কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল এখন গলার কাঁটা
হার্টের হাসপাতাল থেকে উধাও হৃদরোগ বিভাগই
যার জন্য এত কিছু, সেটাই উধাও!
সারা রাজ্যে এটাই হার্টের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ভাবে চিহ্নিত একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। হৃদরোগের সরকারি চিকিৎসায় স্বাস্থ্য দফতরের ‘শো-কেস’ও বটে। অথচ সেখানে পরিষেবার বহর দিন-কে-দিন কমতে কমতে শেষমেশ প্রায়
অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। হৃদরোগের হাসপাতাল থেকে বেমালুম উবে গিয়েছে হৃদরোগ বিভাগটাই!
ফলে সম্পদের বদলে সরকারের মাথার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল। দূর-দূরান্তের জেলা, এমনকী, খাস কলকাতা থেকেও হার্টের রোগীরা যেখানে ছুটে যেতেন সুস্থ হওয়ার আশায়, সেখানে এখন কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট (হৃদরোগ বিভাগ) বলতে গেলে বন্ধ। রোগী ভর্তির বালাই নেই, আউটডোরেও ডাক্তার থাকছেন না। ইমার্জেন্সি থেকে রোগীকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে অন্যত্র। অন্য দু’টো বিভাগও (চেস্ট ও মেডিসিন) চলছে নাম-কা ওয়াস্তে।
অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে হাসপাতালটির পত্তন, তা-ই কার্যত জলে গিয়েছে। এই মুহূর্তে হার্টের হাসপাতালে পূর্ণ সময়ের কোনও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট) নেই! আছেন শুধু কয়েক জন মেডিক্যাল অফিসার। রবীন ভট্টাচার্য নামে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজের এক প্রবীণ কার্ডিওলজিস্টকে এই হাসপাতালেও সময় দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষক-চিকিৎসক রবীনবাবুর আক্ষেপ, “এত নামী একটা হাসপাতাল এ ভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে খুব হতাশ লাগে।”
কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে গত ক’মাসে অভিযোগও মিলেছে বিস্তর। যেমন, চারশো টাকার পরীক্ষার জন্য এখানে দিনের পর দিন আদায় হয়েছে ১৪০০ টাকা! অভিযোগ, হার্ট অ্যাটাকের রোগীর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ওষুধ নির্বিচারে প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে বহু রোগীর প্রাণ গিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের আস্থা ক্রমশ কমেছে। আর সেই সুযোগে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানোর হার বেড়েছে বলে মানছেন স্বাস্থ্য-কর্তারাও। হাসপাতাল-সূত্রের তথ্য: গাঁধী মেমোরিয়াল থেকে দৈনিক গড়ে ২৫-৩০ জনকে অন্যত্র রেফার করা হয়। এঁদের সিংহভাগ যান কলকাতার কয়েকটি বাছাই বেসরকারি হাসপাতালে। গাঁধী মেমোরিয়ালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের সঙ্গে ওই সব হাসপাতালের ‘বোঝাপড়া’র অভিযোগও শোনা গিয়েছে কর্তৃপক্ষের মুখে।
সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধ শতাব্দী প্রাচীন, তিনশো শয্যার হাসপাতালটি এখন রীতিমতো স্বাস্থ্য দফতরের গলার কাঁটা। যাকে না যাচ্ছে গেলা, না উপড়ানো। সুরাহার কোনও আশা নেই?
স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন, দফতরের এক প্রতিনিধিদলকে শিগগিরই ওখানে পরিদর্শনে পাঠানো হবে। এক কর্তার কথায়, “রোগী রেফারের চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ধরা পড়লে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।” চিকিৎসক রবীনবাবু বলেন, “একটা প্রয়াস শুরু হয়েছে। আমরাও সাধ্যমতো করছি। হাল ফিরলে গরিবেরা উপকৃত হবেন।”
ঘটনা হল, সরকারি তরফে প্রতিশ্রুতি থাকলেও দীর্ঘসূত্রতার নজির কিন্তু প্রকট। যেমন, কিছু দিন আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গাঁধী মেমেরিয়াল পুনরুজ্জীবনে সাড়ে ছ’কোটি টাকা মঞ্জুর করলেও সে ফাইল এক চুল নড়েনি বলে দফতরের খবর। আছে গাফিলতিরও বহু দৃষ্টান্ত। যেমন, ১৯৭৯-এ আড়াই কোটি টাকায় কেনা ক্যাথল্যাবে কিছু পেসমেকার বসানো ছাড়া কিছু হয়নি। ফলে স্রেফ পড়ে থেকে থেকে তা বিকল হয়ে
গিয়েছে। ঠিক যে ভাবে অকেজো হয়েছে ইকো-র যন্ত্র। সর্বোপরি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব। দুর্দশার কথা কবুল করে রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীও বলছেন, “ওখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।” কেন?
স্বাস্থ্য-অধিকর্তার ব্যাখ্যা, “স্বাস্থ্য দফতরে দু’টো ভাগ মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস আর হেল্থ সার্ভিস। মেডিক্যাল কলেজে এডুকেশন সার্ভিসের ডাক্তারেরা যান। হেল্থ সার্ভিসের ডাক্তারেরা অন্য হাসপাতালে। কার্ডিওলজিস্টদের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা থাকেন মূল মেডিক্যাল কলেজগুলোয়। গাঁধী মেমোরিয়াল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না-হওয়ায় কার্ডিওলজিস্ট দেওয়া যায়নি।” হাসপাতালটি শুরুর সময়ে দফতরে এই বিভাগ-বিভাজন ছিল না বলে জানিয়েছেন অধিকর্তা।
তা হলে কি চিকিৎসকের অভাবে ঐতিহ্যের হাসপাতাল পাট গোটাবে?
অধিকর্তার আশ্বাস, “গাঁধী মেমোরিয়ালে কার্ডিওলজির ডিএনবি কোর্স চালুর চেষ্টা চলছে। ক’দিনের মধ্যে সব চূড়ান্ত হয়ে যাবে।” কিন্তু যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বরাদ্দ করা অনুদানের ফাইল আটকে গিয়েছে, সে ভাবে এই পরিকল্পনাও ফাইলবন্দি হয়ে থাকবে কি না, সে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
তাই অনিশ্চয়তার খাঁড়াও সরছে না গাঁধী মেমোরিয়ালের মাথা থেকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.