পুকুর ভরাট করে বসতি গড়া হচ্ছে, প্রশাসনের কাছে বারবার এই অভিযোগ করছিলেন এক বাসিন্দা। অবশেষে শুক্রবার বর্ধমান জেলা জজ আদালতের সামনের একটি পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ করল মহকুমা প্রশাসন ও মৎস্য দফতর।
বর্ধমান টাউনহল পাড়ার বাসিন্দা সুকুমার সেন ‘জজ পুকুর’ নামে ওই প্রাচীন পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে বলে বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। প্রথম এই পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে তিনি জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান গত বছর এপ্রিলে। অভিযোগে জানিয়েছিলেন, প্রায় ১৩ বছর আগে পুকুরটির দক্ষিণ-পশ্চিন কোণ ভরাট করে এক ব্যক্তি বসবাস শুরু করেন। তার পরেই পুকুর ভরাট করে তৈরি হওয়া জায়গা ঘিরে বসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। সুকুমারবাবুর দাবি, জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, মৎস্য দফতর ও পুরসভার কাছে অভিযোগ জানালেও পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ হয়নি। কয়েক দফা পরিদর্শন ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ হয়নি। শেষে তাঁর ছেলে সঞ্জয় সেন চলতি বছর এপ্রিলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। |
নির্মাণ বন্ধে অভিযান পুলিশের। —নিজস্ব চিত্র। |
শুক্রবার সকালে পুলিশ নিয়ে ওই জজপুকুরের পাড়ে যান বর্ধমানের মহকুমাশাসক (উত্তর) প্রদীপ আচার্য। পুলিশ পুকুরের পাড়ে নির্মীয়মাণ দু’টি বাড়ির পিলার ভাঙতে শুরু করে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মহকুমাশাসক বলেন, “পুকুরের পাড়ে বেআইনি নির্মাণ চলতে দেওয়া যাবে না। কী করে পুকুরের জায়গায় এতগুলি বাড়ি তৈরি হল, তা তদন্ত করা হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় প্রায় দশটি বাড়ি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। দোকানও গড়া হয়েছে বেশ কয়েকটি। কয়েকটি অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু সেগুলির ভিতর কতগুলি ভূমি সংস্কার দফতরের জায়গায় পড়ছে, কতগুলি সরকারি খাস জায়গায় পড়ছে, তা নিয়ে ধন্ধে মহকুমা প্রশাসনই। প্রদীপবাবু বলেন, “জমির নথিপত্র পরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, সরকারি জায়গায় বেআইনি ভাবে বাড়ি করা হয়েছে, তাহলে সেগুলিও ভেঙে দেওয়া হবে।” জেলা মৎস্য দফতরের আধিকারিক দেবাশিস পালুই বলেন, “জজপুকুরের পাড়ে সব মিলিয়ে মোট ৬৩টি অবৈধ নির্মাণ রয়েছে। আমরা গত কয়েক মাস ধরে এই নির্মাণকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাঁদের কয়েক জনকে উচ্ছেদের নোটিসও দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলির ব্যাপারে তদন্ত চলছে।”
প্রায় এক বছর ধরে পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়েও পদক্ষেপ করতে এত দেরি হল কেন, মহকুমাশাসক বা মৎস্য দফতরের আধিকারিকের কাছে তার সদুত্তর মেলেনি। তাঁদের বক্তব্য, “তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে খানিকটা সময় লেগেছে।” |
