লরেন। শুধু এই নামেই লম্বা, সোনালি চুলের মহিলাটিকে চিনতেন মার্লিন কাস্ত্রো। জানতেন, কলেজে পড়ার জন্য তাঁকে সাহায্য করছে লরেনের সংস্থা, “কলেজ ট্র্যাক”।
ই-মেলে যোগাযোগ, কখনও কখনও দেখাও হত। মার্লিনের বেড়ে ওঠার সময়ের সমস্যাগুলি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন লরেন। মার্লিন সাফ জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারে তিনিই প্রথম কলেজে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। লরেন ছাড়া সেটা সম্ভব ছিল না।
পরে সংবাদপত্র মারফত মার্লিন জানতে পারেন, লরেন সিলিকন ভ্যালির প্রথম সারির মানুষ।
অ্যাপল্-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভন পি জোবসের স্ত্রী। লরেন কতটা সহজ, স্বাভাবিক তা ভেবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল মার্লিনের।
এ ভাবেই কাজ করতে ভালবাসেন লরেন, জানিয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মীরা। স্টিভ জোবসের মৃত্যুর
|
লরেন পাওয়েল জোবস |
পরে ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে লরেনের কার্যকলাপ। সম্প্রতি টেলিভিশনে একটি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন তিনি। তবে এখনও নিজস্ব দানের পরিমাণ পুরোপুরি জানাতে রাজি নন লরেন। তাঁর বন্ধু লরা-অ্যারিলাগা অ্যান্ড্রেসনের কথায়, “লরেনের দানের যে পরিমাণের কথা প্রকাশিত হয়েছে, তা ওর মোট দানের ১ শতাংশ।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন ১,১৫০ কোটি ডলারের মালিক লরেন। বিনিয়োগের বেশির ভাগই রয়েছে ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির শেয়ারে। অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সার তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন জোবস। পরে সেই স্টুডিটিও কিনে নেয় ডিজনি। পরিবর্তে জোবসের হাতে আসে ডিজনির শেয়ার। এখন ডিজনির সব চেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার “লরেন পাওয়েল জোবস ট্রাস্ট”। অ্যাপ্লের বেশ কিছু শেয়ারও লরেনের হাতে ছিল।
‘কনসার্ভেশন ইন্টারন্যাশনাল’ সংস্থার পরিচালন পর্ষদের সদস্য লরেন। ওই সংস্থার কর্তা পিটার সেলিগম্যান জানিয়েছেন, “সারা বিশ্বে বিশেষ প্রভাব ফেলার ক্ষমতা আছে লরেনের। উনি কোন দিকে পা বাড়ান তা দেখতে আমরা সবাই উৎসুক।”
যথেষ্ট দান না করার অভিযোগ ছিল স্টিভের বিরুদ্ধে। ওয়ারেন বাফে ও বিল গেটসের “দেওয়ার অঙ্গীকার” সংস্থায় যোগ দিতেও রাজি হননি স্টিভ। লরেনও ওই সংস্থায় যোগ দেননি। কেন? টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রশ্নটা শুনে একটু থমকে গিয়েছিলেন লরেন। তার পরে ধীরে ধীরে বলেন,“কেউ কোনও সংস্থার অঙ্গীকারে সই করল কি না তা বড় কথা নয়। কে কী করছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, বাড়ছে লরেনের কাজের পরিধি। “কলেজ ট্র্যাকের” মাধ্যমে গরিব ছেলেমেয়েদের সাহায্য করতেন তিনি। ওই ছেলেমেয়েদের অনেকেই আমেরিকায় আসেন বেআইনি পথে। পরে মার্কিন নাগরিকত্ব বা অন্য অনেক স্বীকৃতি পান না তাঁরা। ফলে, অভিবাসন নীতি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন লরেন।
প্রায় এক দশক ধরে মার্কিন কংগ্রেসে ঝুলে রয়েছে ‘ড্রিম অ্যাক্ট’ নামে একটি খসড়া আইন। তা পাশ হলে মার্কিন নাগরিক হতে পারবেন ওই তরুণ-তরুণীরা। এখন সেই আইন পাশের অন্যতম সমর্থক লরেন। অস্কারজয়ী চিত্র পরিচালক ডেভিস গুগেনহেইমকে দিয়ে এই ছেলেমেয়েদের নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করিয়েছেন তিনি। তথ্যচিত্রটি প্রচার করা হয়েছে ইন্টারনেটে। তবে রাজনীতির ওয়াশিংটনে ‘পরিবর্তন’ আনা যে সহজসাধ্য নয় তা স্বীকার করেছেন লরেন। কিন্তু আশাবাদী তিনি। “ওই তরুণ-তরুণীরা হাল ছাড়ে না। আমাকেও ওরাই হাল ছাড়তে দেয় না।”
আফ্রিকাতেও বেশ কিছু কাজ করেছেন লরেন। পিটার সেলিগম্যানের কথায়,“পিছনে থেকেই কাজ করতে ভালবাসেন লরেন। তবে প্রয়োজনে সামনে থেকেও লড়াই করতে পারেন।” হয়তো এটাই লরেন পাওয়েল জোবসের ‘ইউএসপি।” |