|
|
|
|
পছন্দের বই পাচ্ছেন না পাঠক |
বইয়ের গাড়ি গ্যারাজে পড়ে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
বিভিন্ন পাঠকের বিভিন্ন চাহিদা। কেউ গল্পের বই চান তো কেউ ভ্রমণকাহিনী। গ্রামাঞ্চল বা মফস্সলের ছোট ছোট গ্রন্থাগারে এত স্বাদের বই মেলা ভার। তাই জেলা গ্রন্থাগার থেকে ছোট-ছোট গ্রন্থাগারগুলিতে পাঠকের চাহিদা মতো বই পৌঁছে দিতে এক দশক আগে ‘মোবাইল লাইব্রেরি’ চালু হয়েছিল মেদিনীপুরে। জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও বছর পাঁচেক আগে এই পরিষেবা আচমকাই বন্ধ হয়ে যায়। কেউ বলেন গাড়িটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় পর থেকেই বন্ধ এই পরিষেবা, কেউ বলেন কর্মী সঙ্কট। কেউ আবার জেলা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেন। কারণ যা-ই হোক না কেন, এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মহা সমস্যায় পড়েছে গ্রাম এবং শহরের ছোট ছোট গ্রন্থাগারগুলি। জেলা গ্রন্থাগারে বহু বার দরবার করেও এই পরিষেবা চালু করাতে পারেনি তারা। যে গাড়িতে করে বই নিয়ে যাওয়া হয়, সেটি এখন পুরোপুরি অচল। গ্যারাজের এক কোণে পড়ে অবহেলাভরে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সব মিলিয়ে ১৫৮টি গ্রন্থাগার রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ গ্রন্থাগার ১৪২টি, শহরের গ্রন্থাগার ১৫টি এবং জেলা গ্রন্থাগার একটি। জেলা গ্রন্থাগার রয়েছে মেদিনীপুর শহরেই। পাশাপাশি, জেলায় ২৮টি ‘কমিউনিটি লাইব্রেরি কাম ইনফরমেশন সেন্টার’ রয়েছে। এক সময় জেলা পরিষদের উদ্যোগে ব্লক স্তরে এই কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। এখন অবশ্য অধিকাংশই পরিকাঠামোগত সমস্যায় ধুঁকছে। অন্য দিকে, গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলিও নানা সমস্যায় জর্জরিত। কোনওটার ক্ষেত্রে সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। বইপত্র ভেজে। আবার কোনওটার ক্ষেত্রে দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। পাঠাগারের মধ্যেই তৈরি হয়েছে উইয়ের ঢিবি।
এই সমস্ত সমস্যার সঙ্গেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে অর্থসঙ্কট। বই কেনার জন্য রাজ্য সরকারের গ্রন্থাগার দফতর থেকে প্রতিটি গ্রন্থাগারই বছরে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পায়। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলোর জন্য বরাদ্দ হয় ১৯ হাজার ৫০০ টাকা, শহরের গ্রন্থাগারগুলোর জন্য ৩৮ হাজার, জেলা গ্রন্থাগারের জন্য ৬৫ হাজার। এই টাকায় সব শ্রেণির পাঠকদের পছন্দ মতো বই কেনা সম্ভব নয়।
মেদিনীপুরে ‘মোবাইল লাইব্রেরি’ ছিল যখন, বইয়ের আদানপ্রদানে সেই সমস্যা অনেকটাই মেটানো গিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে কোন এলাকার গ্রন্থাগারে কী কী বইয়ের চাহিদা রয়েছে, তা আগে থেকে জেনে নিতেন জেলা গ্রন্থাগারের কর্মীরা। পরে ওই গ্রামীণ বা শহুরে গ্রন্থাগারে গাড়ি করে সেই সব বই পৌঁছে দেওয়া হত। একটা নির্দিষ্ট সময় পর ফের সেই গ্রন্থাগারে গাড়ি পৌঁছত। তখন আগের দেওয়া বই ফেরত নিয়ে নতুন বই দেওয়া হত।
২০০৮ সালে এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রাম এবং শহরের গ্রন্থাগারগুলো সমস্যায় পড়ে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের নয়াগ্রামে রয়েছে মুকুল সঙ্ঘ গ্রামীণ পাঠাগার। স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে ১৯৬১ সালে এই গ্রামীণ গ্রন্থাগার গড়ে ওঠে। শুরুতে এই গ্রন্থাগারকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের উৎসাহের অন্ত ছিল না। আশাপাশের গ্রামের মানুষরাও এখানে আসতেন। বই পড়তেন। সময়ের সঙ্গে সেই উৎসাহে টান পড়লেও পাঠক সংখ্যা নেহাত কম নয়। গ্রন্থাগারের সম্পাদক টোটন কর বলছিলেন, “বিভিন্ন বয়সের মানুষ এখানে আসেন। পছন্দের বই চান। সব সময় তা দেওয়া সম্ভব হয় না। জেলা গ্রন্থাগার থেকে বই এলে এই সমস্যা হত না। ওই পরিষেবা ফের চালু করা দরকার।”
সমস্যার কথা মানছেন জেলা গ্রন্থাগারের যুগ্ম-সম্পাদক বিমান গুপ্তও। তাঁর কথায়, “ওই পরিষেবার জন্য যে গাড়িটি ব্যবহার হত, সেটি দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। তা ছাড়া, গ্রন্থাগারে কর্মী সঙ্কটও রয়েছে।” তাঁর আশ্বাস, “আপাতত একটি গাড়ি ভাড়া নিয়েই ওই পরিষেবা চালু করা হবে।” ‘মোবাইল লাইব্রেরি’ চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করার কথাও ভাবছেন গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। জেলা গ্রন্থাগারের যুগ্ম সম্পাদকের আশ্বাস, “চলতি মাসের মধ্যে ওই পরিষেবা চালু হবে।” |
|
|
|
|
|