দু’দিকে সারি সারি গাছপালা। মাঝখান দিয়ে সরু একটি নালা। দু’ধারে সবুজ কাশের ঝোপ। তার পাশ দিয়ে কুলকুল শব্দে টাঙনের বয়ে যাওয়া। এই রকম মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে গিয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে ও ধীরে ধীরে সেই গাছগাছালি হারিয়ে যেতে বসেছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডির ৭ নং কালিকামড়া পঞ্চায়েত -এর অন্তর্গত ফারাসপুর-দৌলবাড়ির বনভূমি ধ্বংস হতে চলেছে। হাজার একর জমির এই বনভূমি আকাশমণি, শিশু, ইউক্যালিপ্টাস, সেগুন প্রভৃতি গাছে ভরা। বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এই বনভূমি ছিল ঘন গাছপালায় পরিপূর্ণ। |
ধ্বংসের পথে এই গাছগাছালি।—নিজস্ব চিত্র |
কাঠ পাচারকারী ও দালালদের কুচক্রে জঙ্গল খেলার মাঠে পরিণত। সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ির কাজে কিংবা জ্বালানির কাজে গাছ কেটে নিয়ে যান। জঙ্গলের পাশের গ্রাম ফোপড়ায় দেখা গেল, গাছ কেটে নেওয়ার ক্ষতচিহ্ন। এক সময় এখানে অনেকে বনভোজন করতে আসতেন। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বনভূমি যেন সেজে উঠত। কিন্তু প্রশাসনের ঔদাসীন্য আর পাচারকারীর সক্রিয়তায় বনভূমি সংকুচিত হতে হতে সিকিভাগ কৃষিজমিতে পরিণত।
প্রশাসনের তরফে ঠিক পদক্ষেপ করা হলে বনভূমিটিকে রক্ষা করা যায়। প্রথমেই বনভূমির সীমা নির্দেশ করে প্রাচীর করা দরকার। বনভূমির যে-সব জায়গায় এখন গাছপালা নেই, খেলার মাঠে পরিণত হয়েছেসেখানে নতুন ভাবে চারাগাছ লাগাতে হবে। তবে শুধু চারাগাছ লাগালেই হবে না। সঠিক পরিচর্যা প্রয়োজন। কালিকামড়া থেকে বনভূমির মাঝখানে একটি ছোট সেতু নির্মাণ করে ১০-এ রাজ্যসড়কের সঙ্গে সু-যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। বনভোজনকারী , পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। বনভূমি দেখভালের জন্য আরও বনকর্মী এবং তাঁদের নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পাহারা দেওয়া দরকার।
বিপ্লবকুমার রায়। মালিগাঁও, দক্ষিণ দিনাজপুর
|
জলপাইগুড়ির সমাজপাড়ায় করলার ধারে রবীন্দ্র ভবনটির (আর্য নাট্যসমাজ) প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই আজ প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে যদি কেউ এখনও বেঁচে থাকেন, তবুও বয়স ও অসুস্থতার কারণে এই ভবনের প্রতি মায়া-মমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের আজ আর কিছুই করার নেই। একটা সময়ে সারা বছরই এই ভবনটি অসংখ্য নাটক, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও অন্যান্য উৎসবের আনন্দে ভরে থাকত! ভবনে কত যে বরেণ্য ব্যক্তি পা রাখতেন, তা বিস্মৃত হননি শহরের বর্ষীয়ানেরা।
এর পর যদিও তিস্তা-তোর্ষা থেকে বহু জলই গড়িয়ে গেছে এবং কালের বিবর্তনে এই ঐতিহ্যপূর্ণ ভবনটিও সব দিক থেকে হারিয়েছে ঐতিহ্য। বর্তমানে ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণ করা দূরের কথা ক্রমশই এটি যেন শ্মশানে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুরসভা এই ভবনটির সংস্কারে উদ্যোগী হলে হয়তো ভবনটি পূর্বমর্যাদা ফিরে পেতে পারত, একই সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠাতাদের মহান স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারত। সংস্কৃতি ধরে রাখতে হলে সরকারকেই তো এগিয়ে আসতে হয়!
প্রণীতা সেন। মহামায়াপাড়া, জলপাইগুড়ি |