|
|
|
|
বার্তা আরএসএস-কেও |
রাজ্য সফর চালিয়ে যাবেন, বোঝালেন মোদী |
জয়ন্ত ঘোষাল • রায়পুর |
একদিকে রাহুল গাঁধী, অন্য দিকে নরেন্দ্র মোদী। আজ একই সময়ে কেরল ও ছত্তীসগঢ় থেকে লড়াইয়ে নামলেন তাঁরা। কর্নাটকে বিজেপি-র হারের পরেও যে তিনি রাজ্যওয়াড়ি সফর চালিয়ে যাবেন, তাও আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজনীতি বড় বালাই!
পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রির ঝলসানো রোদ রায়পুরে। বারবার রুমালে ঘাম মুছছিলেন মোদী। কিন্তু তাতে তাঁর প্রচারযন্ত্রের দক্ষতা একটুও কমেনি।
ঠিক যে সময় তিনি রায়পুরে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখনই দক্ষিণের প্রত্যন্ত রাজ্য কেরলে কংগ্রেস কী ভাবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে, সে কথা বলছিলেন রাহুল গাঁধী।
রাহুল কী বলছেন তা নিয়ে খোঁজখবর রাখছিলেন মোদীর জনসংযোগ কর্তারা। মোদীকে চিরকুট মারফত তা জানানোও হচ্ছিল। রাহুলের বক্তব্য দেখে নিয়েই পাল্টা আক্রমণে নামেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। রাহুলের নাম না করেই। তাঁর প্রশ্ন, “কংগ্রেস পঞ্চাশ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। তা হলে দেশে এত নিরক্ষর মানুষ কেন?” মোদীর দাবি, কেরলে সমাজকর্মী নারায়ণ গুরুর শিক্ষা প্রসারের আন্দোলনের জন্যই শিক্ষার বিস্তার হয়েছে। |
|
জনসভায় মোদী। রাজনন্দগাঁওয়ে। ছবি: পিটিআই |
নভেম্বরে নির্বাচন ছত্তীসগঢ়ে। মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহকে ইতিমধ্যেই বেগ দিতে শুরু করেছেন কংগ্রেসের অজিত জোগী। তাই আসরে নেমে পড়েছেন রমন। ১০ দিন আগে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা থেকে শুরু করেছেন বিকাশ যাত্রা। উন্নয়নই মূল মন্ত্র তাঁর। পাল্টা পরিবর্তন যাত্রা করছে কংগ্রেস। স্পষ্টতই নিজের প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন রমন। আবার রমনকে নিজের রাজনীতির শরিক করে কেন্দ্রীয় সরকার তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন মোদী। সেই সঙ্গে বার্তা দিতে চেয়েছেন সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্বকে। যে রাজনন্দগাঁও এলাকায় আজ সভা করলেন মোদী, তা আরএসএস-এর সদর কার্যালয় নাগপুর থেকে মাত্র আড়াইশো কিলোমিটার দূরে।
রমনের জেলাওয়াড়ি বিকাশ যাত্রার সমাপ্তি সভায় আসবেন রাজনাথ সিংহ। কিন্তু আজ জনসভায় নরেন্দ্র মোদী আর রমন সিংহ ছাড়া আর কোনও ব্যক্তির ছবি ছিল না। গোটা শহর জুড়ে ছবিতেও কেবল রমন আর মোদীই। বিজেপি-র এক রাজ্য নেতার ভাষায় “এটা হল মোদী আর রমনের কম্বো প্যাকেজ!”
নরেন্দ্র মোদী আজ জনসভায় নাটকীয় ভঙ্গিতে বলেন, “গোটা দেশের যা পরিস্থিতি তাতে মনমোহন সরকারের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস এবং আশঙ্কা বেড়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে। তার জন্য আছে দু’টি জড়িবুটি! একটি হল বিকাশ অন্যটি হল ভরসা।”
মোদীর বক্তব্য, “ক্ষমতায় আসার আগে কংগ্রেস বলেছিল ১০০ দিনের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি আটকে দেবে। পঞ্চাশ বছর শাসন করেও মূল্যবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি দমনে কংগ্রেস কিছু করতে পেরেছে?” তাঁর কথায়, “চল্লিশ বছর আগে কংগ্রেস বলেছিল গরিবি হটাও। দেশ থেকে গরিবি গিয়েছে? তার বদলে লুঠ চলছে দিল্লিতে। লোকে বলছে কয়লা রাখার জন্য ব্যাঙ্কে লকার চাওয়া হচ্ছে! কেননা কয়লাও চুরি হচ্ছে!” মোদীর দাবি, বিজেপি ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেনি।
আর চুরি বা লুঠ করেনি। এখন তাই বিজেপিকে দিল্লিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
বক্তৃতায় লালকৃষ্ণ আডবাণীর প্রসঙ্গ না তুললেও অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদী। বলেন “বাজপেয়ীর সময়েই ছত্তীসগঢ়ের জন্ম হয়েছিল। এখন সেই বাজপেয়ীর কথা মনে রেখে আমাদের চাই বিকাশ এবং বিকাশ।”
সুকৌশলে মোদী এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে পেরেছেন। রাজ্যওয়াড়ি সফর থেকে যে তিনি বিরত হচ্ছেন না তা এখন স্পষ্ট। বরং জনস্রোত ও রমন সিংহের সমর্থনকে মূলধন করে তিনি আরএসএস ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর চাপ তৈরি করলেন আজ।
রাহুলকে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেনি। মোদীকেও করেনি বিজেপি। কিন্তু আজ এটা স্পষ্ট হয়ে গেল, ঘোষণা হোক বা না হোক, এ বার লড়াই মোদী বনাম রাহুলই। |
|
|
|
|
|