প্রথমে একটানা গরম। এখন মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি আর গুমোট আবহাওয়া। আর তাতেই ক্ষতি হচ্ছে পাটচাষের।
পাট চাষের জন্য যে পরিমাণ বৃষ্টির দরকার, তা এত দিন হয়নি। এখন কিছুটা বৃষ্টি নামলেও পাটগাছে শুরু হয়েছে মাকড়ের উৎপাত। কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাতগাছিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় চারটি গ্রামেই ইতিমধ্যে মাকড়ের উৎপাত শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্বসাহাপুর, নসিপুর, কুলেদা এবং কল্যাণপুরের চাষিদের দাবি, এর জেরে জমিতেই বেশির ভাগ পাট গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এ কথা স্বীকার করে নিয়েছে কৃষি দফতরও। তবে বেশ কিছু কীটনাশক জমিতে স্প্রে করা হলে এই সমস্যা কমতে পারে বলে জানা গিয়েছে দফতর সূত্রে।
চাষিরা জানান, পাট গাছ লাগানোর ৩৫ বা ৪৫ দিন পরে পাট গাছের বৃদ্ধির সময়ে দেখা মাকড়ের আক্রমণ শুরু হয়। এতই ছোট এই পোকা যে খালি চোখে দেখা যায় না। পাতার নীচে বাসা বেঁধে পাতার রস শুষে নেয়। ফলে জমিতেই গাছ শুকিয়ে যায়। উষ্ণ আবহাওয়াতেই এই পোকার আক্রমণ বেশি হয় বলে জানান চাষিরা। সাহাপুর গ্রামের পাটচাষি আহম্মদ শেখ জানান, প্রতি বছরই তিনি এই সময় পাট চাষ করেন। এ বছর প্রথমে গাছের বাড় ঠিকই ছিল। কিন্তু পরে তা থমকে যায়। হয় গাছ বাড়ে না, না হলে পাতা কুঁকড়ে শুকিয়ে যায়। কুলেদা গ্রামের চাষি অমিত ঘোষের কথায়, “পাট গাছ বড় হলে দামও ভাল হয়। কিন্তু মাকড়ের উৎপাতে এ বার যা চাষের অবস্থা, তাতে হয়তো এ বার হয়তো বেশির ভাগ চাষিই ভাল মানের পাট উৎপাদন করতে পারবে না।” |
সমস্যা হল, এখন বৃষ্টি হলেও তা যথেষ্ট নয়। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, অনেক দিন ভারী বৃষ্টি না হওয়াতেই এই পোকার উৎপাত বেড়েছে। সাধারণত গাছের ডগার দিকে সাত থেকে আটটি পাতায় এই পোকার সংক্রমণ বেশি হয়। শুরুতেই তা না আটকানো গেলে গাছের ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পার্থবাবু। এ ছাড়া পাটের মানও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তবে বিভিন্ন ওষুধ ‘স্প্রে’ করে এই পোকা নির্মূল করা সম্ভব।
পার্থবাবু বলেন, “হলুদ মাকড়ের প্রধান শত্রু হল ঠান্ডা। পাতার দু’পাশে ঠান্ডা জল স্প্রে করলে কিছুটা ফল পাওয়া যায়। তবে নির্মূল করতে হলে অ্যাবাসেকটিন, প্রোফেনফস, স্পাইরোমেসিসেন, ফেনপাইরক্সিমেট, প্রোপারজাইট জলে গুলে পাতায় স্প্রে করতে হবে।”
কালনা মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এ বার মহকুমার পাঁচটি ব্লকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। উষ্ণ আবহাওয়ায় মাকড়ের হাত থেকে বাঁচতে সব এলাকার চাষিদেরই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা আরও জানান, সম্প্রতি কিছু এলাকা থেকে পাট গাছে ল্যাদা পোকার আক্রমণে পাট গাছের পাতা ফুটো হয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে চলে বলে এই পোকাকে খোঁড়া পোকাও বলা হয়। এই ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতি লিটার জলে কারটাপ হাইড্রোক্লোরাইড জাতীয় ওষুধ দেড় গ্রাম করে গুলে স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। এক লিটার জলে ২ মিলিগ্রাম ডাইমিসোয়েট গুলে স্প্রে করলেও ফল পাওয়া যাবে বলে মত তাঁদের। |