যে ছোট বিমান অস্ত্র ফেলে পালাবে, তার সঙ্গে কেন তুলনা করা হবে ছোট বিজনেস জেট-এর!
পুরুলিয়ায় অস্ত্র-বর্ষণের পরে সতেরোটা বছর কেটে গিয়েছে। অথচ তখনকার নিয়মের বেড়াজালে ফেঁসে রয়েছে আজকের ছোট বিমান। বিদেশি শিল্পপতিরা এখন নিজস্ব ছোট বিমান ব্যবহার করেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মের গেরোয় পড়ে অনেক ক্ষেত্রে ভারতেই আনতে পারছেন না সেই বিমান। কিছু ক্ষেত্রে বিরক্তিতে এ দেশে সফরই বাতিল করছেন। তাই, ভারতে ঢোকার ক্ষেত্রে ছোট বিদেশি বিমানের নিয়ম-নীতি শিথিল করল কেন্দ্র।
ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে ভারতে আসার তিন দিন আগে জানালেই ভারতে নামার অনুমতি পাবে বিজনেস জেট সহ সব ছোট বিমান। দিল্লিতে ক্যাবিনেট বৈঠকে পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত। দিল্লি থেকে ফোনে ডিজিসিএ প্রধান অরুণ মিশ্র বলেন, “চলতি সপ্তাহ থেকেই এই নিয়ম বলবৎ করা হয়েছে। ভারতের মাটিতে নামবে না, অথচ আকাশ দিয়ে উড়ে যাবে এমন ছোট বিমানকে এক দিন আগে জানালেই চলবে। এর ফলে আরও বেশি বিমান আমাদের আকাশ ব্যবহার করতে পারবে।”
যাত্রী বা পণ্য নিয়ে যে বিদেশি বিমানগুলি নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করে, তাদের কথা ভিন্ন। প্রতি মূহূর্তে তারা যোগাযোগ করে কোনও না কোনও বিমানবন্দরের সঙ্গে। কিন্তু, ১৯৯৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর লাটভিয়া থেকে আসা ছোট একটি বিমান কলকাতা বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পুরুলিয়ায় অস্ত্র ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে সে ধরা পড়ে। সেই ঘটনার পরে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়, দুম করে কোনও ছোট বিদেশি বিমানকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ঠিক হয়েছিল, ছোট বিমানকে ভারতের আকাশ সীমায় ঢোকার অন্তত সাত দিন আগে অনুমতি চাইতে হবে। আগমনের হেতু, আরোহীদের বিস্তারিত পরিচয়, বিমানের পণ্য সব তথ্যই আগেভাগে যাচাই করে দেখবেন দুঁদে গোয়েন্দারা। তবেই ছাড়পত্র দেবে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। নিয়ম হয়েছিল, যে ছোট বিমান ভারতে না নেমে শুধু আকাশ সীমা দিয়ে উড়ে যাবে, তাকেও তিন দিন আগে সেই অনুমতি চাইতে হবে। পুরুলিয়ায় অস্ত্র ফেলে যাওয়া লাটভিয়ার সেই আন্তোনভ বিমান দ্বিতীয় বার ভারতের আকাশে ঢোকার পর বায়ুসেনার মিগ-২১ তাকে যে ভাবে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল, ঠিক হয়েছিল নিয়ম লঙ্ঘন করা অন্য বিমানকেও তাই করা হবে।
কিন্তু, দেশ-বিদেশের বড় শিল্পপতিরা এখন আর যাত্রীবাহী বিমানে চড়েন না। ভারতে টাটা, বিড়লা, আম্বানি, মাল্য-রা যেমন নিজস্ব বিজনেস জেট ব্যবহার করেন, তেমনই বিদেশের বেশির ভাগ শিল্পপতিই নিজস্ব বিলাসবহুল ছোট বিমান ব্যবহার করেন। সেখানে বৈঠক থেকে শোয়া বা স্নান, সব কিছুরই ব্যবস্থাও থাকে। ব্যবসার কাজে এই শিল্পপতিরা নিজস্ব বিমানই ব্যবহার করেন। দিল্লি ও মুম্বই বিমানবন্দরে গড়ে প্রতি দিন ৫০টি এমন বিজনেস জেট ওঠানামা করে। কলকাতায় ওঠানামা করে গড়ে আটটি। কিন্তু, প্রতিবারেই অন্তত সাত দিন আগে অনুমতি চাইতে গিয়ে বিরক্ত হচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি এ কথা শিল্প মন্ত্রক মারফত পৌঁছেছিল কেন্দ্রীয় বিমান মন্ত্রকের কানে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “দেখা যাচ্ছে জরুরি কারণে কোনও বিদেশি শিল্পপতিকে ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে মাত্র দু’দিন আগে। সে ক্ষেত্রে তিনি নিজের বিমান আনতে না পেরে বিরক্ত হচ্ছেন। ভবিষ্যতে ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর কুপ্রভাব পড়তে পারে।” তাই নিয়ম শিথিল করল সরকার। আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের সদস্য অনিরুদ্ধ লাহিড়ী জানান, আমেরিকা থেকে ভারতে বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনেকটাই শিল্প-সহায়ক হবে। |