পা হারিয়েও পাহাড়-শীর্ষে তরুণী, হারল এভারেস্ট
ইমস হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একটাই চিন্তা ছিল অরুণিমা সিংহের সবাই এ বার করুণার চোখে দেখবে। ছিনতাই রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ধাক্কায় ট্রেন থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার করে ডান পা বাদ দিতে হয়েছিল দেশের জাতীয় স্তরের এই ভলিবল খেলোয়াড়ের। পা হারানোর দুঃখের থেকেও পেয়ে বসেছিল গভীর অবসাদ। তখনই ভেবেছিলেন, এমন কিছু করতে হবে যাতে আর যাই হোক, মানুষের করুণার দৃষ্টিতে পড়তে না হয়। সেই জেদ থেকেই অন্য কিছু করার ভাবনা পেয়ে বসেছিল বছর তেইশের অরুণিমাকে। কিন্তু তাই বলে যে এভারেস্ট অভিযানের স্পর্ধা করে বসবে সেই মেয়ে, তা কে জানত!
সেই স্পর্ধার জোরেই মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ভারতের প্রথম প্রতিবন্ধী মহিলা হিসেবে এভারেস্ট ছোঁয়ার কৃতিত্বের অধিকারী হলেন উত্তরপ্রদেশের অম্বেডকর নগরের অরুণিমা সিংহ।
এভারেস্ট অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথম এভারেস্ট ছোঁয়া মহিলা বাচেন্দ্রি পালের সঙ্গে দেখা করে নিজের ইচ্ছের কথা জানান অরুণিমা। অরুণিমার জেদ আর মনের জোর অবাক করে দেয় বাচেন্দ্রিকে। বুঝতে পারেন, এই মেয়েকে রোখা মুশকিল। পাশে দাঁড়ান পরিবার, কোচ। শুরু হয় কঠিন অনুশীলন।

এভারেস্ট জয়ী ওসিকে অভিনন্দন শ্যামপুকুর থানার। —নিজস্ব চিত্র
সাধারণ মানুষের কাছে অবশ্য বিষয়টা কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য হয়নি মঙ্গলবার সকালের আগে। অরুণিমার অসাধ্য সাধনের পিছনে রয়েছে মৃত্যুর মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আর এক যোদ্ধার নিঃশব্দ অনুপ্রেরণা। যুবরাজ সিংহ। মারণ রোগ ক্যানসারকে হারিয়ে মাঠে ফেরার কাহিনিতে অনুপ্রাণিত হয়ে, নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে তাঁকে একটি চিঠি লিখেছিলেন অরুণিমা। যুবরাজ উৎসাহ দেন তাঁকে। সঙ্গে পাঠান এক লাখ টাকার চেক।
অরুণিমার আগে ৬১ বছরের মার্কিন মহিলা রোন্ডা গ্রাহাম গত বছর অক্টোবর মাসে এভারেস্টে উঠেছিলেন। তাঁরও একটি পা ছিল না। সেই কীর্তিও কম উদ্বুদ্ধ করেনি অরুণিমাকে। শরীরের প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে এভারেস্টের পথে পা বাড়ানোর মানসিক জোর সঞ্চয় করেছিলেন তিনি। আর সেই জোরকেই মাথা নুইয়ে কুর্নিশ জানাল স্বয়ং এভারেস্ট।
এই অভাবনীয় এবং অসম্ভব সাফল্যের জৌলুসে আর একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে আরও একটা ইতিহাস সৃষ্টিকারী সাফল্যের কাহিনি। যেন এক রূপকথার গল্প। গল্পের নায়িকা হাওড়ার কোনার ছন্দা গায়েন। শনিবারই ভারতের প্রথম অসামরিক মেয়ে হিসেবে পৃথিবীর সর্ব্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখার নজির গড়ে ফেলেছিলেন তিনি। শোনা গিয়েছিল, এতেও সন্তুষ্ট হননি ছন্দা। ছুঁয়ে আসবেন এভারেস্টের পাশে আরও একটা সাড়ে আট হাজার মিটারের শৃঙ্গ, লোৎসে। সোমবার সকালেই খবর এল, সম্ভব হয়েছে অসম্ভব। তৈরি হয়েছে ইতিহাস।
মঙ্গলবার সকালেই আরও এক সফল অভিযাত্রীর পা পড়েছিল এভারেস্টের শীর্ষে। কিন্তু সেই সাফল্যের কাহিনির সমাপ্তি অরুণিমা, ছন্দাদের থেকে অনেকটাই আলাদা। এভারেস্ট ছুঁয়েও ঘরে ফেরা হল না আর। আরোহণ শেষে সাউথ কলের তাঁবুতে নেমে আসার চার ঘণ্টা পরে মারা গেলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক সজল খালেদ (৩৫)। উচ্চতাজনিত অসুস্থতাই সজলের মৃত্যুর কারণ বলে অনুমান। আট হাজার মিটার উচ্চতায় ‘ডেথ জোন’ নামে খ্যাত অঞ্চলে রয়েছে তাঁর দেহ। বাকি অভিযাত্রীদের আরোহণ শেষ হওয়ার পরেই নামানো হবে মৃতদেহ।
বিনা অক্সিজেনে এভারেস্ট আরোহণ করার পণ করেছিলেন কোরিয়ার সাং হো সিউ। মঙ্গলবার মারা গেলেন তিনিও।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.