মহিলার টোপ দিয়ে ব্ল্যাকমেল চালাত জিজু
ড়াপেটার শেকড় শুধুই কি আইপিএল-সিক্সে? তার আগে সবই সাফসুতরো?
গোড়া থেকেই সন্দেহটা ছিল পুলিশের। এবং জেরার মুখে সেটাই সত্যি বলে কবুল করে নিলেন অজিত চান্ডিলা। রাজস্থান স্পিনার জানালেন, শুধু এ বারেই নয়, গত আইপিএলেও তিনি গড়াপেটা করেছেন। দিল্লি পুলিশের দাবি, অজিত তাদের জানান, আইপিএল-ফাইভে গড়াপেটা হয়েছিল রাজস্থানের অন্তত পাঁচটা ম্যাচে, যার মধ্যে একটা দিল্লির বিরুদ্ধে।
রাজস্থানের অভিযুক্ত তিন ক্রিকেটারকে আজ চার বুকির সামনে একসঙ্গে বসিয়ে দফায় দফায় জেরা করে দিল্লি পুলিশ। বিস্ফোরক বেশ কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে এই জেরা-পর্বেই। অজিত যেমন গত আইপিএলে গড়াপেটার কথা কবুল করে নেন, তেমনই শ্রীসন্ত বলেন, কী ভাবে ক্রিকেটারদের মহিলাঘটিত ব্যাপারে ব্ল্যাকমেল করে গড়াপেটায় বাধ্য করত বুকি জিজু জনার্দন।
শ্রীসন্ত জানিয়েছেন, বিভিন্ন পার্টিতে ক্রিকেটারদের সঙ্গে মহিলাদের আলাপ করিয়ে দিত জিজু। কোনও ক্রিকেটার কোনও মহিলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেই জিজুর ব্ল্যাকমেল চালু হয়ে যেত। ক্রিকেটারদের কাছে ভয় দেখিয়ে জিজুর এমএমএস যেত। ক্রিকেটারদের বাধ্য করা হত স্পট ফিক্সিং করতে। চণ্ডীগড়ের এক হোটেল থেকে এ সমস্ত এমএমএস চালাচালি করতেন জিজু। সেই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজও শনিবার জোগাড় করে ফেলেছে দিল্লি পুলিশ। ক্রিকেটারদের সঙ্গে বুকিদের কথোপকথনের রেকর্ড এ দিনই কণ্ঠস্বর পরীক্ষার জন্য চণ্ডীগড়ে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের দাবি, ক্রিকেটার থেকে বুকি হয়ে ওঠা অমিত সিংহের রীতিমতো ঘনিষ্ঠ ছিলেন শ্রীসন্ত। তবে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে তাঁকে গড়াপেটায় জড়ানোর জন্য জিজু জনার্দনকেই আজ দুষেছেন শ্রীসন্ত। ১৩ মে রাতে মুম্বইয়ের যে পাঁচতারা হোটেলে শ্রীসন্ত উঠেছিলেন, সেই একই হোটেলে উঠেছিলেন জিজুও। একই সংস্থা তাঁদের জন্য ওই হোটেল ভাড়া করে দেয়। সচিনদের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে আসা বাকি রাজস্থান টিম কিন্তু ওই হোটেলে ওঠেনি। হোটেলটিতে আজ হানা দিয়ে শ্রীসন্তের ঘর থেকে একটা ল্যাপটপ, আইপ্যাড, একটা মোবাইল, ডেটা কার্ড, ইংরেজি ও মালায়লামে লেখা একটা ডায়েরি এবং ৭২ হাজার টাকা উদ্ধার করে মুম্বই পুলিশ। জিজুর ঘর থেকে মেলে মোবাইল, আইপ্যাড ও তার কিছু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র।
বিকেলে মুম্বই পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ দমন) হিমাংশু রায় বলেন, “উদ্ধার করা জিনিসপত্র থেকে আমরা সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছি। ১৩ থেকে ১৫ মে শ্রীসন্ত-জিজুর ঘরে কারা কারা এসেছিল, হেটেলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তা বার করার চেষ্টা হবে। ওঁদের মোবাইল ও সিম কার্ডও পরীক্ষা হবে।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, জিজুর ফোন থেকেও অন্য বুকিদের সঙ্গে কথা বলতেন শ্রীসন্ত। সেই ফোনেও আড়ি পাতা হয়েছিল। শ্রীসন্তের ল্যাপটপের ‘মিরর ইমেজ’ তৈরি করে যাবতীয় তথ্য ঘেঁটে দেখতে আদালতের অনুমতি জোগাড় করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে কেরলের পেসারের অস্বস্তি বাড়িয়ে হিমাংশু জানিয়ে দিয়েছেন, মুম্বই পুলিশের তরফে আলাদা মামলা দায়ের করে শ্রীসন্তকে হেফাজতে নিতে চান তাঁরা।
