্রে খবর, হাসপাতালের প্রথম পর্যায়ের কাজ হয়েছে। এখন সেখানে সমস্ত রোগের নির্ণয় ও বহির্বিভাগ চালু করা হল। পরের পর্যায়ে হাসপাতালে ৩০ শয্যা দিয়ে অন্তর্বিভাগ চালু হবে। পরে তা বেড়ে হবে ৭৫। এই হাসপাতাল পুরোপুরি চালু হলে টালিগঞ্জে আপাতত মেট্রো রেলের যে হাসপাতালটি চালু রয়েছে, সেটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। নতুন হাসপাতালের উপর দিয়ে গিয়েছে মেট্রো লাইন। ফলে শব্দ ও কম্পন একটি মূল সমস্যা। কিন্তু মেট্রো কর্তারা জানিয়েছেন, নতুন হাসপাতালটি এমন প্রযুক্তিতে করা হয়েছে যে ভবনের ভিতরে কম্পন ও শব্দের কোনও প্রতিক্রিয়া হবে না। হাসপাতাল তৈরিতে প্রথম পর্যায়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। |