শুক্রবার বিকেলে ট্রেভর মর্গ্যান কল্যাণী স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন না। থাকলে দেখতে পেতেন, কী ভাবে তাঁর হাতের মুঠোয় কলকাতা লিগের ট্রফিটা এসেও বেরিয়ে গেল! মাত্র দশ মিনিটের নাটকীয় সিদ্ধান্তের জেরে কলকাতা লিগের ভাগ্য ঝুলে থাকল ডার্বির ফলাফলের উপর।
কলকাতা লিগের লড়াইয়ে টিকে থাকতে শুক্রবার প্রয়াগ ইউনাইটেডকে হারাতেই হত মোহনবাগানকে। আর কী হল সেখানে? ম্যাচ ৮০ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র থাকার পরে খারাপ আলোর জন্য বাতিল হয়ে গেল। সত্যিই কি ম্যাচ বাতিল করার মতো পরিস্থিতি ছিল? ম্যাচ কমিশনার সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের দাবি, “দু’টো দলই আলো কমে আসার জন্য ম্যাচ বাতিলের আবেদন করেছিল।” মোহনবাগান কর্তারা তা মেনে নিলেও, ইউনাইটেড কর্তারা ম্যাচ কমিশনারকে একহাত নিতে ছাড়লেন না। অন্যতম শীর্ষকর্তা নবাব ভট্টাচার্য বললেন, “উনি এক জন মেরুদণ্ডহীন ম্যাচ কমিশনার। মিথ্যাবাদী। ওঁর কোনও ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল। না হলে আলোর অজুহাত দেখিয়ে ম্যাচ বাতিল করতেন না।” |
সব অর্থেই হতাশার দিন। শুক্রবার কল্যাণীতে আহত ওডাফা। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য |
দেখতে গেলে অবশ্য আলোর অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না যে, তাতে ফুটবল খেলা সম্ভব নয়। হয়তো সে কারণেই আলোর ঢাল নেওয়া মোহনাবাগানের ভিতরেও অসঙ্গতি। ওডাফা বললেন, “কোচ বললেন এত কম আলোয় খেলা যাবে না।” কোচ করিমের দাবি, “ফুটবলারদের বল দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল। ওরা বলল খেলতে পারবে না।” ওডাফা-করিমের দু’রকম বক্তব্য কিন্তু উসকে দিচ্ছে বাগানের গোপন কৌশলের গন্ধ। তবে কৌশল হোক কিংবা মাস্টার স্ট্রোক, ম্যাচ বাতিল হওয়ায় আসল লাভ হল আইএফএ-র। এখন ডার্বি ম্যাচে লোক টানা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না তাদের।
কিন্তু কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ। ম্যাচ বাতিলের জেরে চরম বিপাকে এখন ইউনাইটেড। কোচ এলকো সাতোরি শুক্রবার রাতেই দেশে ফিরে যাচ্ছেন। র্যান্টি ও বেলো কর্তাদের জানিয়েছেন, এ মরসুমে আর শুধু ইস্টবেঙ্গল ম্যাচই খেলবেন তাঁরা। তাই রাতারাতি আইএফএ সূচি বদলের (১৯ মে মোহনবাগান-প্রয়াগ ও ২১ মে ইস্টবেঙ্গল-প্রয়াগ) নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিলেও, ইউনাইটেড কর্তাদের সমস্যা কাটছে না। উলটে আরও একটা প্রশ্ন উঠে গেল। মোহন-ইস্ট ছাড়া কি আর কোনও ক্লাবের গুরুত্ব নেই বাংলায়? নবাব বললেন, “আমাদের এখনও ছোট দলই ভাবা হয়। না হলে এ রকম ঘটনা আমরা করলে মোহনবাগান কি ছেড়ে দিত? হাজার সমস্যা থাকলেও রবিবার পুরো দল নিয়েই নামব। এত সহজে মোহনবাগানকে ম্যাচ ছাড়ব না।”
র্যান্টিকে দিনের শেষে দেখা গেল এক চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরা নিয়ে এ দিনের রেফারি আর ম্যাচ কমিশনারের ছবি তুলছেন। ২১ মে দেশে ফেরার দিন নাইজিরিয়ান গোলমেশিন সেই ছবি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন কি না জানা নেই। তবে কল্যাণী ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “মনে হল ৩১ ডিসেম্বরের বিকেলে ম্যাচ খেললাম। না হলে ভরা বিকেলে অন্ধকার? ভাবাই যায় না!” |