প্রবন্ধ...
জোলি কে পিছে
ক: এ তো মার্ডার! জোড়া খুন!
খ: ছিছিছি! কথায় বলে, উন্নত স্তনের বিকল্প হতে পারে একমাত্র উন্নততর স্তন!
গ: স্যালুট কিন্তু! কী সাহস! ওই গ্ল্যামার-গ্ল্যান্ড, বাজার-জাগানিয়া, ইষ্ট-ইউএসপি এক দানে খচাৎ!
ক: ব্র্যাড পিট কিছু বলল না?
খ: বলেছে ‘হিরোইক’।
মানে?
ক্ষ: ‘হিরোইক’ হচ্ছে ‘সেক্সি’র উলটো। পিট এ বার ওর খুব প্রশংসা করবে আর অন্য মেয়ের সঙ্গে লটঘট করবে।
ই: অ্যা-ই, আসলি কথাটা বল। এটা তোদের পুরুষজাতের ইগোয় আল্টি-ঢিসুম! যে, দ্যাখ শালা, এই বুকের জন্যে মাইল মাইল জাম্পিং ঝপাক, বুক দিয়ে আমায় ডিফাইন করিস, লে সমূহ ডিলিট! আমি আমাকে ডিফাইন করব, তুই না।
ঙ: পনেরো বছর ধরে নাগাড়ে পুং-ডেফিনিশন অনুযায়ী ফাটিয়ে কুঁদেনেচে, মেল গেজের আন্ডারে জনপ্রিয়তার জাঙিয়া কেচে, কোটি কোটি মাল্লু কামিয়েছে! আজ হঠাৎ কাটা বুক বিপ্লবায় নমঃ?
ঈ: তা কেন? আগেও তো ও সাকসেসের জন্যে মেল গেজ-টাকে ইউজ করছিল!
খ: ওয়াঃ! টিপিকাল লিট্ল-ম্যাগ-কবি ভণ্ড-পোজিশন! যখন আনন্দবাজারে লেখা বেরোল না, তখন অ্যান্টি-এস্ট্যাবলিশমেন্ট হওয়ার গ্ল্যামার পোয়ালাম। যেই ‘দেশ’-এ কবিতা ছাপল, তখন আমার কথাটাকে স্মাগ্ল করার জন্য এস্ট্যাবলিশমেন্টকে ইউজ করলাম!
ঈ: জোলির কথা ছাড়। অ্যাক্টর ইজ ডেড। এই অ্যাক্টটা সপাট প্রশ্ন ছুড়ে মারে: নারীত্ব কি বুকের সাইজে থাকে?
কখনওই না। নিতম্বের সাইজেও থাকে।
গ: অ্যায়! পলিটিকালি কারেক্ট আলোচনা হচ্ছে!
অঃ, আমি ভাবলাম মানুষিক আড্ডা! নারীত্ব তাইলে কীসে থাকে?
ঈ: ব্রেনে! শিক্ষায়, ব্যবহারে, বুদ্ধিতে, অ্যাটিটিউডে!
ঙ: তাতে দুর্দান্ত ‘মানুষ’ত্ব থাকতে পারে, কিন্তু ‘নারী’ত্ব ডিফাইন করতে গেলে লজিকাল-এর সঙ্গে বায়োলজিকাল আইটেম পাঞ্চ করতে হবে। নারীর ব্রেন দেখে তো যৌন উত্তেজনা হয় না, তবে তো চশমায় স্ক্যানার লাগাতে হয়!
ই: যৌনতার কথা তুললি কেন? নারী তোর কাছে স্রেফ যৌন অবজেক্ট?
ক্ষ: স্রেফ যৌন অবজেক্ট নিশ্চয়ই নয়, কিন্তু আলবাত যৌন অবজেক্টও। পুরুষও তাই। তুই যখন হৃতিক রোশন-কে ‘ডেডলি!’ বলে লাল ফেলিস, তখন তো তার শিক্ষা-বুদ্ধির খোঁজ নিস না, ওগুলো সম্পর্কে কিস্যু না জেনেই তুই ওর ফ্যান বাইসেপের, সিক্স-প্যাকের, চাউনির ফ্যান, কারণ সে এক জন যৌন অবজেক্ট। ফিল্মস্টার ছাড়, আমরা কেউই পরস্পরের দিকে পূর্ণ অযৌন তাকাতে পারি না। ঈশ্বর করুন এমন নীরস জমানা জিন্দেগিতে না-আসুক, যখন নারীর আই-কিউয়ের অ্যাটেস্টেড মার্কশিট দেখেই শুধু চুমু গজায়!
ঈ: কিন্তু তাই গজানোই উচিত!
