লগ্নি সংস্থার বাড়বৃদ্ধি
কেন্দ্রকে আক্রমণে একসুর তৃণমূল-বাম
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার দৌরাত্ম্য নিয়ে রাজ্যরাজনীতিতে বিবদমান তৃণমূল ও বাম এ বার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একজোট। অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের কাছে এক সুরে জবাবদিহি চাইলেন গুরুদাস দাশগুপ্ত ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দু’জনেরই প্রশ্ন, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র কেন নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি? এক দিকে সুদীপ প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্রের কেন ঠিক সময়ে ঘুম ভাঙেনি? অন্য দিকে গুরুদাস প্রশ্ন তুলেছেন, এক একটি অর্থ লগ্নি সংস্থা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদের লোভ দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া সত্ত্বেও সকলে কেন চুপ ছিলেন? তাঁদের সমর্থন করেছেন বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদরা।
অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে একই সঙ্গে বাম, তৃণমূল ও বিজেপির প্রশ্নের মুখে অর্থ মন্ত্রক ও কর্পোরেট মন্ত্রকের কর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, বেআইনি লগ্নি সংস্থাগুলির দৌরাত্ম্য রুখতে একাধিক আইন থাকলেও তার মধ্যে যথেষ্ট ফাঁকফোকর রয়েছে। একই ভাবে একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলেও এই সব সংস্থাকে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। এ সব জানা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট কড়া আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরির কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আজ স্থায়ী কমিটির কাছে পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, গোটা দেশে মোট ৬৬৪টি সংস্থাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা কোনও না কোনও ভাবে বেআইনি অর্থ লগ্নি ব্যবসায় জড়িত। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের সংস্থার সংখ্যা সব থেকে বেশি ৭৩টি। এই সংস্থাগুলি সেবি-র নোটিস পাওয়ার পরেও সতর্ক না হওয়ায়, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, আজ বৈঠকে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গুরুদাস। তাঁর প্রশ্ন ছিল, কেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মতো সংস্থাগুলি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল না? সারদা-কাণ্ডের পরে সরকার যে তদন্ত শুরু করেছে, তার হালহকিকতও জানতে চেয়েছেন গুরুদাসরা।
আজ অর্থ বিষয়ক সচিব অরবিন্দ মায়ারাম, আর্থিক পরিষেবা সচিব রাজীব টাকরু, কর্পোরেট মন্ত্রকের সচিব নাভেদ মাসুদ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দফতরের শীর্ষ কর্তারা সাংসদদের প্রশ্নের মুখে জেরবার হয়েছেন। আগামী সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ডি সুব্বারাওকে তলব করা হয়েছে। পরের সপ্তাহে ডাকা হবে সেবি-র চেয়ারম্যান ইউ কে সিনহাকে। কেন্দ্রীয় সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সেবি-র বক্তব্য শোনার পরই বেআইনি লগ্নি সংস্থার কাজকর্ম নিয়ে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু করবে স্থায়ী কমিটি।
সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে আজ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যশবন্ত সিন্হা তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রথম বিতর্কের সূত্রপাত করতে বলেন। বৈঠকে সুদীপ জানান, ওই ঘটনার পরেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় একটি বিল পাশ করিয়েছে। সেটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সুদীপবাবুর যুক্তি ছিল, আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থাও করা উচিত। কারণ মূলত গরিব, খেটে খাওয়া মানুষরাই এই সব সংস্থায় টাকা রাখছেন। সে ক্ষেত্রে ওই সব সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করে, সম্পত্তি নিলাম করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সুদীপের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হলেও গুরুদাস দাশগুপ্তের যুক্তি, সারদার মতো সংস্থার সম্পত্তি নিলাম করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া যাবে না। কারণ বাজার থেকে এরা যে পরিমাণ টাকা তুলেছে, তাদের সম্পত্তির পরিমাণ তার তুলনায় অনেক কম। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের যে ঠিক সময়ে ঘুম ভাঙেনি, তা নিয়ে দু’জনেই একমত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে দোষারাপের রাস্তায় না হেঁটে গুরুদাসের যুক্তি, রাজ্য সরকারের দায়িত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু কেন্দ্র কেন কিছু করেনি?
অর্থ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটিতে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য গুরুদাসই উদ্যোগী হয়েছিলেন। আজকের বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তোলেন, সুদীপ্ত সেনের মতো এক জন ব্যক্তি উচ্চশিক্ষিত না হওয়া সত্ত্বেও এই ভাবে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ফেঁদে বসলেন কী ভাবে? অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, সারদা গোষ্ঠীর ব্যবসা অভূতপূর্ব। কিন্তু গুরুদাস তা মানতে চাননি। তাঁর যুক্তি ছিল, এর আগে সঞ্চয়িতা-সঞ্চয়িনীর মতো সংস্থাও এই ধরনের কারবার ফেঁদে বসেছিল। আজ বিজেপি, বিজু জনতা দল, এমনকী কংগ্রেসের সাংসদরাও বাম-তৃণমূল নেতাদের সমর্থন জানিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অকর্মণ্যতার দিকে আঙুল তুলেছেন।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নির্দেশ মেনে অথর্র্ মন্ত্রককে এক সপ্তাহের মধ্যে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.