পুলিশের পার্কই ফুসফুস করিমপুরের
“ও পুলিশকাকু, আমাদের একটু দোল দিয়ে দেবে গো।”।
সদ্য ডিউটি সেরে থানার আবাসনের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন বছর চল্লিশের এক পুলিশকর্মী। সমস্বরে কচি গলার এমন আবদার শুনে দাঁড়িয়ে পড়েন। প্রশ্রয়ের সুরে বলেন, “আজও দেখছি আমাকে দিয়ে ওভার ডিউটি করাবি। চল, তবে বেশিক্ষণ দোলনা ঠেলতে পারব না কিন্তু।” জ্যৈষ্ঠের পড়ন্ত বিকেলে খাকি পোশাক ঘিরে এক দল দামাল হইহই করে ঢুকে পড়ে থানা চত্বরের পার্কে। হেঁইয়ো হেঁইয়ো আওয়াজ তুলে দোলনা দুলতে থাকে। আর খিলখিল করে হাসতে হাসতে কচি মুখগুলো বলে, ‘‘কাকু আরও জোরে।”
প্রথমদিকে পথচলতি মানুষ দাঁড়িয়ে পড়তেন এই দৃশ্য দেখে। এখন অবশ্য এই ঘটনা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে করিমপুরের।
জানা গিয়েছে, করিমপুর এলাকায় শিশুদের জন্য পার্ক ছিল না। ২০১২ সালে আইএসজিপি প্রকল্পের টাকায় করিমপুর-১ পঞ্চায়েতের উদ্যোগে থানা চত্বরে তৈরি হয় করিমপুর থানা শিশু উদ্যান। প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দোলনা, বসার জায়গা, ফোয়ারা, আলোর ব্যবস্থাও করা হয়। ঝকঝকে শিশু উদ্যানে বিকেল হলেই চালু হয়ে যেত ফোয়ারা। সন্ধ্যা নামার আগেই জ্বলে উঠত ত্রিফলা আলো। অপেক্ষায় থাকত দোলনা, সবুজ ঘাস।
পুলিশ যখন বন্ধু। কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।
কিন্তু যাদের জন্য এই পার্ক তারা কোথায়?
অনেক অভিভাবকরাই বলছেন, “প্রথমদিকে পার্কে ঢুকতে একটু অস্বস্তি হত। আশপাশে পুলিশ ঘুরছে। তারপর অবশ্য পুলিশকর্মীরাই ডেকে বাচ্চাদের ভিতরে গিয়ে খেলতে বলতেন।’’এখন অবশ্য সেই জড়তা, অস্বস্তি সব উধাও। বিকেল হলেই গমগম করে পার্ক। টিফিন পিরিয়ডে থানা লাগোয়া দুটো স্কুল থেকে পড়ুয়ারাও এসে কিছুক্ষণ খেলে চলে যায়। সঙ্গীর অভাব পড়লে বা শিশুদের আবদারে এগিয়ে আসেন থানার পুলিশকর্মীরাও।
পুলিশ দেখলে ভয় করে না? খেলতে খেলতেই পায়েল, তৃষা, রিঙ্কি, সেলিম, তন্ময়রা বলে, “ভয় পাব কেন? ওরা তো পুলিশকাকু।”
অভিভাবক পিয়ালী দাস বা উদয়শঙ্কর বাগচীরা বলেন, “এখানে বাচ্চাদের খেলার কোনও জায়গা ছিল না। পার্কটা হয়ে খুব ভাল হয়েছে। পার্কটা না হলে পুলিশের এই ভূমিকাও জানা যেত না।”
আর কী বলছেন ছোটোদের পুলিশকাকুরা? এক পুলিশ কর্মী বলেন, “বাচ্চাগুলোর আবদার আমরাও উপভোগ করি। ওরা না এলেই এখন আমাদের কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।”
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে পুলিশের একটা সম্পর্কও তৈরি হয়ে যায়। জনসংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা কিন্তু বড় প্রাপ্তি। ’’ জেলার অন্যান্য থানাতে শিশু-পার্ক তৈরির ভাবনার কথাও জানান তিনি।
খুদেরা অতশত বোঝে না। খেলতে খেলতে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়লেই তাদের মন খারাপ হয়ে যায় তাদের। দুলতে থাকা একা দোলনা, সবুজ ঘাস শুধু তাদের কানে কানে বলে, ‘‘আবার কাল এসো কিন্তু’’। সেই ডাকেই পরদিন ফের খেলতে আসে তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.