হাইটেক প্রস্তুতি চালিয়েই লোকসভার পথে তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখেই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতে জোর কদমে নেমে পড়ল তৃণমূল। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর থেকে বুথ পিছু ৬ জন করে সংগঠনের কাজে ‘নিবেদিত’ কর্মীদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ ধরে তাঁরা এগোচ্ছেন। তার জন্য পঞ্চায়েত ভোট থেকেই সংগঠনকে ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের কথায়, “পঞ্চায়েত মিটলেই তো লোকসভা ভোট এসে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। সেই কথা মাথায় রেখে প্রস্তুত হচ্ছি।”
বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতির কাজে রীতিমতো হাইটেক প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে শাসক দল। ভোটের দিনক্ষণ মোটামুটি স্থির হয়ে যাওয়ার খবর পেয়েই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনের কর্মীদের বুথ পিছু ওই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুকুলবাবু। রাজ্যে প্রায় ৫৯ হাজার বুথ আছে। মুকুলবাবু বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েতের এক জন প্রার্থী ও তাঁর সঙ্গে দলের কাজে নিবেদিত পাঁচ কর্মী নিয়ে একটি ইউনিট হচ্ছে। সেই ইউনিটের প্রতিটি কর্মীর ফোন নম্বর, ঠিকানা এবং পরিচিতি নিয়ে একটা সফ্টঅয়্যার তৈরি করছি। যখন দরকার পড়বে, রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারব।” এ ভাবেই প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কর্মী তৈরি করে রাখছে তৃণমূল। মুকুলবাবুর মতে, “তালিকাটা হাতে থাকলে পরবর্তী ভোটের কাজে কর্মী নিয়োগ করতে সুবিধা হবে।”
বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দল পঞ্চায়েত ভোট পিছনোর জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়েছে। সেই অভিযোগ অবশ্য বারেবারেই নস্যাৎ করেছেন মুকুলবাবুরা। বরং, গ্রাম পঞ্চায়েতে তাঁদের প্রার্থী তালিকাও স্থির হয়ে গিয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এই তৎপরতার পাশাপাশিই হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচার ও ভোটের কাজের জন্য ইতিমধ্যেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল নেতৃত্ব একটি বিশেষ কমিটি গড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাওড়ার উপনির্বাচনকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতা নিজে দু’টি জনসভা করবেন। তাঁর নেতৃত্বে হাওড়া শহরে ‘রোড শো’র আয়োজনও করা হবে। কবে, কোথায় মমতার সভা হবে, তা দু-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “সরকারে আসার পরে এই প্রথম কোনও লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আমরা লড়ছি। ফলে, এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
মুকুলবাবু ছাড়াও রাজ্যের মন্ত্রী ও দলের মুর্শিদাবাদ জেলার নেতা সুব্রত সাহা থেকে শুরু করে দলীয় বেশ কয়েক জন সাংসদ মনে করেন, হাওড়ার উপনির্বাচন ও পঞ্চায়েত ভোট আসলে লোকসভা ভোটের মহড়া হবে। সারদা-কাণ্ড, গার্ডেনরিচ, মাঠপুকুর-কাণ্ড বা গত দু’বছরে নারী নির্যাতনের নানা ঘটনায় শাসক দলকে বিব্রত হতে হয়েছে। হাওড়া বা পঞ্চায়েতে তার প্রভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কাকে অবশ্য তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও আমল দিচ্ছেন না। তাঁদের মতে, হাওড়া বা পঞ্চায়েতে লড়াই হবে দু’বছরের একটা সরকারের কাজ বনাম ৩৪ বছরের একটা সরকার কী করেছিল, তা নিয়ে। সেই লড়াইয়ে জয় নিশ্চিত ধরে মুকুলবাবুরা ঝাঁপাচ্ছেন আগামী লোকসভা ভোটে। মুকুলবাবুর মন্তব্য, “কোন সমীক্ষায় কী প্রকাশিত হল, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না! আমরা জানি, লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে সরকার গঠনে তৃণমূল গুরুত্বপূর্ণ নেবে।” |