এ যেন ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়ালের গল্প।
ছিল অ্যানাস্থেশিওলজি বিভাগ। রাতারাতি হয়ে গেল চক্ষু বিভাগ। দিন কয়েকের মধ্যে ফের ভোলবদল। চক্ষুকে সরিয়ে আবার অ্যানাস্থেশিওলজির প্রত্যাবর্তন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এটাও সাময়িক বন্দোবস্ত। দিন কয়েকের মধ্যেই ওই জায়গায় ফের বসবে অন্য বিভাগের বোর্ড। সৌজন্যে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র পরিদর্শন। ঘটনাস্থল কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বিভিন্ন বিভাগের ঘন ঘন এমন অদলবদলে হতভম্ব রোগীরা।
এমসিআই পরিদর্শনকে ঘিরে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারদের কুমিরছানা হিসেবে দেখানো কিংবা সরঞ্জাম ধার করার ঘটনা আকছার ঘটে। এমনকী রাজ্যের প্রধান ব্লাড ব্যাঙ্ককে অবলীলায় কোনও হাসপাতালের নিজস্ব ব্লাড ব্যাঙ্ক বলে চালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও সম্প্রতি সামনে এসেছে। এ বার সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে রাতারাতি আস্ত একটা বিভাগকেই গ্রাস করছে অন্য বিভাগ। |
আজ, শুক্রবার ন্যাশনালে আসবেন এমসিআই পরির্দশকেরা। এ দিনই এখানে অ্যানাস্থেশিওলজির এমডি পাঠ্যক্রমের ‘ওরাল প্র্যাক্টিক্যাল’ পরীক্ষা। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার পদ্ধতি এবং পরিকাঠামোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরিকাঠামো ঠিক না থাকলে পড়ুয়াদের স্বীকৃতি মেলে না। তাই পরিদশর্কদের সন্তুষ্ট করার জন্য বিভাগ সাজিয়েগুছিয়ে অপেক্ষা করবেন অ্যানাস্থেশিওলজির চিকিত্সকেরা। অথচ ঠিক এক সপ্তাহ আগে ওই জায়গাতেই চোখের বিভাগ সাজিয়ে বসেছিলেন চক্ষু বিভাগের চিকিত্সকেরা। কারণ গত ৮ তারিখ ছিল চক্ষু বিভাগের এমসিআই পরিদর্শন। তাদেরও এমসিআই-এর চাহিদা পূরণ করার মতো পরিকাঠামো নেই। এরই মধ্যে চক্ষু বিভাগের পরিকাঠামো কমিয়ে সেখানে তৈরি করে ফেলা হয়েছে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট। তাতে এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে শয্যার সংখ্যা। ‘ঠাঁই নাই’ দশা আরও বেড়েছে। তাই নিজেদের বিভাগের ‘দৈন্যদশা’ ঢাকতে অ্যানাস্থেশিওলজি বিভাগটির দখল নিয়েছিলেন তাঁরা। দিব্যি অ্যানাস্থেশিওলজি বিভাগের চিকিত্সকদের নামধাম উড়িয়ে সেখানে বসে গিয়েছিল চক্ষু চিকিত্সকদের নাম। এমসিআই-কে মিথ্যা কথা বলে কোনও মতে তখন পরিদর্শন উতরে দেওয়া হয়েছিল। এখন অ্যানাস্থেশিওলজি ফিরে এসেছে। দিন কয়েক পরে অন্য বিভাগের পরিদর্শনের সময় এলে ফের ওই জায়গায় কে বসবেন কে জানে!
যদিও চক্ষু বিভাগের চিকিত্সকদের দাবি, ওই জায়গাটি আদতে তাঁদেরই ছিল। তিন বছর আগে এক বার এমনই এক এমসিআই পরিদর্শনের আগে অ্যানাস্থেশিওলজি বিভাগের চিকিত্সকদের জায়গাটি ধার দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই ধার দেওয়াই কাল হয়। তার পরে আর বিভাগ ফেরত পাননি। দিন কয়েক আগে কয়েক দিনের জন্য ফেরত পেলেও আবার নিজেদের দখল কায়েম করেছে অ্যানাস্থেশিওলজি। চক্ষু বিভাগের এক চিকিত্সকের কথায়, “এ বার আমরাও বদ্ধপরিকর। আর অধিকার ছাড়ব না। এমসিআই আসবে বলে ক’দিনের জন্য ছাড়লাম। তার পরে নিজেদের পাওনা বুঝে নেব।”
প্রশ্ন হল, এ ভাবে মিথ্যা পরিকাঠামো দেখিয়ে এমসিআই-কে তুষ্ট করে আদতে কি পঠনপাঠনের মান নিয়েই আপস করা হচ্ছে না? অ্যানাস্থেশিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিত্সক জ্যোতিশঙ্কর রুদ্রর মন্তব্য, “অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগ অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগেই রয়েছে। আর কিছু বলার নেই।” চক্ষু বিভাগের প্রধান জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, “আমি এর মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। একটু অদল-বদল করে দেখিয়ে যদি মেডিক্যাল পড়ুয়াদের এমডি, এমএস পড়ার সুযোগ দেওয়া যায়, তা হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব মিটবে। উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে অযথা আপনারাই জলঘোলা করছেন।” ন্যাশনালের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, “দুই বিভাগই ওখানে মিলেমিশে থাকছে। আমাদের কিছু অদলবদলের কাজ চলছে। তাই সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু তো জানি না।”
|