কলকাতার লাগোয়া এলাকাতেই শুধু নয়, গোটা রাজ্যেই সারদা গোষ্ঠীর কেনা কয়েক হাজার বিঘে জমির হদিস পেয়েছে পুলিশ। এমনকী, ভিন্ রাজ্যেও ওই সংস্থার নামে জমি আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ বলছে, সল্টলেকে সুদীপ্ত সেনের দু’টি অফিসে হানা দিয়ে প্রচুর নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলি পরীক্ষা করেই তদন্তকারী অফিসারেরা জেনেছেন, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, হুগলি, মালদহ, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মুশির্দাবাদ, নদিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুরে সারদা গোষ্ঠী ও তার কর্ণধার সুদীপ্তবাবুর নামে কয়েক হাজার বিঘে জমি আছে। বিস্তারিত তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে জমিগুলির খুঁটিনাটি জমা দেওয়া হয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। পুলিশের বক্তব্য, নথি অনুযায়ী ২০১২ সালেই ওই জমিগুলির অধিকাংশ কেনা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে জমি কেনার পরিমাণ বাড়াচ্ছিলেন সারদা কর্তা। ২০১২ সালে তা চরমে ওঠে বলে সূত্রের খবর। |
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সারদার সবচেয়ে বেশি জমির সন্ধান মিলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। প্রায় ১১০টিরও বেশি জমি কেনা হয়েছে সেখানে। বেশি সংখ্যায় জমি রয়েছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতে-ও। বেশির ভাগ জমিই সারদা রিয়েলটি ইন্ডিয়া লিমিটেডের নামে কিনেছেন সুদীপ্তবাবু। বাঁকুড়ায় একটি জমি অন্য সংস্থার নামে কেনা হয়েছে। এই সব জমির তথ্য বিধাননগর সিটি পুলিশের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে। যদিও সব জমিই সংস্থার নয় বলে জেরায় দাবি করেছেন সুদীপ্ত ও তাঁর সঙ্গীরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিষ্ণুপুর থানা এলাকা থেকেই সারদা গার্ডেন-এর উত্থান। দক্ষিণ শহরতলির ভাসা, বাগী ও উত্তর গৌরীপুরে গোষ্ঠীর প্রায় হাজার বিঘে জমির হদিস পেয়েছে পুলিশ। এ ছাড়াও ওই জেলারই সূর্যপুর এবং ইএম বাইপাস লাগোয়া এলাকায় সারদার জমি রয়েছে বলে পুলিশ তদন্তে জেনেছে। ওই জমির তদন্তে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি রাজস্ব) নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই এলাকার অধিকাংশ জমির মালিকানা বদল হয়ে গিয়েছে। কিছু জমির কোনও নথি নেই। তাই তদন্তে নেমে কিছুটা হলেও হোঁচট খেয়েছেন ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, সারদা গার্ডেনের দখলে জমি থাকলেও ভূমি রাজস্ব দফতরে তার কোনও নথিপত্রের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তদন্তে কিছুটা সময় লাগবে। তার পরেই সত্যতা সামনে আসবে।”
তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, ওই সব জমি আগেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, মালিকানা বদল হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে জমি বাজেয়াপ্ত করার পরেও তা কোনও ভাবে বিক্রি করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সারদা গার্ডেনে টাকা ঢেলেও জমির দখল পাননি এমন বেশ কিছু ব্যক্তি রয়েছেন। বিষ্ণুপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এখনও পর্যন্ত ২০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
|