টুকলিতে বাধা দিয়ে পরীক্ষার হলেই ঘুসি জুটল শিক্ষকের। কেবল তা-ই নয়, তার পরেও নানা রকম হুমকি শুনতে হচ্ছে তাঁকে। ভীত শিক্ষককে নিজের আস্তানা ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে। তার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ভাড়া বাড়িতে না ফিরে আপাতত কলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন তিনি।
ঘটনাস্থল, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। গত বুধবার সেখানে পরীক্ষা চলার সময় এক ছাত্রীকে নকল করায় বাধা দেন সংস্কৃত বিভাগের ওই শিক্ষক। তার জেরেই তাঁকে ওই ছাত্রীর বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়েরই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর এক নেতা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ। ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা শাখার শিক্ষকেরা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে কর্মবিরতি করবেন বলেও তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষক-নিগ্রহের প্রতিবাদে কাল, সোমবার ক্যাম্পাসে মৌনী মিছিল করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শনিবার জানান, বিষয়টি তাঁর কানে পৌঁছয়নি। তবে তাঁর আশ্বাস, “খোঁজ নিয়ে দেখছি। দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রবীন্দ্রভারতীর টিএমসিপি নেতারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০১১-র জুলাইয়ে রবীন্দ্রভারতীর বিটি রোড ক্যাম্পাসে এক দল ছাত্রের গোলমালে প্রাণ হারিয়েছিলেন এক শিক্ষাকর্মী। অনলাইন ছাত্রভর্তির প্রতিবাদে গত বছর জুন মাসে ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালায় একদল ছাত্র। বছর ঘুরেই আবার নতুন করে গোলমাল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত বুধবার বিএ পার্ট টু পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েন সংস্কৃত বিভাগের এক ছাত্রী। কর্তব্যরত শিক্ষক প্রদীপ দাস বাধা দেন। ছাত্রীটি মোবাইলে বাংলা স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রকে ডেকে পাঠান।
অভিযোগ, ছাত্রীর ফোন পেয়ে উপস্থিত হন ওই ছাত্র, যিনি ক্যাম্পাসে টিএমসিপি-র অন্যতম নেতা। তিনি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি-র ইউনিট সভাপতি ও পর্যবেক্ষক বিশ্বজিৎ দে (বাপ্পা) প্রদীপবাবুকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বিভাগের প্রবীণ শিক্ষকেরা সেখানে হাজির হলে তখনকার মতো বিষয়টি মিটে যায়।
কিন্তু ঘটনা সেখানেই থেমে থাকে না। অভিযোগ, প্রদীপবাবু যাতে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মুখ না খোলেন, সে জন্য তাঁকে হুমকি দিচ্ছে টিএমসিপি-র একটি দল। যার জেরে তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রদীপবাবু ক্যাম্পাসের কাছে একাই ভাড়া থাকেন। শুক্রবার রাতে তিনি আশ্রয় নেন রেজিস্ট্রার সুব্রত ঘোষের বাড়িতে, তার পরে উঠেছেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। যদিও সুব্রতবাবুর বক্তব্য, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলেই প্রদীপবাবুকে তিনি নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী এখন দিল্লিতে। তিনি না ফিরলে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানান রেজিস্ট্রার। প্রদীপবাবু অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
শুক্রবার কলা শাখার শিক্ষক সংসদের বৈঠকের পরে শিক্ষকেরা একটি স্মারকলিপি জমা দেন কর্তৃপক্ষকে। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষক নিগ্রহে অভিযুক্ত পড়ুয়াদের কড়া শাস্তি চাই। পরীক্ষা চলাকালীন ক্লাসের বাইরে ও করিডরে বহিরাগতদের আসা-যাওয়া ঠেকাতে কোলাপসিবল গেট বন্ধ রাখার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। নিরাপত্তার উপযুক্ত বন্দোবস্ত না হলে তাঁদের পক্ষে পরীক্ষার কর্তব্য পালন অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে বলে বক্তব্য শিক্ষকদের। উপাচার্য ফিরবেন ২৫ মে। দিল্লি থেকে টেলিফোনে শনিবার তিনি বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। ফিরে সব দেখে ব্যবস্থা নেব।” টিএমসিপি-র তরফে তাদের ইউনিট সভাপতি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কোনও গোলমাল পাকানোর খবর আমার কাছে নেই। টিএমসিপি-র কেউ এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকতেই পারে না।” |