নাচতে যাওয়া হল না। তার আগেই রাস্তায় পিকআপ ভ্যান উল্টে দুর্ঘটনায় পড়লেন ছৌনৃত্য শিল্পীরা। এক মাস আগের স্মৃতিকে উসকে দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ফের বরাবাজারের এক ছৌনৃত্য শিল্পীর মৃত্যু হল। আহত হলেন ২৭ জন। বরাবাজার-মানবাজার রাস্তায়, ডাহা গ্রামের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। সেখানেই মারা যান নগেন্দ্রনাথ মাহাতো (৬৫)। গুরুতর আহত ১৯ জনকে রাতেই বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৭ জন।
গত ২১ এপ্রিল ভোররাতে কাঁকসায় অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে বরাবাজারের লটপদা গ্রামের ছৌশিল্পীদের নিয়ে একটি পিকআপ ভ্যান বড়জোড়ার কাছে উল্টে যায়। মৃত্যু হয় সাত ছৌশিল্পীর। জখম হন বেশ কয়েকজন। |
বৃহস্পতিবার বরাবাজার থানারই কায়পাড়া গ্রামের ‘নবযুবক ছৌনৃত্য’ পার্টির সদস্যেরা বাঁকুড়ার আমগোড়া গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। দলের ম্যানেজার মথনচন্দ্র মাহাতো জানান, প্রায় দু’দশক ধতোঁরা বিভিন্ন জায়গায় নাচ দেখিয়ে আসছেন। লাগুডি, কায়পাড়া, উলদা প্রভৃতি কয়েকটি গ্রামের শিল্পীদের নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত আটটায় তাঁরা ৩১ জন রওনা দেন। তাঁর কথায়, “গাড়ি বেশ জোরেই যাচ্ছিল। চালক জিতেন মাহাতোকে বলেছিলাম, জোরে চালিয়ে কাজ নেই। হাতে সময় রয়েছে। কিন্তু তিনি কান দেননি। ডাহা গ্রামের কাছে একটি বাঁকের মুখে তিন পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি জোরে ব্রেক কসেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি পাশের জমিতে নেমে উল্টে গেল।”
শুক্রবার দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা থেকে প্রায় ২০ ফুট নীচে গাড়িটা পড়ে রয়েছে। পিকআপ ভ্যানের ডালায় বাঁশের মাচা বেঁধে আরও কিছু শিল্পী বসেছিলেন। কাশিডি গ্রামের মদন প্রামানিক, ডাহা গ্রামের গিয়াসুদ্দিন আনসারিরা বলেন, মাচার উপরে থাকা শিল্পীরাই বেশি আঘাত পেয়েছেন। স্থানীয় দুলালডি গ্রামে মেলা চলছিল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেখান থেকে সবাই দৌড়ে এসে উদ্ধারে হাত লাগাই।” মথনবাবু বলেন, “নগেনবাবুই দলের বয়স্ক সদস্য ছিলেন। আগে নাচতেন, পরে বয়স হওয়ায় পোশাক বেঁধে দেওয়ার কাজ করতেন।” নগেনবাবুর ছেলে অজিত মাহাতো বলেন, “বাবা দলটাকে ভালবাসতেন। দিনমজুরির ফাঁকে দলের কাজ করে বাবা হাতখরচ বাবদ ১০০-১৫০ পেতেন। এমনটা ঘটবে ভাবিনি।” নগেন্দ্রনাথবাবুর স্ত্রী কনকলতাদেবী বলেন, “ওঁকে বলেছিলাম বয়স হয়েছে, আর বাইরে যেও না। আমার কথা শুনল না। ছৌনাচ অন্তপ্রাণ মানুষ নাচতে গিয়েই চলে গেলেন।” রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে দুর্ঘটনার খবর নিয়েছেন। তিনি মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।” |