স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য নগদে আর্থিক অনুদান দিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন কুলটির পুরপ্রধান তথা তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। যদিও উজ্জ্বলবাবুর দাবি, এক্ষেত্রে কোনওরকম বেনিয়ম হয়নি। এই ঘটনায় আর্থিক বেনিয়মের দাবি তুলে উজ্জ্বলবাবুর কাছে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। প্রশাসনিক ও বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে সিপিএমও।
মঙ্গলবার কুলটির নিয়ামতপুর এলাকার ইসলামিয়া জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে নগদ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা তুলে দেন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, স্কুল ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষ অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। সেগুলি শেষ করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে টাকা চেয়ে আবেদন করেন। উজ্জ্বলবাবু বলেন, “আমি মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে নগদ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে এসেছি। এতে না হলে আরও দেব। শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য করব না।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি হবিবুর রহমানও জানান, এই স্কুলে প্রায় সাড়ে পাঁচশো পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলের উন্নয়নের স্বার্থে গত বছর জুন মাসে পুরপ্রধানের কাছে আর্থিক অনুদান চেয়ে আবেদন করেছিলেন তারা।
|
টাকা দিচ্ছেন পুরপ্রধান।—নিজস্ব চিত্র। |
স্কুল ভবন তৈরির জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়া কোনও নতুন বিষয় নয়। কিন্তু পুরপ্রধান নগদ অর্থে এই সাহায্য করাতেই বিতর্ক জন্মেছে নানা মহলে। পুরসভার বিরোধী বাম কাউন্সিলর থেকে কংগ্রেস সকলেই প্রশ্ন তুলেছেন, এভাবে নগদ টাকায় কীভাবে সরকারি অনুদান দিলেন বিধায়ক। পুরসভার বিরোধী নেতা সিপিএমের প্রিয়ব্রত সরকারের দাবি, পুরসভার অধিবেশনে ওই স্কুলকে পুরসভার তরফে আর্থিক অনুদান দেওয়া নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবুও যদি সাহায্য করা হয় তা অবশ্যই ওই স্কুলের নামে চেক দিয়ে করতে হবে। এমনকী যদি বিধায়কএলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকেও সাহায্য করা হয় তাহলেও তা নগদে করা যায় না। সেক্ষেত্রে জেলাশাসক মারফত স্কুলের নামে চেক দিতে হয়। প্রিয়ব্রতবাবু বলেন, “এটা অবশ্যই আর্থিক বেনিয়ম। এর তদন্ত চেয়ে পুরমন্ত্রী ও প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।” আরও একধাপ এগিয়ে এই টাকার উৎস জানতে চেয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করেছে কংগ্রেস। দলের জেলা নেতা চণ্ডী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোন আইনে পুরপ্রধান সরকারি টাকা নগদে দিলেন তা তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে চাইব। এই বেনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।”
তবে রাজনৈতিক মহলের এই চাঞ্চল্যে বিশেষ হেলদোল নেই উজ্জ্বলবাবুর। কোন তহবিল থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের কথা বললেও পরে তা সংশোধন করে নিয়ে তিনি বলেন, “পুরসভার উন্নয়ন তহবিল থেকেই এই টাকা দিয়েছি।” কিন্তু সরকারি টাকা তো এভাবে নগদে দেওয়া যায় না? চেকের মাধ্যমে উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ায় তো নিয়ম। এই নিয়ম ভাঙা হল কেন? উজ্জ্বলবাবু বলেন, “কোনও নিয়ম ভাঙা হয়নি। পদ্ধতি মেনেই টাকা দেওয়া হয়েছে।” উজ্জ্বলবাবুর বক্তব্যের ভিত্তিতে পুরসভার অর্থ দফতরের সরকারি আধিকারিক সৌমেন পাত্রকে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “পুরসভার কোনও তহবিলের টাকা চেক ছাড়া দেওয়া হয় না। নগদে দেওয়ার সুযোগই নেই।” তবে এই সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পুরসভার তহবিল থেকে উঠেছে কী না সে বিষয়ে সৌমেনবাবু কিছু জানাতে পারেননি। উপ-পুরপ্রধান বাচ্চু রায়ও বলেন, “বিষয়টি আমার কাছে ধোঁয়াশা।” |