|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ১... |
|
নতুন চেহারায় ড্যানিয়েলদের ছবি |
ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী |
ড্যানিয়েলস’ ইন্ডিয়া/ ভিউজ ফ্রম দি এইটিন্থ সেঞ্চুরি। নিয়োগী বুকস, ৬০০০.০০ |
বছর চারেক আগে ক্রিস্টিজ-এর নিলামঘরে টমাস ও উইলিয়াম ড্যানিয়েলের ওরিয়েন্টাল সিনারি-র প্রথম সংস্করণের (১৭৯৫-১৮০৮) একটি পূর্ণাঙ্গ কপি এসেছিল। চমৎকার অবস্থায় ১৪৪টি হাতে রঙ করা অ্যাকোয়াটিন্ট (মাপে প্রায় ৩০ x ২২), পুরো টেক্সট, নকশা ইত্যাদি সহ। তিন দশকে নাকি এত ভাল সেট আর আসেনি। এটি শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয় দু’কোটি টাকায়। আর এক বিখ্যাত নিলামঘর, সদবিজ-এ এ বছরের গোড়ায় একটি মোটের উপর ভাল সেট (টেক্সট ছাড়া) বিক্রি হল পৌনে তিন কোটি টাকায়। এমনকী এর অর্ধেকের থেকেও ছোট মাপের ১৮১৬-র কোয়ার্টো সংস্করণের দামই দু’বছর আগে ক্রিস্টিজ-এ উঠেছিল সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা। ফলে দিল্লির জাতীয় লেখ্যাগারের সংগ্রহ থেকে খুব ভাল মুদ্রণে ওরিয়েন্টাল সিনারি-র নির্বাচিত ৯৪টি ছবির সংগ্রহ (ছবির মাপ ১৩ x ৯.৫) প্রকাশিত হওয়া নিঃসন্দেহে সুখবর।
ড্যানিয়েল খুড়ো-ভাইপো লন্ডন থেকে রওনা হয়ে কলকাতায় পা রাখেন ১৭৮৬-র বসন্তে। ১৭৮০-তে আসেন উইলিয়াম হজেস। হজেস-এর আগে টিলি কেট্ল-এর মতো পোর্ট্রেট শিল্পী এলেও কোনও পেশাদার ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী এ দেশে এসে ছবি আঁকেননি। ড্যানিয়েলদের কাছে হজেস-এর ছবি ছিল ‘ইম্প্রেশনিস্টিক’। হজেস-এর আঁকা ছবি সামনে রেখে আগ্রা দুর্গ দেখে উইলিয়াম তাঁর জার্নাল-এ লিখছেন, এ ছবিটিও, ‘লাইক অল হিজ আদার্স ইজ এক্সিডিংলি ফল্টি’। ড্যানিয়েলরা অনেক ‘নিখুঁত’ ছবি এঁকেছেন, অবশ্য শিল্পরূপ দিতে গিয়ে কিছু পরিবর্তন যে করেননি এমন নয়। দূরের স্থাপত্যকে স্পষ্ট করে দেখানো, ছবির দৃষ্টিকোণে অন্তর্ভুক্ত করতে বিষয়বস্তুর সামান্য অদলবদল, এ সব করেছেন। টেলিস্কোপ আর ক্যামেরা অবস্কিউরা কাজে লাগিয়ে প্রায় ‘ফোটোগ্রাফিক সেটিং’ তৈরিতে তাঁরা যে কতটা সাফল্য দেখিয়েছেন, তা দুশো বছর পরের ইতালীয় আলোকচিত্রী আন্তোনিয়ো মার্তিনেল্লি-র কাজে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সাড়ে সাত বছর ধরে ড্যানিয়েলরা যে সব জায়গায় ঘুরেছেন, মার্তিনেল্লি ১৯৯৫-’৯৭ এই দু’বছরে তার মধ্যে ৬৬টি জায়গায় পৌঁছে একই রকম দৃষ্টিকোণ থেকে ছবি তোলেন। সে সব ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে, বই ছাপা হয়েছে। ড্যানিয়েলরা কী অবস্থায় ছবি এঁকেছেন, তা মার্তিনেল্লি-র অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা অনুমান করা যায়। |
|
