|
|
|
|
খবরই নেই প্রশাসনের কাছে |
প্রাক-প্রাথমিকের বই পায়নি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে জানুয়ারি মাসে। ৫ মাস পরেও প্রাক-প্রাথমিকের বই আসেনি পশ্চিম মেদিনীপুরের শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে। বই ছাড়াই কচিকাঁচাদের ছড়া শুনিয়ে, রং চিনিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে পড়াচ্ছেন প্রশিক্ষকেরা। অথচ, জেলারই প্রাথমিক স্কুলগুলিতে প্রাক-প্রাথমিকের বই সময়ে পৌঁছে গিয়েছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) উত্তম ত্রিপাঠীর বক্তব্য, “আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই বই পাঠিয়ে দিয়েছি। শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে বই পাঠানোর দায়িত্ব আমাদের নয়।”
শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলি বই আনাতে পারল না কেন?
উত্তর দেবে কী, বই যে পৌঁছয়নি, সেই খবরই তো জানা নেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের। শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সচিব বিপুল বিশ্বাস বলেন, “সর্বত্রই বই চলে যাওয়ার কথা। কোথাও কী বই যায়নি!”
সর্বশিক্ষা দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক শাশ্বতী দাসও বলেন, “বই পৌঁছে যাওয়ার কথা।”
এখন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও ছেলে-মেয়েদের প্রাক প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করছেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল আসার অভ্যাস তৈরি করার পাশাপাশি রং চেনানো, ছবি আঁকা, গল্প শোনানো, বাংলা ও ইংরেজিতে ছড়া শেখানো হয়। প্রাথমিক স্কুলগুলোর পাশাপাশি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতেও প্রাক-প্রাথমিকে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, খুদেদের জন্য রঙচঙে বইও বানিয়েছে সরকার। ২টি বই। একটির নাম বিহান ও অন্যটি কুটুম কাটাম। বই বানানো হয়েছে শিক্ষা দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির পরিকল্পনা মতো। ছাপিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশনের রাজ্য দফতর। কিন্তু এই দু’টি বই জেলার শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে এখনও পৌঁছয়নি। |
শিক্ষাবর্ষ শুরুর পাঁচ মাস পরেও পৌঁছল না এই বই। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২৪৫৯টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৬৮। তাদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের ২৩ হাজার ২৫০ জন ছাত্র বই ছাড়াই প্রাক-প্রাথমিকের পাঠ নিচ্ছে খড়্গপুর-১ ব্লকের শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের সহায়িকা অনুভা রায় বলেন, “আমরা প্রাক-প্রাথমিকের কোনও বই পাইনি। এরকম বই দেওয়ার কথা আছে কি না জানাও নেই। তবে বই না থাকায় নিজেদের চিন্তাভাবনা মতোই রং চেনাই, ছড়া শেখাই।” নিখিলবঙ্গ মাধ্যমিক সম্প্রসারক সমিতি ও নিখিলবঙ্গ শিশু শিক্ষা সহায়িকা সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার যুগ্ম সম্পাদক অঞ্জন দে বলেন, “একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রেও বই যায়নি। আমরা অবাক হচ্ছি ৫ মাস পরেও বই ছাড়াই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা চলছে। এ ব্যাপারে বারেবারেই প্রশাসনকে জানালেও কোনও
সুরাহা হয়নি।”
শিশু শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে বই আসেনি কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের জন্যও যাতে বই পাঠানো হয় সে ব্যাপারে টেলিফোনে রাজ্য সবর্শিক্ষা দফতরকে জানানো হয়েছিল। তারা বই পাঠিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল মৌখিক ভাবে। কিন্তু এখনও সেই বই আসেনি। আর দফতরের আধিকারিকেরাও এতটাই উদাসীন যে, লিখিত ভাবে কোনও আবেদনও করেননি। এমনকী কেন্দ্রগুলিতে আদৌ বই গিয়েছে কি না, তার খোঁজও রাখেননি কেউ।
আধিকারিকদের দায়সারা এই মনোভাবেরই মাসুল গুণতে হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে। |
|
|
|
|
|