স্পট ফিক্সিং নিয়ে দিনভর চর্চার কেন্দ্রে অবশ্য আজ বারবার উঠে এসেছে ৯২টা মোবাইল। ১৪ মে, অর্থাৎ শ্রীসন্তরা ধরা পড়ার আগের দিন মুম্বইয়ে গ্রেফতার হয় রমেশ ব্যাস নামে এক বুকি। একা তার কাছেই ছিল নয় নয় করে বিরানব্বইটা মোবাইল! এ ছাড়াও তার ডেরা থেকে উদ্ধার হয়েছে আঠারোটা সিম কার্ড, কয়েকটা ল্যাপটপ, টিভি সেট। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) বলছেন, “রমেশ প্রায় একটা সমান্তরাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ চালাত। বিরানব্বইটা মোবাইলের মধ্যে তিরিশটা বরাদ্দ ছিল করাচি ও দুবাইয়ের বুকিদের সঙ্গে কথাবার্তার জন্য। বাকিগুলো ভারতীয় বুকিদের জন্য।” পূর্ব দিল্লি, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদ, জয়পুর, আমদাবাদের মতো নানা শহর থেকে বুকিদের কথা বলিয়ে দেওয়া হতো করাচি বা দুবাইয়ে থাকা সুপার বসদের সঙ্গে। নিশ্চিন্তে কাজ হতো টেলি-কনফারেন্সে। রমেশ ছাড়াও গ্রেফতার হয়েছে পঙ্কজ শাহ ওরফে লোটাস নামে আরও এক বুকি। মুম্বইয়ে জুয়াড়িদের গোটা ছকের সন্ধান পেতে জেরা করা হচ্ছে দু’জনকেই।
ইতিমধ্যেই অবশ্য দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছেন দিল্লি পুলিশের গোয়েন্দারা। তাঁদের চারটি দল গিয়েছে কলকাতা, মুম্বই, আমদাবাদ ও হায়দরাবাদে। জয়পুর পুলিশও তদন্তে এগিয়ে এসেছে। জয়পুরে বুকিদের গ্রেফতার করে যে শ’তিনেক মোবাইল ও সিম কার্ড পাওয়া গিয়েছে, তা তুলে দেওয়া হয়েছে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের হাতে। পুলিশের একটি দল আজ ফরিদাবাদে অজিত চান্ডিলার বাড়িতেও তল্লাশি চালায়। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের আইনজীবীরা অবশ্য এখনও মক্কেলদের নির্দোষ বলেই দাবি করছেন।

আজ বোর্ডের বৈঠকে চির-নির্বাসনের সিদ্ধান্ত হয়তো নয়
তিনজন দোষী ক্রিকেটারের জন্য পুরো আইপিএল-কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পক্ষপাতী নন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এন শ্রীনিবাসন। তাঁর মতে, “ওরা তিনজন অপরাধ করেছে বলে পুরো আইপিএল-ই খারাপ, এটা মানতে রাজি নই আমি। অথচ সারা দেশ জুড়ে পুরো টুর্নামেন্টটাকেই কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা চলছে। তবে আইপিএল বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাই নেই।” এই বিষয়ে আলোচনার জন্য রবিবার বোর্ডের ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি সভা ডাকা হলেও তাতে তিন অভিযুক্ত ক্রিকেটারকে চিরনির্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্ভবত নেওয়া হবে না। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রের জন্যই এখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, বোর্ডের নিয়ম বলছে, কোনও তদন্ত কমিটি গঠন করার ৩০ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত কোনও ক্রিকেটারকে চিরনির্বাসনে পাঠানো যাবে না। রবিবারের সভায় বোর্ডের তদন্ত কমিটি তৈরি হওয়ার কথা, যার একমাত্র সদস্য হবেন সংস্থার অ্যান্টি করাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিটের প্রধান রবি সাওয়ানি। শ্রীনিবাসন এ দিন এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, “একটা কথা পরিষ্কার বলতে চাই। গড়াপেটা আটকানোর চেষ্টায় যদি কোনও ফাঁক রয়ে গিয়ে থাকে, কোনও ভুল হয়ে থাকে, তা হলে তাকে আড়াল করার প্রশ্নই নেই। বরং শুধরে নেওয়া হবে। আমরা চুপ করে বসে থাকব না।”

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.