১৭৯৪-এ লন্ডনে ফিরে ড্যানিয়েলরা যে কাজে হাত দেন, ভারতীয় স্থাপত্য ও নিসর্গকে ইয়োরোপে পরিচিত করতে তত বড় উদ্যোগ আগেপরে আর হয়নি। ১৭৯৫ থেকে তেরো বছর ধরে তাঁরা প্রকাশ করেন ওরিয়েন্টালসিনারি। এর আগে কলকাতায় ছাপা হয়েছিল টমাসের ১২টি অ্যাকোয়াটিন্টের সংগ্রহ ভিউজ অব ক্যালকাটা (১৭৮৬-’৮৮)। এ সম্পর্কে বন্ধু ওজিয়াস হামফ্রিকে এক চিঠিতে টমাস লিখেছিলেন, ‘আই ওয়াজ অবলাইজড টু স্ট্যান্ড পেন্টার, এনগ্রেভার, কপার স্মিথ, প্রিন্টার, অ্যান্ড প্রিন্টার্স ডেভিল মাইসেল্ফ...।’ ওরিয়েন্টাল সিনারি-র ক্ষেত্রেও প্রায় পুরো কাজটাই তাঁরা নিজেরা করেন। খুড়ো-ভাইপো মিলে শুধু ভারতবিষয়ে অন্তত চার-পাঁচশো তেল রঙের ছবিও করেছিলেন। এ ছাড়াও আছে রেখাচিত্র ও জলরঙের ছবি, যার পুরো হিসেব এখনও তৈরি হয়নি। ১৭২টি অ্যাকোয়াটিন্টের সংগ্রহ যত্নে সম্পাদনা করেছিলেন মিলড্রেড আর্চার (আর্লি ভিউজ অব ইন্ডিয়া, ১৯৮০), আর ১৫১টি তৈলচিত্রের বিবরণ দিয়েছিলেন মরিস শেলিম (ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য ড্যানিয়েলস, ১৯৭৯), ড্যানিয়েল চর্চায় যে দুটি কাজ তিন দশক পেরিয়ে আজও অপরিহার্য।
বিশিষ্ট শিল্প ঐতিহাসিক বি এন গোস্বামীর সুলিখিত ভূমিকা সংবলিত আলোচ্য বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন মুশিরুল হাসান। সম্পাদনার পদ্ধতি নিয়ে কোনও তথ্য সংযোজিত না হলেও বোঝা যায়, জাতীয় লেখ্যাগার সংগ্রহে ওরিয়েন্টাল সিনারি-র প্রথম চারটি খণ্ড আছে, যার প্রতিটির উপ-শিরোনাম ‘টুয়েন্টিফোর ভিউজ ইন হিন্দুস্তান’। এতে মোট ৯৬টি ছবি থাকার কথা, এখানে তার মধ্যে ৯৪টি মুদ্রিত। তাজমহলের বিখ্যাত ছবিটি, এবং শ্রীনগরের একটি ছবি এই বইয়ে নেই। বিন্যাসে চেষ্টা করা হয়েছে মোটামুটি একই জায়গার ছবি এক সঙ্গে দিতে, যা মূল বইয়ে ছিল না। সব ছবিতেই শুধু মূল বইয়ে দেওয়া সংক্ষিপ্ত পরিচিতিটুকু রয়েছে, ড্যানিয়েলদের ভুলত্রুটি সহ। আফশোস এখানেই, আর্চার বা শেলিমের কাজের এত দিন পরেও এত ভাল করে ছাপা বইয়ে ছবির সঙ্গে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম তথ্য, যেমন ওরিয়েন্টাল সিনারি-র প্লেট নম্বর, স্থানটির সঠিক অবস্থান ও পরিচয়, ইত্যাদি থাকবে না কেন? মূল সংস্করণের সুদুর্লভ টেক্সট খণ্ডের তথ্য বা উইলিয়ামের জার্নাল-এর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। সঙ্গের ছবিতে যেমন কলকাতার চিৎপুর রোডে গোবিন্দরাম মিত্রের ‘ব্ল্যাক প্যাগোডা’টি দেখা যাচ্ছে— এখানে কি জানানো দরকার ছিল না যে টমাস ড্যানিয়েল আগেই তাঁর ভিউজ অব ক্যালকাটা-য় এর অন্য একটি ছবি এঁকেছিলেন, এবং কলকাতায় আসা বিদেশি শিল্পীদের অনেকেই উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও এর ধ্বংসাবশেষের ছবি এঁকেছেন— এতটাই ‘আইকনিক’ ছিল এর উপস্থিতি! |
|
|
|
|
|