১৩ মাসের ছেলের জন্য চামড়ার খোঁজে মা
সএসকেএমের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক মা। চিকিৎসক, নার্সদের ডেকে ডেকে জিজ্ঞাসা করছেন, সদ্য কেউ মারা গিয়েছেন কি না। মৃতের পরিবারের কাছে জানতে চাইছেন, তাঁরা কি চামড়া দান করতে রাজি আছেন? পূর্ব মেদিনীপুরের রামভদ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা সন্ধ্যা মাইতির ১৩ মাসের ছেলেকে বাঁচাতে অবিলম্বে চামড়া দরকার। গত ২২ এপ্রিল ঘটা করে এসএসকেএম হাসপাতালে পূর্বাঞ্চলের একমাত্র চামড়া ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে। কিন্তু তাতে সন্ধ্যা মাইতির কোনও সুবিধা হচ্ছে না। কারণ, এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, চামড়া ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার বর্তমানে শূন্য। চামড়া সংগ্রহের পরিকাঠামোও নেই।
সন্ধ্যাদেবীর ছেলে মহাদেব ১৬ দিন আগে খেলতে খেলতে উনুনের মধ্যে পড়ে যায়। কোমর থেকে দু’পায়ের পাতা পর্যন্ত পুড়ে হাড় বেরিয়ে গিয়েছে শিশুটির। অবিলম্বে চামড়া প্রতিস্থাপন দরকার। সন্ধ্যা এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসএসকেএমে বিভিন্ন বিভাগের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। চামড়ার খোঁজে।

মহাদেবকে কোলে নিয়ে সন্ধ্যা মাইতি।—নিজস্ব চিত্র
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত মাসে চামড়া ব্যাঙ্কে নেতাজিনগরের ফল্গু মজুমদার নামে এক মহিলার চামড়া দান করেছিল তাঁর পরিবার। এ পর্যন্ত ওই একটিই চামড়া জমা পড়ে ব্যাঙ্কে। একটিমাত্র চামড়া সম্বল করে ব্যাঙ্ক চালু করা হল কেন? এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্রের উত্তর, “২০১০ সাল থেকে এই ব্যাঙ্ক চালু করা নিয়ে আমাদের উপরে চাপ ছিল। কিন্তু কিছুতেই চামড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত যখন ২২ এপ্রিল ফল্গুদেবীর চামড়া পাওয়া গেল, আমরা আর দেরি করতে চাইনি।” স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “একটা স্কিন ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে জানি। নিশ্চয়ই তার দরকার ছিল। সেখানে একটা চামড়া আছে না চারটে চামড়া আছে, সেটা আমাদের দেখার দরকার নেই।”
ফল্গুদেবীর ওই চামড়া অবশ্য বসানো হয়েছিল সন্ধ্যা দেবীর ছেলের পায়ে। শিশুটির দেহ ওই চামড়া গ্রহণ করেনি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। লাগানোর দু’দিন পরেই তা উঠে যায়। ফলে পুড়ে যাওয়া পা থেকে ফের দেহের প্লাজমা-প্রোটিন বেরিয়ে যেতে শুরু করে। শিশুটি অত্যন্ত রোগা এবং অসুস্থ এবং তার হাতের নানা অংশও পুড়ে গিয়েছে। ফলে তার নিজের দেহ থেকে চামড়া নেওয়া যাচ্ছে না।
এখন চামড়া মিলবে কোথায়? চামড়া ব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা মানছেন, নতুন চামড়া সংগ্রহের পরিকাঠামো নেই তাঁদের। হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান বিজয় মজুমদার বলেন, “চামড়া সংগ্রহের জন্য অন্তত ২ জন কাউন্সেলর লাগবে। তাঁরা সদ্যমৃত রোগীর আত্মীয়কে বুঝিয়ে চামড়া দানে রাজি করাবেন। সেই কাউন্সেলর এখনও নিয়োগ করেনি স্বাস্থ্য দফতর।” কোনও মৃতের পরিবার নিজে থেকে চামড়া দান করতে রাজি হলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কারণ, মৃতদেহ থেকে চামড়া সংগ্রহ করার জন্য দরকার চিকিৎসক ও নার্স।

একটা স্কিন ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে জানি। সেখানে একটা চামড়া আছে না চারটে চামড়া আছে, সেটা আমাদের দেখার দরকার নেই।
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য,

ব্যাঙ্ক খোলা হলেও সেখানে এই কাজের জন্য আলাদা করে চিকিৎসক-নার্স রাখা হয়নি। বিজয়বাবু বলেন, “প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগেও কোনও অতিরিক্ত চিকিৎসক বা নার্স নেই যাঁরা প্রাত্যহিক কাজ সামলে চামড়া সংগ্রহ করবেন।” এতেও শেষ নয়। চামড়া সংরক্ষণের জন্য দরকার অন্তত দু’জন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য সহায়ক। বিজয়বাবু বলেন, “ওই দু’জন চামড়া জীবাণুমুক্ত করে প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত করবেন।” চামড়া ব্যাঙ্কে এ সব কিছুই নেই।
অ্যানাটমি বিভাগে যে মৃতদেহগুলি দান করা হয়, সেখান থেকে চামড়া সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন হচ্ছে না কেন? অ্যানাটমি-র বিভাগীয় প্রধান রীতা রায় বলেন, “মৃত্যুর ৬ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করতে হয়। সেই সচেতনতা না-থাকায় মৃতদেহ আনতে-আনতেই ৬ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। ফলে মাসে ৪-৫টি মৃতদেহ এলেও চামড়া সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।”
ফলাফল? যন্ত্রণায় গোঙাতে থাকা শিশুকে আঁকড়ে ধরে দিশেহারা মা বলছেন, “আমরা গ্রামের লোক। বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর মতো টাকাপয়সা নেই। কে আমার কথা শুনে চামড়া দিতে চাইবে?”
এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ বলছেন, “চেষ্টা চলছে। আরও কিছু দিন ধৈর্য ধরতে হবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে, সন্ধ্যা চামড়া পাননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.