|
এক ঝলকে... |
পৃথিবী
১২ মে — ১৮ মে |
|
• ঢাকা • উৎপাদনের খরচ কমাতে এশিয়ায় বা আফ্রিকায় কারখানা তৈরি করাই গত এক-দেড় দশকে উন্নত দুনিয়ার দেশগুলোয় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতে খরচ বাঁচে ঠিকই, কিন্তু সেই কারখানায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অবস্থা অনেক সময়ই খুব করুণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশেই যেমন। গত এপ্রিলে বাংলাদেশে একটি গারমেন্টস কারখানা ভেঙে পড়ে। সেই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১১২৭। দুর্ঘটনাটি হঠাৎ ঘটেনি। যে বাড়িটি ভেঙে পড়েছে, তার দেওয়ালে বড় বড় ফাটল তৈরি হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। শ্রমিকরা আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কান দেয়নি। তারই ফল এতগুলি প্রাণহানি।
যে বাড়িটি ভেঙে পড়ল, সেখানে ব্রিটেনের কিছু নামকরা সংস্থার কারখানাও ছিল। গোটা দুনিয়া যখন এই দুর্ঘটনার খবরে নড়েচড়ে বসেছে, ব্রিটেনের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস জানাল, যে সব সংস্থা ভিন্ দেশে উৎপাদনের কাজ করায়, তাদের জন্য নতুন নীতি চালু হচ্ছে শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের ন্যূনতম মান বজায় না রেখে কারখানা চালানো যাবে না। |
যে ২৬০টি দেশে ব্রিটেনের কূটনৈতিক মিশন আছে, তার সবক’টিতেই যাতে এই নীতি মেনে চলা হয়, ব্রিটেনের সরকার তা-ও নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, তারা একটি তহবিল তৈরি করছে, কারখানা পর্যবেক্ষণ করা হবে ও মেরামতির খরচও দেওয়া হবে সেই তহবিল থেকে। যে কারখানার কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার মাপকাঠি মানতে অস্বীকার করবে, সেই কারখানায় কাজ দেবে না তারা। কথাগুলো খুবই ভাল। প্রশ্ন হল, যেখানে খরচ কমানোর জন্যই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে বেছে নিয়েছিল এই সংস্থাগুলি, যাতে সুরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে বিশেষ মাথা না ঘামাতে হয়, সেখানে এই নীতি চালু হলে এই দেশগুলোয় কাজ পাঠানো আর তত লাভজনক থাকবে কি? আর সবসেরা প্রশ্ন: লাভই যদি না হয়, তবে কাজ আসবে কি?
|
• গাজা • খাদ্য-কূটনীতি বস্তুটা আজও চালু হল না এই দুনিয়ায়! এ দিকে তাবৎ কূটনীতিকদের হার মানিয়ে প্যালেস্তাইনের গাজায় যে হু হু করে ঢুকে পড়ছে আমেরিকার কে-এফ-সি ব্র্যান্ডের সুস্বাদু চিকেন, তার বেলা? মার্কিন মাত্রই হারাম, এই যেখানে সব মানুষের মত, মার্কিন সমর্থনে ইজরায়েলি বোমা-মিসাইলে যাদের জীবন-পরিজন প্রতি দিন বিধ্বস্ত, তারাও কে-এফ-সি’র স্বাদে উদ্বেল! |
গাজায় কিছুই বাইরে থেকে আসা-যাওয়া করতে পারে না, তাই মিশর থেকে গাজায় ভূগর্ভ টানেল দিয়ে ব্যাপক হারে চোরাচালান চলে: মাছ-মাংস, মোটরসাইকেল, মায় নববধূ। এখন তালিকায় যুক্ত হয়েছে কে-এফ-সি’র ডাব্বা! মিশর সীমান্ত থেকে গাড়িতে যথাসম্ভব দ্রুত নিয়ে আসা হয় টানেল-এর মুখে, টানেল পেরিয়ে অন্য পারে। ঘণ্টাচারেক লাগে। ভাজাগুলি ঠান্ডা হয়ে যায়? যাক্ না! রুম টেম্পারেচারেও কে-এফ-সি লা-জবাব!
|
সময় হয়ে এল বলে। মাহমুদ আহমদিনেজাদের প্রেসিডেন্ট-ত্বের শেষ কয়েকটি দিন কাটছে এখন। গত আট বছর ধরে ইরানের সবচেয়ে গুরুতর মুখ হয়ে থেকেছেন তিনি। কত বিতর্ক, কত অশান্তি তাঁর নামটিকে ঘিরে। সামনে ১৪ জুন প্রেসিডেন্ট নিবার্চন, কিন্তু এখন বিদায়কালে শোনা যাচ্ছে, ক’দিন পরই তাঁর কপালে জুটতে পারে ৭৪ ঘা বেত, কিংবা ছয় মাসের জেল। কেন? কেননা, নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে! অন্যতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রার্থী এসফানদিয়ার রহিম মাশাই-কে সঙ্গে নিয়ে তিনি পোল রেজিস্ট্রি বুথে ঢুকেছেন: ইরান কেন, অনেক দেশেরই নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী যা একেবারে নিষিদ্ধ কাজ। মাশাই যে আহমদিনেজাদের প্রিয় প্রার্থী, এই তথ্য দেশে কারও অজানা নয়। কিন্তু তাই বলে প্রার্থীর হাত ধরে ঘুরে বেড়াবেন, এও তো বাড়াবাড়ি। সত্যিই কি তা হলে বেত খাবেন বা জেলে ঢুকবেন প্রেসিডেন্ট? দেখা যাক ইরানের আইনের দৌড় কতটা!
এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ছশো ছিয়াশি জন প্রার্থী নির্বাচনী মনোনয়ন-পত্র জমা দিয়েছেন। তার মধ্যে জনা-তিরিশেক মেয়ে। সেই নিয়ে আর এক অশান্তি। ইরানের অন্যতম ধর্মগুরু আয়াতোল্লা ইয়াজদি ঘোষণা করেছেন, ইসলামি ধর্মবিধি অনুযায়ী মহিলারা দেশের প্রেসিডেন্ট পদে বসতে পারেন না। ইয়াজদির কথা অমান্য করার প্রশ্নই ওঠে না, কেননা তিনি দেশের সম্মাননীয় গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য। ফলে ইরান মহিলা প্রেসিডেন্ট পাচ্ছে না, অন্তত অদূর ভবিষ্যতে।
আর এক বিস্ময়: প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আকবর রফসানজানি আবারও প্রার্থী হয়েছেন এ বার। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৭, আট বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি, এখন তাঁর ৭৮ বছর বয়স। তবে রফসানজানি যতই আহমদিনেজাদ-বিরোধিতার কারণে জনপ্রিয়তা কুড়োন, প্রধান ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খামেনেই-এর প্রিয় তিনি একেবারেই নন। খামেনেই এবং তাঁর পরিচালিত গার্ডিয়ান কাউন্সিলের রোষদৃষ্টি পেরিয়ে তিনি যদি-বা নির্বাচনে লড়তে পারেন, জিততে পারবেন না। |