রাজস্থান রয়্যালস-এর তিন খেলোয়াড় যে অভিযোগে গ্রেফতার হইয়াছেন, তাহা ক্রিকেটের পক্ষে তো বটেই, আই পি এল নামক বিনোদনের পক্ষেও অতি অসম্মানের। তবে, ব্যাধিটি নূতন নহে, বারংবার বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খ্যাতিমান ক্রিকেটারের সাদা পোশাকে এই কলঙ্কের দাগ লাগিয়াছে। প্রতি বারই ‘গেল, গেল’ রব উঠিয়াছে, প্রতি বারই কঠোর ব্যবস্থার কথা বলা হইয়াছে। কিন্তু শ্রীসন্থরা প্রমাণ করিয়া দিলেন, তাহাতে ব্যাধির প্রকোপ কিছুমাত্র কমে নাই। স্পষ্টতই, যথেষ্ট কড়া দাওয়াই প্রয়োজন। বি সি সি আই যে অহেতুক কালক্ষেপ না করিয়াই তিন অভিযুক্তকে বহিষ্কার করিয়াছে, তাহা সুলক্ষণ। অভিযোগ প্রমাণ হইলে এই তিন জনকে খেলার মাঠ হইতে চিরনির্বাসন তো দিতে হইবেই, কঠোর কারাদণ্ডও বাঞ্ছনীয়। শাস্তি যথেষ্ট কঠোর না হইলে ‘দৃষ্টান্তমূলক’ হয় না।
তবে, এই গড়াপেটা কাণ্ডের অন্ধকারে একটি আশার আলো স্পষ্ট। দিল্লি পুলিশ যে দক্ষতায় এই চক্রটিকে ধরিয়া ফেলিল, তাহা বলিয়া দেয় পুলিশ চাহিলে পারে। আজ যখন পুলিশ, তদন্তকারী সংস্থা সম্পর্কে অবিশ্বাস অতি ব্যাপক ও তীব্র, তখন দিল্লি পুলিশের এই সাফল্যকে গুরুত্ব দেওয়াই বিধেয়। পুলিশের কাজ কেবল ধরপাকড় নহে তাহার কাজ একটি সূত্র হইতে আর একটি সূত্রে পৌঁছাইয়া যাওয়া, ছড়াইয়া থাকা তথ্যকে যুক্তিপরম্পরায় সাজাইয়া প্রকৃত ছবিটি উন্মোচন করা। গড়াপেটা কাণ্ডে দিল্লি পুলিশ এই কাজটি দক্ষ ভাবে করিয়াছে। অপরাধীরা যেখানে একবিংশ শতকের প্রযুক্তি ব্যবহার করে, পুলিশকেও সফল হইতে হইলে তাহাই করিতে হইবে। দিল্লি পুলিশ এই ক্ষেত্রে পারিয়াছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ প্রচুর। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ যে পদ্ধতিতে আল কায়দার ন্যায় সন্ত্রাসী সংগঠনের আর্থিক সূত্রগুলিকে সম্পূর্ণ ছিন্ন করিতে পারিয়াছে, তাহা আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মোক্ষম উদাহরণ। পুলিশ চাহিলে পারে, এই কথাটিতে বিশ্বাস করিবার একটি কারণ ভারতেও পাওয়া গেল।
প্রশ্ন হইল, পুলিশ পারিতে চাহে কি? এই প্রশ্নের একটি উত্তর হাওয়ায় ভাসে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা থাকিলে পুলিশ সচরাচর সফল হইতে চাহে না। সুপ্রিম কোর্ট সি বি আই-কে যে তিরস্কার করিয়াছে, তাহার সুরও এই তারেই বাঁধা। বস্তুত, শ্রীসন্থদের অপরাধের আদি-অন্ত সন্ধান করিবার তুলনায় অনেক সহজ তদন্তে পুলিশ হামেশাই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতা পুলিশের অযোগ্যতার ফল, নাকি অন্য কোনও বাধ্যবাধকতার পরিণাম, দিল্লি পুলিশের বর্তমান সাফল্যে সেই সংশয় আরও প্রকট হইল। পুলিশের উপর নাগরিক-আস্থা না থাকিলে তাহার কুফল ভোগ করে সমাজ তাহাতে কী ক্ষতি হয়, বর্তমান ভারত জানে। মানুষ ভরসা করিতে চাহে, পুলিশের কর্তব্য সেই ভরসার যোগ্য হইয়া উঠা। তাহাদের ‘ব্যর্থতা’র কারণ যাহাই হউক না কেন, নিজেদের দক্ষতার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিলে পুলিশের ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল হইবে। নাগরিকরা পুলিশের উপর ভরসা করিতে পারিবেন। কী দিল্লিতে, কী কলিকাতায়। |