ঙ: ‘উচিত’? সে তো খেতে-পরতে মিনিমাম যা লাগে তার বাইরে মাইনের পুরো টাকাটা প্রত্যেক মাসে তোর গরিবদের বিলিয়ে দেওয়া উচিত। কঙ্গোতে লাখে লাখে গ্যাংরেপ হচ্ছে জানা মাত্র সব ছেড়ে কঙ্গো গিয়ে প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত। এমনকী নিজের পায়খানা দেখে ঘেন্না পাওয়া উচিত না, কারণ গতকালই সে তোর আদরের বিরিয়ানি ছিল। এই উচিতগুলো কি রিয়েলিটিতে অনুবাদ করা সম্ভব? একটা মেয়ের ভাল ঠোঁট-বুক দেখে উত্তেজিত হয়ে সাংঘাতিক গিল্টে ভুগলাম আর পুরুষাঙ্গকে বকুনি দিলাম, সে মাথা নিচু করে সুড়সুড় আস্তানায় ব্যাক, তার পর একটা মেয়ের কাফকা-অনুবাদ পড়ে হরমোনে কার্নিভাল চেগে গেল, বাস্তবে হয়? নারীত্ব যদি শুধুই ব্রেনে থাকত, তা হলে এক জন পুরুষের নারীত্বের প্রেমে এক জন পুরুষের পুরুষত্ব আকুল, এ জিনিস হরদমই হচ্ছে না কেন? সমকামীরাই বা ব্রেন-প্রেমে পড়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে বিয়ে করছে না কেন হেসেখুশে? শোন, নারীত্ব ব্রেনেও আছে, স্তনেও আছে। তবে, অনেস্টলি, স্তনের দিকে কিছুটা হেলে আছে।
ই: এই শয়তান দাঁড়িপাল্লাবাজির জন্যই ব্রেস্ট ক্যানসারে ভুগেও মেয়েরা ভাবছে, স্তন বাদ গেলে তার নারীত্ব ক্যানসেল। তাই তো জোলি ইম্পর্ট্যান্ট। সে বলছে, দ্যাখো, আমি, যে-আমি স্তনের রানি, স্তন ছাড়াও বাঁচতে জানি। পেট্রিয়ার্কির মুখে এক চড়!
কিন্তু খেয়াল রাখিস: এর পর থেকে ওর কোনও নতুন ছবি, স্টিল বা মুভি, তুই কক্ষনও দেখতে পারবি না, পুরনো স্তনগুলোর কথা মনে না-করে। ওকে যখনই দেখবি, পেছনে, ভৌতিক পেন্ডুলামের মতো, অতীত স্তন দুলবে। বরং এত দিন যদি বা কেউ জোলিকে অন্য কিছু দিয়ে বিচার করতও, কেউ নাভি দিয়ে কেউ বুদ্ধি দিয়ে, এ বার থেকে ওকে ডিফাইন করবে এই স্তনই, শুধুই স্তন, তাদের লার্জার দ্যান লাইফ ‘না-থাকা’ দিয়ে।
ক্ষ: আর, স্তন-হ্যাংলামিকে তুই ‘অনুচিত’ দাগাচ্ছিস কী বলে? মানুষের দপদপে জৈবিক জান্তব আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ‘ঔচিত্য’ ঠেকিয়ে অপমান করিস না। মাস্টারবেশনের ফ্যান্টাসির আকাঁড়া সততার সামনে তোর উচিত-ম্যানিফেস্টো দাঁড়াতে পারবে? ছ’লাখ ফুটনোটেও, সৎ যৌন উত্তেজনার ৪৪০ লাখ ভোল্টকে কাউন্টার করতে পারবি? ওগুলো তীব্রতম সত্য। সত্য কারেক্টনেসের বাটখারার ধার ধারে না।
ই: এই ‘সত্য’গুলো কি নবীন ব্রণ-র মতো তোর হৃদয়ে আপনাআপনি গজিয়ে উঠল? ভগবান দিল? এই ‘পিয়োর অ-ভেজাল লচক্দার বেসিক ইনস্টিংক্ট’ তোর বুকে সমাজই পুঁতেছে, তুই তখন আনমনা ছিলি!
ঙ: ক্ষতি কী? ‘তৈরি করা’ হলেই তার দর কমে যাবে কেন? সক্কলের বেসিক ইনস্টিংক্ট যদি ‘তৈরি করা’ হয়, তা হলে তা অ্যাজ গুড অ্যাজ ‘না-তৈরি করা’। এগুলো তো জৈব সত্য হিসেবেই কনস্ট্রাক্টেড! তা হলে তার প্রভাব পড়বে এগজ্যাক্টলি জৈব সত্য হিসেবেই! আর, দুনিয়ার সবই যদি ‘সমাজের বানানো’ হয়, তোর ‘সচেতনতা’ও তো তা হলে ‘সমাজের বানানো’। তুই টানা আত্ম-সুড়সুড়ি খাচ্ছিস কী বেসিসে?
