|
|
|
|
|
এই শ্রী-ই তো উঁচু গলায় জনগণমন গাইত
গৌতম গম্ভীর |
|
গত তিন দিন যা যা ঘটল, বিশ্বাসই করতে পারছি না। ব্যক্তিগত ভাবে তো বটেই, আমাদের পুরো দলটাই গোটা ব্যাপারটায় স্তম্ভিত।
ম্যাচ গড়াপেটা করা বা স্পট-ফিক্সিং করাটা এক জন খেলোয়াড়ের পক্ষে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক অপরাধ। জাতীয় দলে আমার সতীর্থ শ্রীসন্তের বিরুদ্ধে ঠিক সেই কাজটা করারই অভিযোগ উঠেছে। পুরো ঘটনাটা জেনে আমি শক্ড। কিন্তু পাশাপাশি আর একটা কথাও এখানে বলে রাখি। শ্রীসন্ত-সহ বাকি তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ওঠা এ সব অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তা হলে ওদের প্রতি আমার কোনও রকম সহানুভূতি থাকবে না।
আশা করছি দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্তটা শেষ করবে পুলিশ। পাশাপাশি এটাও আশা করছি যে, স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। এই কলমটা লিখতে লিখতে খবর পেলাম, মুম্বইয়ের টিম হোটেল থেকে শ্রীসন্তের জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
আইপিএলেও যে স্পট-ফিক্সিং হয়েছে, এই খবরটা প্রথম পেলাম গত বৃহস্পতিবার সকালে। তার আগের সন্ধেয় পুণে ওয়ারিয়র্সের কাছে খুব ক্লোজ ম্যাচ হেরেছিলাম, তাই বুধবার রাতে ভাল ঘুম হয়নি। কেকেআরের এক জন টিম মেট ফোন করে বলল, তিন ক্রিকেটারকে নাকি স্পট-ফিক্সিং করার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম সে হয়তো আমার সঙ্গে বাজে ধরনের ইয়ার্কি মারছে। একটু পরেই অবশ্য নিউজ চ্যানেল খুলে দেখলাম, ব্রেকিং নিউজে গোটা ব্যাপারটা ঝড় তুলেছে। শ্রীসন্ত, অঙ্কিত চহ্বাণ আর অজিত চান্ডিলার পুরনো একটা ক্লিপ দেখানো হচ্ছিল। আর আমি রাঁচিতে আমার হোটেলের ঘরে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, এই শ্রীসন্তের ইন্ডিয়া হেলমেটেই জাতীয় পতাকার স্টিকার থাকত। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, এই শ্রীসন্তই সবচেয়ে জোর গলায় জাতীয় সঙ্গীত গাইত। তখনও প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম, পুরো ব্যাপারটা যেন মিথ্যে প্রমাণিত হয়।
কোনও কারণে শ্রীসন্ত আমাকে ‘টাইগার’ বলে ডাকে। জয়পুরে এ বার যখন দেখা হল, তখনও ওই নামেই ডেকেছিল। আমি লাঞ্চ করছিলাম। ও রাজস্থান সতীর্থদের সঙ্গে বসেছিল। আমাকে দেখেই এসে বলল, “টাইগার আজ বেশি মেরো না। তুমি সব সময় আমাকে বেশি মারো।” ওর বিরুদ্ধে আমি বেশি রান তুলি, সেটাই বলছিল আর কী। শ্রীসন্ত বরাবরই এ রকম। ওর কথা শুনে হেসে ফেলেছিলাম। ওকে ম্যাচের উপর ফোকাস রাখতে বলেছিলাম আমি। বলেছিলাম, “শ্রী, নিজের খেলাটা নিয়ে আরও খাটো। কামব্যাকের চেষ্টা করো। এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর আছে ভারতের। ওই সফরে কামব্যাক করাই তোমার লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
“সিওর টাইগার,” বলে শ্রীসন্ত চলে গিয়েছিল। তখন কী জানতাম, সপ্তাহখানেক পরে একটা বাণিজ্যিক খবরের কাগজে ওকে নিয়ে হেডলাইন হবে, “শ্রী ৪২০”।
এই তিন ক্রিকেটার নিজেদের কাছে নিজেরা ছোট তো হলই, পাশাপাশি রয়্যালস টিম মেট, ক্রিকেট দুনিয়া, ভারতীয় বোর্ড আর সবার উপরে নিজেদের পরিবার আর দেশের প্রতি মর্যাদা রাখতে পারল না। রাহুল দ্রাবিড়ের জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। এ বছর দারুণ লড়াই করে ও রাজস্থান রয়্যালসকে এত ভাল একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। এর পর যখন জানতে পারল যে ওর ড্রেসিংরুমেরই কয়েক জন টিমের স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তখন ও কতটা ভেঙে পড়েছিল ভাবুন! অভিযুক্ত তিন ক্রিকেটারের পরিবারের জন্যও আমার খুব খারাপ লাগছে। ক্রিকেট ভক্ত আর মিডিয়ার যাবতীয় ঝড়ঝাপটা তো ওদেরই সামলাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্রিকেটাররা ভারত আর ভারতীয় ক্রিকেটকে হাস্যাস্পদ করে ফেলেছে।
আমরা এখন হায়দরাবাদে। রবিবার শেষ ম্যাচ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। প্লে-অফের লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছি। কিন্তু তাই বলে শেষ ম্যাচে আমরা গা-ছাড়া ভাবে খেলব না। কারণ আমরা জিতে টুর্নামেন্ট শেষ করতে চাই।
আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকান সতীর্থ রায়ান ম্যাকলারেন দেশে ফিরে গিয়েছে। ভাবছি রবিবার এমন কিছু প্লেয়ারদের সুযোগ দেব যারা এখনও কোনও ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। এটা অবশ্য আমার নিজস্ব চিন্তা। দেখা যাক টিমের সিলেকশন প্যানেলের বাকি সদস্যরা কী ভাবছে। ব্যক্তিগত ভাবে বলে রাখি, জিতে টুর্নামেন্টটা শেষ করতে পারলে দারুণ লাগবে। |
|
|
|
|
|