সম্পাদকীয়...
নূতন স্বাদ
রাষ্ট্রপুঞ্জ বলিল, খাদ্যসংকট মিটাইবার এবং মানুষের সামগ্রিক পুষ্টি বাড়াইবার একটি অনবদ্য উপায় হইল, পোকা খাওয়া। বিশ্বে দুই শত কোটি মানুষ তাঁহাদের খাদ্য-তালিকায় পোকাকে রাখিলেও, অধিকাংশ মানুষের নিকট পোকা খাইবার চিন্তা বিবমিষা-উদ্রেককারী। অথচ এই অভ্যাসের সুফল প্রচুর। পোকাদের পাওয়া যায় সর্বত্র, তাহারা প্রজনন করে অতি দ্রুত, তাহাদের খাদ্যগুণ প্রভূত। তদুপরি, পোকারা যাহা খায়, তাহার বহুল অংশই তাহাদের অঙ্গে মানুষের খাইবার যোগ্য মাংস হিসাবে যুক্ত হইয়া যায়। তাহারা দুই কেজি খাদ্য গ্রহণ করিলে, তাহার অঙ্গে এক কেজি মাংস এমন তৈয়ারি হয়, যাহা মানুষ খাইতে পারে। অন্য দিকে, গবাদি পশু আট কেজি খাদ্য খাইলে, তবে তাহাদের অঙ্গে এক কেজি মনুষ্যের ভক্ষণযোগ্য মাংস উৎপন্ন হয়। পিঁপড়া, ফড়িং বা ঝিঁঝির খাদ্যগুণ, গ্রাম-প্রতি প্রোটিনের বিচারে, প্রায় স্তন্যপায়ী প্রাণিগণের মাংসের কাছাকাছি। পোকার মধ্যে পাওয়া যাইতে পারে প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ তো বটেই, তামা, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, দস্তা এবং তন্তু। খাদ্যের জন্য পোকা জোগান দেওয়া হয় মূলত জঙ্গল হইতে, কিন্তু পোকা খাইবার অভ্যাস বাড়িলে, পরিকল্পিত পোকা-চাষ বাড়িবে। তাহার সুফলও প্রচুর, তাহারা অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় ন্যূন পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করে (ওই গ্যাস পরিবেশ-শত্রু), পোকারা মানুষ ও অন্যান্য জন্তুর বর্জ্য খাইয়া লয়, মিশ্র জৈব সারও খায়। পরিবেশবান্ধব এই প্রাণীগুলি সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইলে, পৃথিবীর মঙ্গল। যে শিশুরা পুষ্টির অভাবে ভুগিতেছে, তাহাদের পোকা খাইবার পরামর্শ দিয়াছেন খাদ্যবিশারদেরা।
কথাটি শুনিয়াই নাক কুঁচকাইয়া লাভ নাই। উহাতে শুচিবায়ুগ্রস্ত স্থবির মানুষের কথা মনে পড়িয়া যায়। নিজ অভ্যাসের বাহিরে কিছু শুনিলেই তাহা প্রত্যাখ্যান করিবার রীতি অতি সংকীর্ণ হৃদয়ের পরিচায়ক। সুইটজারল্যান্ড, চিন, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুর খাওয়া হয় সমারোহ করিয়া। ভিয়েতনামে সাপ খাওয়া হয়। সুইটজারল্যান্ডে বিড়াল খাওয়া লইয়াও খবর হইয়াছে। বঙ্গদেশে তাহা শুনিয়া অনেকেই নাকে আঙুল দিবেন ও মানসিক বমন করিবেন। কিন্তু সেই বিতৃষ্ণা ও ন্যক্কারের এতটুকু ভিত্তি নাই। একটি প্রাণীকে ভক্ষণ করা যাইলে, সকল প্রাণীকেই ভক্ষণ করা যায়। পোকাদের নিয়মিত খাইবার জন্য অধিকাংশ মানুষকে অভ্যাস ও সংস্কারের শৃঙ্খলগুলি কাটিতে হইবে। হয়তো কুকুর-কাবাবে অভ্যস্ত মানুষ পাঁঠা খাইবার কাহিনি শুনিলে কানে আঙুল দেন। সর্পভুক মানুষ ভাবিতেই পারেন না এমন রসনাহ্লাদ কেহ স্বেচ্ছায় ছাড়িতে পারে। মানুষকে মহৎ করিয়াছে তাহার অদম্য কৌতূহল, যাহা চন্দ্রে রকেটও পাঠাইয়াছে, অগ্নির সহিত ‘সর্বভুক’ বিশেষণ লইয়া মল্লযুদ্ধও করাইয়াছে। ‘আমাদের দেশে বা সমাজে বা সম্প্রদায়ে পোকা খাওয়া হয় না, তাই তাহা খাইব না’ এই প্রচলিত মনোবৃত্তি যত শীঘ্র সম্ভব ত্যাগ করা আবশ্যক, কারণ এই মানসিকতার প্রকৃত অনুবাদ হইল, ‘যাহা এত দিন হয় নাই, তাহা কোনও দিন হইবে কেন?’ এই নীতি অনুযায়ী চলিলে পৃথিবীর কোনও নূতন বস্তু ও ধারণাই গ্রহণের দ্বারগুলি বন্ধ হইয়া যাইবে। মোবাইল ব্যবহারও পোষাইবে না! দায়ে পড়িলে বা চরম ক্ষুধার কবলে তড়পাইলে অবশ্য সকল মনুষ্যই লাফাইয়া পোকা খাইবে, কিন্তু তাহার জন্য অপেক্ষা না করিয়া সুস্থ কৌতূহল ও নূতনবিলাসী মানসিকতায় স্বাদ-প্রসার-প্রকল্প লইয়া, মহান ও বিশ্বজয়ী ‘দেখাই যাউক না’ প্রণোদনায় ভর দিয়া, দেওয়ালস্থিত পোকাটিকে লোভী দৃষ্টিতে অবলোকনই সপ্রতিভ প্রগতির দ্যোতক!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.