বছর চারেক আগে ‘লিউকোমিয়া’ রোগে আক্রান্ত ৫ বছরের ছেলে সমীরকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে প্রথম নিয়ে এসেছিলেন বাবা স্বপন দত্ত। নানা দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনার মধ্যে তার পর থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা করাচ্ছেন। সেই থেকে মাঝে মধ্যেই কোচবিহারের ঝিনাইডাঙার বাড়ি থেকে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসতে হয়েছে। মঙ্গলবারও ছেলেকে দেখাতে এনেছিলেন চিকিৎসকদের। তাঁরা পরীক্ষা করে এ দিন জানিয়ে দেন সমীর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে। যা শুনে খুশি স্বপনবাবু। এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে নতুন করে সাজানো ‘নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (নিকু) উদ্বোধন করতে এসে তা জানতে পারেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সমীর এবং তার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সমীররের অভিভাবকদের প্রশংসা শুনে খুশি চিকিৎসকরাও। ছেলে সুস্থ হওয়ায় স্বপনবাবুর পরিবারকে খুশি দেখে মন্ত্রী মিষ্টি খেতে সমীরের হাতে ১ হাজার টাকা দেন।
শিশু বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মৃদুলা চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ১৪ বার সমীরের শরীরের রক্ত বদলাতে হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। প্রাথমিক পর্বে রোগ ধরা পড়ার পর নিয়মিত চিকিৎসা করানোর জন্য সমীর সুস্থ হয়ে উঠেছে। |
রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক শেষে এ দিন মন্ত্রী বলেন, “এখানে চিকিৎসা করিয়ে সমীর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে জানতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। তবে কলকাতার বাসিন্দা এই হাসপাতালে কর্মরত কিছু চিকিৎসক নিয়মিত থাকছেন না। সপ্তাহে ৩ দিন কাজ করে ৩ দিন ছুটি নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এটা কাম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ভাবে কথা হয়েছে। আগামী মাসে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায় বসা হবে, প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে।” এ দিন রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ফাঁসিদেওয়ায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যে ইউনিট রয়েছে সেটির পরিকাঠামো চাঙা করা। ওই ইউনিটটিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সিটি স্ক্যান পরিষেবা ২৪ ঘন্টা চালু রাখতে ২ জন কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, আরও একটি সিটি স্ক্যান চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ৩ জন কর্মী সম্প্রতি বদলি হওয়ার জেরে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তা জানানোয় ওই কর্মীদের ফের এই হাসপাতালেই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। এক জন শল্য চিকিৎসক বর্তমানে ‘নিউরো সার্জারি’র কাজ শুরু করেছেন এই হাসপাতালে। ইতিমধ্যেই তিনি ১২টি অস্ত্রোপচার করেছেন। নতুন পরিকাঠামো গড়ে হাসপাতালে নিকু’র পরিষেবা উন্নত করার পাশাপাশি পেডিয়েট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (পিকু) মানও উন্নয়ত করা হয়েছে। হাসপাতালের সম্পত্তির হিসাবের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিভিন্ন বিভাগে ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট’ (পিজি)-এ আসন সংখ্যা ১৫ টি থেকে বাড়িয়ে ৭০ টি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না-থাকায় যে সমস্যা রয়েছে তা অনেকাংশে মিটবে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সচিবের পদটি বছর খানেক ধরে ফাঁকা রয়েছে। ওই পদে দ্রুত আধিকারিক নিয়োগের বিষয়টি দেখতে স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। |