আগামী ঋণনীতিতে রেপো রেট কমানো হলেও ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে সুদের হার কমানো কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী। তাঁর মতে, বরং নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর) কমানো হলে অনেক ব্যাঙ্কই সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটতে পারে।
শনিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স আয়োজিত ব্যাঙ্কশিল্প নিয়ে এক আলোচনাসভায় যোগ দিতে এসে প্রতীপবাবু বলেন, “সিআরআর কমানো সম্ভব না-হলেও অন্তত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সিআরআর
|
প্রতীপ চৌধুরী। |
খাতে যে-টাকা জমা আছে, তার উপর যদি শীর্ষ বাঙ্ক সুদ দেওয়া চালু করে, তা হলেও বিভিন্ন ব্যাঙ্কের পক্ষে ঋণে সুদের হার কমানো সম্ভব হতে পারে।” সিআরআর খাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে শুধু স্টেট ব্যাঙ্কেরই ৬০ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে। প্রতীপবাবু বলেন, “ওই টাকার উপর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি কম করেও ৬ শতাংশ হারে সুদ দেয়, তা হলে আমাদের আয় বাড়বে বছরে ৩৬০০ কোটি টাকা। এই টাকা পেলে আমরা ঋণের উপর ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাতে পারব।”
প্রতীপবাবুর বক্তব্য, রেপো রেট বাড়ানো হলেও তার প্রভাব খুব সামান্যই। উল্লেখ্য, রেপো রেটেই বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে স্বল্প মেয়াদি ঋণ নেয়। স্টেট ব্যাঙ্কের রেপো খাতে ঋণ নেওয়া আছে ২০ হাজার কোটি টাকা। ২৫ বা ৫০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানো হলেও ব্যাঙ্কের হাতে যে-টাকা আসবে, তার ভিত্তিতে ঋণের উপর সুদের হার কমানোর সুযোগ খুব কমই থাকবে।
এ দিকে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কবল থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে তাদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা বাড়ানোর ব্যপারে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রতীপ চৌধুরী, ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের সিএমডি দেব্রবত সরকার এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের সিএমডি এম ভি তাঙ্কসালে।
ওই আলোচনাসভায় প্রতীপবাবু এ কথাও বলেন, “হলমার্ক করা গয়নায় ভেজাল নেই বলে যে-ধরনের বিশ্বাস প্রচারমাধ্যম সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি করেছে, সেই ধরনের প্রচারই ওই সব সংস্থার ব্যাপারে শুরু করা প্রয়োজন। এটা জানানো জরুরি যে, কোনও সংস্থায় লগ্নি করার আগে যেন সাধারণ মানুষ দেখে নেন, সেখানে রাখা আমানত ডিপজিট ইনসিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন দ্বারা বিমাকৃত কি না। উল্লেখ্য, ব্যাঙ্কের আমানত ওই কর্তৃপক্ষের কাছে বিমা করা থাকে। এর ফলে কোনও ব্যাঙ্ক উঠে গেলেও জমা রাখা ১ লক্ষ পর্যন্ত টাকা ওই বিমা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই পেয়ে যাবেন আমানতকারী। কিন্তু বেআইনি লগ্নি সংস্থাগুলি তাদের আমানত বিমা করায় না।
দেবব্রতবাবু মনে করেন, “বিশেষ করে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রামের মানুষই। তাই আমার মনে হয়, পঞ্চায়েত স্তর থেকেই এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে ভাল ফল মিলতে পারে।”
এ দিন প্রতীপবাবু আরও অভিযোগ করেন, বর্তমান আইনি ব্যবস্থা এমনই, যাতে ব্যাঙ্কগুলির তুলনায় ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থা সহজ ভাবে ব্যবসা করতে পারে। |