|
|
|
|
এভারেস্টে পা রাখলেন হাওড়ার ছন্দা
তিয়াষ মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
সোনার মেয়ে, না কি লোহার মেয়ে! বেসরকারি উদ্যোগে দেশের হয়ে প্রথম এভারেস্ট ছুঁয়ে ফেলা বাঙালি মেয়েটাকে কি কোনও ধাতু দিয়েই বর্ণনা করা যায়! শনিবার ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখলেন হাওড়ার কোনার বাসিন্দা বছর তিরিশের ছন্দা গায়েন।
পাহাড়ে চড়ার হাতেখড়ি বছর দশেক আগে। ছোটখাটো পাহাড়ি অ্যাডভেঞ্চারে যোগ দিতে দিতেই, ২০০৬ সালে দার্জিলিঙের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে পর্বত অভিযানের প্রাথমিক শিক্ষা সেরে ফেলেন। তার পর অংশ নিতে থাকেন বিভিন্ন পর্বত অভিযানে। মৌলালির ইনস্টিটিউট অফ এক্সপ্লোরেশনের পক্ষ থেকে হিমাচলের ফ্লুটেড শৃঙ্গ অভিযানে সফল হওয়ার পরে ২০০৮ সালে গাড়োয়ালের যোগিন ১ এবং ৩ শৃঙ্গে অভিযানের সুযোগ মেলে। সাফল্যও আসে। ছ’হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার দু’টি শৃঙ্গই হার মানে ছন্দার জেদের কাছে। আর তার সঙ্গেই তৈরি হয় নতুন জেদ, ছুঁতে হবে এভারেস্টও।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ের পক্ষে এমন অভিযানের স্বপ্ন দেখা যদিও বা সম্ভব, সেই স্বপ্ন সত্যি
|
ছন্দা গায়েন |
করার দৌড়টা ততটাই অসম্ভব। কিন্তু কঠিন সেই পথটাকেই পার করার মনের জোর, সাহস আর দাঁতে দাঁত চাপা জেদ বোধ হয় প্রকৃত অভিযাত্রীর রক্তেই থাকে। সে পথ যতই বন্ধুর হোক না কেন।
২০১১ সালে হঠাৎ করে বাবা মারা যাওয়ার পরে আরও কঠিন হয়ে ওঠে লড়াই। ভেঙে না পড়ে হাল ধরেন পারিবারিক ব্যবসার। একা হাতে, অদম্য চেষ্টায় আস্তে আস্তে বড় করেন বাবার তৈরি করে যাওয়া দোকানটি। ২০১২ সালে সুযোগ আসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুবকল্যাণ দফতর আয়োজিত মনিরাঙ শৃঙ্গ অভিযানে দলনেত্রী হিসেবে অংশগ্রহণ করার। নিজের দায়িত্বে সুষ্ঠু ভাবে সফল করেন সেই অভিযান। এর পরেই ঠিক করে ফেলেন, আর দেরি নয়, উঠে পড়ে লাগতে হবে।
অভিযান পরিকল্পনার সব চেয়ে বড় বাধা অর্থের জোগান। এভারেস্ট অভিযানের জন্য প্রয়োজন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান পাওয়া গেলেও বাকি পুরো টাকাটাই ছন্দা জোগাড় করেছেন নিজের চেষ্টায়।
ধার-দেনা-বন্ধকের দীর্ঘ ইতিহাস পেরিয়ে ২৮ মার্চ কলকাতা ছাড়েন। ৮ এপ্রিল সোলো খুম্বুর বেসক্যাম্পে পৌঁছন ছন্দা। তার পর যথা নিয়মে পরবর্তী ক্যাম্পগুলি পেরোতে থাকেন। অভিযান আয়োজক সংস্থা লোবেন এক্সপিডিশন সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ সাউথ কলের সামিট ক্যাম্প থেকে শৃঙ্গ জয়ের উদ্দেশে রওনা হন ছন্দা। সঙ্গে ছিলেন একাধিক বার এভারেস্ট ফেরত তাশি শেরপা। আবহাওয়ার গতিক খারাপ না হওয়ায় বড় কোনও সমস্যায় পড়েননি তাঁরা।
শনিবার ভোরেই সেই স্বপ্নের মুহূর্ত। স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বেসক্যাম্পে খবর পৌঁছয়, অভিযান সফল হয়েছে। ছন্দার সঙ্গে অবশ্য এখনও যোগাযোগ করা যায়নি।
মেয়ের সাফল্যের খবর প্রথম শোনার পরে আবেগে কেঁদে ফেলেন জয়া গায়েন, ছন্দার মা। “আজ যদি ওর বাবা থাকত...” বলতে বলতেই কান্নায় গলা বুজে এল জয়া দেবীর।
ছন্দার সাফল্যে বাংলার প্রথম মহিলা পর্বত অভিযাত্রী দীপালি সিংহের প্রতিক্রিয়া, “১৯৬৭ সালে প্রথম অসামরিক উদ্যোগে মহিলা দল তৈরি করে রন্টি শৃঙ্গ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। সে দিন আমি যে যাত্রাটা শুরু করেছিলাম, আজ তা পূর্ণ হল।” ৬৭ বছরের দীপালি দেবীর আবেগ-জড়ানো মতামতের সঙ্গে অবশ্য এক মত নন প্রখ্যাত পর্বতারোহী গৌতম দত্ত। তিনি বললেন “প্রকৃত অভিযানের মানসিকতা থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের অভিযাত্রীরা। পর্যটন ব্যবসার (এভারেস্টের কোনও কোনও রুটে যা ঘটে চলেছে) সুযোগ নিয়ে অভিযাত্রী মননকে খাটো করে আরোহণের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন। এভারেস্ট তার গুরুত্ব হারাচ্ছে।”
|
তিনবার এভারেস্ট জয় আনসু’র
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
কয়েক মাস আগে একই অভিযানে দু’বার এভারেস্ট ‘জয়’ করেছিলেন তিনি। এ বার ফের বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছে নজির গড়লেন অরুণাচলের আনসু জানসেনপা। ভারতের মহিলাদের মধ্যে তিনিই ৩ বার এভারেস্ট জয়ের ‘স্বাদ’ পেলেন। আজ ভোরে আনসুর সঙ্গে ওই শৃঙ্গে উঠলেন মণিপুরের ১৬ বছরের কিশোর নামেইরাকপাম চিংখেইনগানবা। ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা নিয়ে এভারেস্ট-যাত্রা শুরু করেছিলেন উত্তর-পূর্বের ১৭ পর্বতারোহী। ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বেস ক্যাম্পে পৌঁছন তাঁরা। আবহাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ শৃঙ্গের দিকে রওনা দেওয়া যাচ্ছিল না। আনন্দ গুরুং এবং অরুণাচলের নিমা লিমা এভারেস্টে পৌঁছন। গতকাল রাতে বেস ক্যাম্প থেকে রওনা দিয়ে আজ ভোরে এভারেস্টে পৌঁছন দুই সন্তানের মা আনসু। সঙ্গে ছিলেন নামেইরাকপাম, কাজি শিরপা, মহিলা কন্সস্টেবল ওয়াংসুক মিরথং, তরণ শইকিয়া। |
|
|
|
|
|