অর্থলগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্ত রোখার পথ খোঁজাই ছিল বৈঠকের মূল বিষয়। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে কী ভাবে সমন্বয় রাখবে রাজ্য পুলিশ, সেটাই ছিল মূল আলোচ্য। কিন্তু সারদা কাণ্ডের দায় নিয়ে পুলিশ ও আয়কর কর্তাদের বাদানুবাদেই শুক্রবার ভবানী ভবনের ওই বৈঠক সাঙ্গ হল।
আয়কর দফতর ছাড়াও ওই বৈঠকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ও কেন্দ্রের কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা ছিলেন। সিআইডি-র এক কর্তা অবশ্য শনিবার দাবি করেন, “বৈঠকে বাদানুবাদ হয়নি। সব দফতর যাতে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, সে জন্যই বৈঠকে বসা হয়েছিল।”
সিআইডি-কর্তা এই দাবি করলেও বৈঠকে যে দু’পক্ষের তর্কাতর্কি তুমুল আকার নেয়, তা কবুল করেছেন সেবি ও আয়কর দফতরের অফিসাররা। সেবি-র অফিসার রাজ্যের একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করার প্রসঙ্গ তুললেও তা মানতে চাননি রাজ্য পুলিশ কর্তারা। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, অভিযোগ দায়েরের কথা তাঁর জানা নেই। সেবির প্রতিনিধি এর পরে চুপ করে যান।
আয়কর দফতরের অভিযোগ, শুরুতেই সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার প্রতারণা বন্ধে তাদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলে রাজ্য পুলিশ। আয়কর অফিসারেরা জানান, আয়কর ফাঁকির বিষয়টি দেখাই তাঁদের দায়িত্ব। প্রতারণার বিষয়টি দেখার কথা পুলিশের। আয়কর দফতরের দাবি, রাজ্যের একাধিক অর্থ লগ্নি সংস্থা যে বিনিয়োগের নামে আদতে প্রতারণাই করছে, দু’বছর ধরে তা রাজ্য পুলিশকে বারবার জানানো হয়েছে। পুলিশ কান দেয়নি। পুলিশ পাল্টা বলে, প্রতারণা বন্ধে আয়কর দফতরও দায় এড়াতে পারে না। তারা অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির অফিসে নিয়মিত তল্লাশি চালালে এতটা বাড়বাড়ন্ত হত না। এই নিয়েই দু’পক্ষে তর্কাতর্কি বেধে যায়।
আয়কর অফিসারদের একাংশ বলছেন, কলকাতায় রিজিওনাল ইকনমিক ইনটেলিজেন্স কাউন্সিল (আরইআইসি) রয়েছে। দু’মাস অন্তর স্ট্র্যান্ড রোডের কাস্টম হাউসে আরইআইসি-র বৈঠক হয়। সেখানে হাজির থাকেন কেন্দ্রীয় শুল্ক, অন্তঃশুল্ক, সিবিআই, সেবি, ইডি, ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স এবং আয়কর দফতরের প্রতিনিধিরা। থাকেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের অফিসারেরাও। ভবানী ভবনের বৈঠকে আয়কর কর্তারা বলেন, ২০১০-এর জুলাই থেকে আরইআইসি-র প্রায় সব ক’টি বৈঠকে তাঁরা সারদা-র মতো অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ে সরব হয়েছেন। বিভিন্ন সংস্থা কী ভাবে পন্জি স্কিমে গরিব মানুষের টাকা তুলে নয়ছয় করছে, তা-ও তাঁরা জানিয়েছেন। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই বিপর্যয় নেমে আসত না। |