ঈ: অ্যাট লিস্ট এই বেসিসে, যে, এই ‘সত্য’গুলোকে কারেক্ট করা যাবে না: এমন গাম্বু-গোঁড়ামি আমার নেই! কঙ্গো গিয়ে মিছিল করতে পারছি না, মাইনের টাকা ভিখিরিকে দিই না, ঠিক। কিন্তু দেওয়া যে উচিত ছিল, পারলাম না, এগুলো তো নিজেকে ও অন্যকে নাগাড়ে মনে করিয়ে যেতে হবে! ‘হয় না’ আর ‘হওয়া উচিত নয়’ তো এক না। ‘ধর্ষণ কোনও দিন রোখা যায়নি, নিয়ানডার্থাল যুগ থেকে হচ্ছে’ এই মনে করে ‘ধর্ষণ রোখা উচিত নয়’-এ অ্যারাইভ করলে তো মারাত্মক!
খ: কিন্তু তোরা এত কোঁদল মচাচ্ছিস কী ধরে নিয়ে? জোলি বুক কেটে ফ্ল্যাট-চেস্টেড হয়ে গেছে? ধুস! ও অন্য বুক লাগিয়েছে, আর্টিফিশিয়াল! তা আগেরটার চেয়ে ইন অল প্রোব্যাবিলিটি বেশি সুগঠিত। ওর যদি অত রেলা থাকত, অত ধক, তা হলে তো আর বুকই লাগাত না।
গ: আরে, বুক না থাকলে সন্তানদের শক লাগবে না?
খ: সেই সমাজ-নির্মিত শক-কে বিদ্যা দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে! ইন ফ্যাক্ট, এই তর্কটাকে ২৩৭ দিয়ে গুণ করলে, নারীর একটা প্রোজেক্ট যদি হয় কিছুতেই বাহ্যিক রূপ-কে আমার এতটুকু পরিচয় হিসেবে ধার্য করব না, এবং আমার মূল্যায়ন পিয়োর ব্রেনের ভিত্তিতে হোক ফোর্স করব, তা হলে ক্যানসার অর নো ক্যানসার, দুষ্ট আব-এর মতো স্তন ফেলে দেওয়া উচিত। ভাল স্টেরিলাইজ্ড কাঁচি বাজারে এসে গেছে!
ক: আমার তো অন্য কোশ্চেন। ব্রেনও তো পুরোপুরি নিজের গড়া নয়! তোর বুদ্ধি আছে কি নেই, প্রতিভা আছে কি নেই, সে-ও তো, বাইরের রূপের মতোই, জিন ক্রোমোজোম দিয়ে অনেকটাই ডিটারমিন্ড। তা হলে ব্রেন স্তনের চেয়ে কুলীন হল কোন বিচারে?
গ: আঃ, সন্তানদের প্রসঙ্গটা আঁকড়ে ধর! স্তন তো মাতৃত্বেরও মেজর প্রতীক। এক জন মা তাঁর সন্তানদের আরও বেশি দিন কাছে পাওয়ার গ্যারান্টি লাভ করতে সেই স্তন-সিম্বল’ই বলি দিলেন, জম্পেশ প্যারাডক্স না?
হাহা, আসলি প্যারাডক্স অন্য! ‘নারীত্ব’-র খাঁচা থেকে জোলি ঝাঁপ দিল পুংতন্ত্রেরই তৈরি ‘মাতৃত্ব’-র খাঁচায়। কেন স্তন কাটাল? নিজে চুটিয়ে বাঁচবে বলে নয়! একই অঙ্গে নয়া সেট স্তন পেয়ে ব্র্যাড পিট যৌন ম্যারাথন বাগাবে সেই প্লেজার-ট্রিপের দিকেও ঝুঁকে নেই! মূল ডায়ালগ: সন্তানরা যাতে আমায় বহু দিন কাছে পায়, ব্র্যাকেটে ফুঁপিয়ে। এটা হল ‘নিজের তাবৎ আনন্দ-অধিকার ভোলো, কারণ তুমি ম্মাআআ’ পেট্রিয়ার্কি-শ্লোকেরই চাকরি। ঘটা করে আত্মত্যাগের বাবা স্তনত্যাগ রচে মাথার পেছনে মাতৃ-জ্যোতিগোল্লা ঝালাই হল। সে কেটে বাদ দেবে এমন সার্জন জন্মেছে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.