লাভের ইঙ্গিত বামেদের, তৃণমূলের রক্ষক জোটই
ই মুহূর্তে রাজ্যে লোকসভা নির্বাচন হলে শক্তি বাড়বে বামফ্রন্টের। তা সে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট থাক বা না-থাক। জোট না-করলে আরও শক্তিক্ষয় হবে তৃণমূলের। লাভবান হবে কংগ্রেস।
সারা দেশেই এখন লোকসভা ভোট হলে কী হতে পারে, তার একটি ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে এবিপি আনন্দ এবং এ সি নিয়েলসেনের যৌথ জনমত সমীক্ষা। সেই সমীক্ষা সত্যি হলে এক দিকে যেমন কিঞ্চিৎ স্বস্তি পেতে পারেন বামেরা, তেমনি কপালের ভাঁজ গভীর হতে পারে শাসক তৃণমূলের। বামেদের স্বস্তির কারণ, তাদের আসন সংখ্যা ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের তুলনায় ভাল হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে সমীক্ষা। গত ভোটে রাজ্যে বামেরা পেয়েছিল ১৫টি আসন। কংগ্রেস এবং তৃণমূল আলাদা আলাদা লড়লে বামেরা ১৮টি আসন পেতে পারে। আর জোট হলে পেতে পারে ১৭টি আসন।
কংগ্রেসের হাত ছাড়লে তৃণমূলের জনসমর্থনের ভিতে যে ক্ষয় ধরতে পারে, বিধানসভার সাম্প্রতিক উপনির্বাচনেই তার প্রমাণ মিলেছে। শতাংশের হিসেবে ভোটের হার কমলেও নলহাটি আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছে বামেরা। গোটা রাজ্যের নিরিখেই যে এই প্রবণতা সত্যি, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে এবিপি আনন্দ-এ সি নিয়েলসেনের জনমত সমীক্ষা। সমীক্ষা বলছে, জোটহীন অবস্থায় ভোট হলে তৃণমূল ১৪টি এবং কংগ্রেস ৯টি আসন পেতে পারে। ২০০৯ সালে যে সংখ্যাটা ছিল যথাক্রমে ১৯ ও ৬।
আর যদি জোট হয়, তা হলে পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে নিতে পারবে রাজ্যের শাসক দল। সে ক্ষেত্রে জোটের মোট আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ২৪। ২০০৯-এর তুলনায় একটি
কম। জোটের মধ্যে তৃণমূল এবং কংগ্রেস আলাদা করে কত আসন পেতে পারে, তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলা নেই সমীক্ষায়।
এটা ঠিক যে, জনমত সমীক্ষার ফলাফল সব সময় মেলে না। অতীত অভিজ্ঞতাই তার সাক্ষী। কিন্তু আবার এটাও ঠিক যে, ভোটারদের মানসিকতার আন্দাজ পেতে এই জাতীয় সমীক্ষার একটা গুরুত্ব এবং গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। গত ১ থেকে ১০ মে-র মধ্যে রাজ্যের ১৭টি লোকসভা কেন্দ্রে ৩৭৬২ জন ভোটারের উপরে সমীক্ষা চালিয়েছে এবিপি আনন্দ এ সি নিয়েলসেন।
সেই সমীক্ষার ফলাফল গাণিতিক পদ্ধতিতে আরোপ করা হয়েছে গোটা রাজ্যের উপরে। জানা গিয়েছে ৪২টি আসনের প্রবণতা।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই সমীক্ষাকে কোনও গুরুত্ব দিতেই নারাজ। শাসক দলের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যায়, “রাজ্যের রাজনৈতিক বাস্তবতার কোনও প্রতিফলন এই সমীক্ষায় নেই। একে প্রলাপ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না!” সিপিএম নেতৃত্বও তাঁদের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সমীক্ষার ফলে উচ্ছ্বাস বা বিরাগ, কোনওটাই দেখাননি। কংগ্রেসের তরফেও বলা হয়েছে, সমীক্ষা মিলেছে এবং মেলেনি, দু’রকমেরই অনেক নজির আছে। তাই এর ভিত্তিতে কোনও কিছু চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া যায় না।
