বিপদ সঙ্কেত দিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করলেও ভাঙাচোরা অবস্থায় বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কলকাতার পুরনো বাড়িগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুরসভা। কলকাতা পুরসভার হিসেব অনুযায়ী মহানগরীতে বিপজ্জনক ভাবে ভেঙে পড়া পুরনো বাড়ির সংখ্যা এই মুহূর্তে ২৭৪৭। পুরসভা চিহ্নিত বিপজ্জনক বাড়িগুলির বেশির ভাগই রয়েছে উত্তর এবং মধ্য কলকাতার ২, ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর বরো এলাকায়। পুর-বিল্ডিং বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, পুর-তালিকাভুক্ত বিপজ্জনক বাড়ির অংশ ভেঙে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে মাঝেমধ্যেই। কিন্তু ওই বাড়িগুলি ভেঙে ফেলার আইনি ক্ষমতা পুরসভার নেই। বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে ফেলা কিংবা সংস্কারের প্রস্তাব জানিয়ে বাড়ির মালিককে শুধু নোটিসই দিতে পারেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা চিহ্নিত শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলিতে পরের পর দুর্ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুর-কর্তৃপক্ষও। পুরসভা সূত্রের খবর, ওয়েলিংটন স্কোয়ার এবং সুবোধ মল্লিক পার্ক সংলগ্ন এলাকা-সহ ছয় নম্বর বরো এলাকায় মাস খানেকের মধ্যে পুর-তালিকাভুক্ত বিপজ্জনক বাড়ির অংশ ভেঙে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বর্ষা আসন্ন। জল-ঝড়ের দিনগুলিতে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। এই ব্যপারে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ডিজি অনিন্দ্য কারফর্মা বলেন, “পুরসভা চিহ্নিত বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দুর্ঘটনা হামেশাই ঘটছে। কিন্তু ওই বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে ফেলার মতো কোনও আইনি ক্ষমতা পুরসভার হাতে না-থাকায় করার কিছু নেই।” |
পুর-বিল্ডিং বিভাগের কর্তারা স্পষ্টই বলছেন, ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত করে পুরসভার পাঠানো নোটিসও তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত অধিকাংশ বাড়িতে রয়েছে একাধিক ভাড়াটে পরিবার। বাড়ির মালিকপক্ষ তাদের পুরনো ভাঙাচোরা বাড়ি সংস্কার করতে চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে বাড়ি খালি করার প্রশ্নে ভাড়াটের তরফে আপত্তি উঠছে। ঝুলে থাকছে কাজ। এই ব্যাপারে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “বিপজ্জনক ভাবে ভেঙে পড়া পুরনো বাড়ির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুর-আইনের রদবদল করার প্রস্তাব নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছি।” চলতি পুর-আইন অনুযায়ী চিহ্নিত হওয়া বিপজ্জনক বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে ফেলার ক্ষমতা পুরসভার নেই বলে জানিয়েছে বিরোধী পক্ষও। পুরসভার বিরোধী নেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করে বাড়ির মালিককে পুরসভা নোটিস পাঠাতে পারে। ওই বাড়ি ভাঙার ক্ষমতা আইন অনুযায়ী পুরসভার হাতে নেই।”
বিপজ্জনক ভাবে ভেঙে পড়া শহরের পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে পুরসভা কি তবে এখন নিধিরাম সর্দার? এই অপবাদও পুরোপুরি মানতে রাজি নয় পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগ। পুর-বিল্ডিং বিভাগের ডিজি অনিন্দ্যবাবু জানান, পুর-আইনের ৪১১ ধারা মোতাবেক পুরসভা ভাঙাচোরা অবস্থায় থাকা পুরনো বাড়িগুলিকে বিপজ্জনক চিহ্নিত করে। নাগরিকদের হুঁশিয়ার করতে ওই বাড়ির দেওয়ালে ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ লেখা বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। একই সঙ্গে পুর-আইনের ৪১১ (১) ধারায় ওই বাড়ি মেরামত কিংবা ভেঙে ফেলার জন্য বাড়ির মালিককে নোটিসও দেওয়া হয়। নোটিসের প্রতিলিপি দেওয়া হয় ওই বাড়ির ভাড়াটে পরিবারকেও। পাশাপাশি, পুর-আইনের ৪১১(২) ধারায় বিপজ্জনক বাড়ি খালি করার নোটিসও দেওয়া হয় বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটেদের। এতেও কাজ না হলে পুর-আদালতে মামলা করতে পারে পুরসভা। পুর-আইন অনুযায়ী ওই সব ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিপজ্জনক বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার আইনি ক্ষমতা পুরসভার নেই।
অনিন্দ্যবাবু আরও জানান, ফুটপাথের উপরে থাকা বাড়ির গাড়ি বারান্দা-সহ কার্নিশ ইত্যাদি যদি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, তবে পুরসভা চরম ব্যবস্থা নিতে পারে। পুর-আইন অনুযায়ী বাড়ির ওই অংশ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা পুরসভার হাতে আছে। তিনি জানিয়েছেন, পুর-আইনের ৪১১(৪) ধারায় এমন ধরনের বাড়ি ভাঙার অনুমতি রয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা সে রকম বাড়ির অংশ গত ক’মাসে বেশ কয়েক জায়গায় ভাঙাও হয়েছে বলে জানান তিনি। |