নামেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চালু রয়েছে স্ত্রীরোগ বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠনও। অথচ, স্ত্রীরোগ বিভাগের কোনও ইমার্জেন্সি নেই। সঙ্কটজনক অবস্থায় কোনও রোগিণীকে আনা হলে তাঁকে পত্রপাঠ ‘রেফার’ করা হয় অন্য হাসপাতালে বা চাওয়া হয় অন্য বিভাগের দাক্ষিণ্য। অন্য বিভাগের চিকিৎসকদের দয়া হলে সেখানে ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা জোটে, নচেৎ রোগিণীর ‘প্রাণসংশয়’।
জেলা নয়, খাস কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই অবস্থা নিয়ে এত দিন স্বাস্থ্য দফতরের তেমন কোনও মাথাব্যথাই ছিল না। স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমে আসন বাড়াতে ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’র (এমসিআই) কাছে আবেদন করার পরে সেখানকার পরিদর্শকেরা হাসপাতাল খতিয়ে দেখতে এসে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। অবিলম্বে স্ত্রীরোগ বিভাগের ইমার্জেন্সি চালু না হলে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে এমসিআই। আর তার পরেই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে।
এমসিআই-এর পরিদর্শকেরা তাঁদের চিঠিতে স্পষ্ট জানিয়েছেন নিজেদের অসন্তোষের কথা। কী অসন্তোষ? বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “কোনও প্রসূতি যদি সঙ্কটজনক অবস্থায় এখানে আসেন, তা হলে যথাযথ চিকিৎসা পাবেন না। পাল্স অক্সিমিটার, ডিফিব্রিলেটর কোনও কিছুই নেই। চার দিকে শুধু ধুলো আর নোংরা। সংক্রমণের ভয় প্রতি পদে। ইমার্জেন্সি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে গুরুতর রোগীদের অন্য হাসপাতালে রেফার করাটাই রেওয়াজে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।” কর্তৃপক্ষ জানান, ইমার্জেন্সি না থাকলেও রাজ্যের প্রথম স্ত্রীরোগ বিভাগের আইটিইউ তাঁদের হাসপাতালেই চালু হয়েছে। গুরুতর রোগের চিকিৎসা সেখানেই হয়।
কিন্তু আইটিইউ-তে তো সকলকে ঠাঁই দেওয়া সম্ভব নয়, বাকিদের ক্ষেত্রে কী হবে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ইমার্জেন্সি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। এত দিন কেন তা ভাবা হয়নি? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জায়গার অভাবে অনেক কিছুই হয়নি। এ বার ব্যবস্থা করতেই হবে। তবে কাগজে-কলমে ইমার্জেন্সি না থাকলেও ইমার্জেন্সি কেস এলে ইমার্জেন্সি ওটিতে চিকিৎসা হত। সেখানে সব সরঞ্জামই রয়েছে।”
মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, গত এক বছরে ধাপে ধাপে অনেক কিছুই বদলাচ্ছে। লেবার রুমের উন্নতি, স্ত্রীরোগ বিভাগের ইমার্জেন্সি— সবই হবে।
এমসিআই-এর পরিদর্শকদের বক্তব্য, বিভাগের দুরবস্থা ছাড়াও ওষুধ সংস্থার লোকেদের বাড়বাড়ন্তও প্রবল। আউটডোরে রোগী দেখার সময়ে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড় লেগেই থাকে। চারপাশে সাঁটা থাকে ওষুধের বিজ্ঞাপন। পরিদর্শকদের বকুনির পরে অবশ্য কর্মীরা তড়িঘড়ি সেই সব পোস্টার খুলে ফেলেন।
এক দিকে, চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিয়ে এত প্রশ্নচিহ্ন, অন্য দিকে ওষুধ সংস্থার রমরমা। এর প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? বিভাগীয় প্রধান আরতি বিশ্বাস এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা নিরুপায়। হাজার চেষ্টা করেও গাইনি বিভাগ থেকে ওষুধ সংস্থার পোস্টার তাঁরা সরাতে পারছেন না। এক কর্তা বলেন, “যে দিন খুলে ফেলা হয়, তার পরের দিনই ফের পোস্টার সাঁটা হয়ে যায়। স্বাস্থ্য দফতরের কড়া নির্দেশ আছে, আউটডোরের সময়ে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা আসতে পারবেন না। কিন্তু সেটাও মানা হয় না। যখন তখন তাঁরা আসেন। কী ভাবে এই সমস্যা মিটবে, স্পষ্ট নয়।” |