যদিও নির্বাচনী বিশ্লেষকদের কারও কারও মতে, এত মানুষের মতামত নিয়ে এত বড় আকারের সমীক্ষা একেবারে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এবং সেই সমীক্ষা থেকেই নির্দিষ্ট যে প্রবণতাটি উঠে আসছে, তা হল বামেদের সামান্য উন্নতি। তাঁদের মতে, ২০১১-য় পরিবর্তনের বিধানসভা ভোটে ২০০৯-এরও অনেক হিসাব উল্টে আরও বিপন্ন হয়েছিল বামেরা। পরবর্তী কালে নানা উপনির্বাচনেও তাদের পতন অব্যাহত থেকেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই সমীক্ষার ইঙ্গিত বামেদের পক্ষে আশাপ্রদ। একই ভাবে, বিরোধী দল হিসেবে আলাদা লড়লে কংগ্রেসেরও ফায়দা তোলার সুযোগ থাকছে। উল্টো দিকে, একা লড়লে তৃণমূলের ক্ষতির আশঙ্কা সব চেয়ে বেশি।
তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার সম্পর্কে দু’বছরের মাথায় মানুষ কী ভাবছেন, সেই মনোভাবের আঁচ পাওয়ারও চেষ্টা হয়েছে সমীক্ষায় করা কিছু প্রশ্নে। তাতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, সারদা কাণ্ড জনমনে তৃণমূল সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। প্রশ্ন ছিল, দু’জন তৃণমূল সাংসদ বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় মদত দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আরও বেশি তৃণমূল নেতা কি এতে জড়িত থাকতে পারেন? উত্তরদাতাদের ৪৭%-ই বলেছেন, ‘হ্যাঁ’। কোনও মতামত দেননি ৩২%। রাজ্যে এই ধরনের সংস্থার বাড়বাড়ন্তের কারণ কী? রাজনৈতিক নেতা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকাকে দায়ী করেছেন ৫০% উত্তরদাতাই। রাজ্যে উপযুক্ত আইনের অভাবকে দায়ী করেছেন ৩৮%। আবার পঞ্চায়েত ভোটে বিলম্বের জন্য তৃণমূল সরকারকে দায়ী করেছেন উত্তরদাতাদের ৪৩%। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তুলেছেন ৩৭% এবং মতামত দেননি ২০%।
ক্ষমতায় এসেই মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সিঙ্গুরে টাটার কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি ফেরত দেওয়ার। দু’বছরেও তা হয়নি। আদৌ কি জমি ফেরত সম্ভব? ‘না’ বলছেন ৪৭%। সময় লাগলেও জমি ফেরানো যাবে বলে মনে করছেন ৩২%। কিছু বলতে পারছেন না ২১%। হলদিয়া থেকে এবিজি বিতাড়নের পিছনে রাজ্যের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন ১১%। প্রেসিডেন্সি, গার্ডেনরিচ, ধাপা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে কি বলা যায় যে, শাসক দল জড়িত থাকলে পুলিশ ধীরে চলে আর বিরোধীদের দিকে অভিযোগ থাকলে ঠিক উল্টো হয়? সরকারকে স্বস্তি দিয়ে পুলিশের নিরপেক্ষতার কথা বলেছেন ৩৭%। ৩২%-এর অভিযোগ, পুলিশ তৃণমূলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়ে থাকে। মতামতে বিরত ৩১%। মমতা কি নাগরিকদের সমালোচনার প্রতিও অসহিষ্ণু? জবাবে হ্যাঁ আর না তুল্যমূল্য, ৩৩% ও ৩৪%! মত দানে বিরত ৩৩%!

জনমত সমীক্ষা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.