ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতি বিজড়িত দার্জিলিঙের লেবং-কার্ট রোডের ‘রায় ভিলা’ দু’দিন আগেও ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলের (জিএলপি) কব্জায়। সামরিক উর্দির ধাঁচে পোশাক পরা সেই জিএলপি সদস্যদের শিবির ছিল সেই ভবন।
সরকারি অফিসার-কর্মীরাও সচরাচর সেখানে যেতেন না। রাতারাতি তা দখলমুক্ত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগ্রহশালা গড়ে ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ মেনেই ‘রায় ভিলা’ রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরকে হস্তান্তর করল জিটিএ। বৃহস্পতিবার দুপুরে দার্জিলিঙে এক পাশে বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ ও অন্য পাশে জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গকে নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক সমঝোতাপত্রও স্বাক্ষর হয়েছে। তথ্য সংস্কৃতি দফতর প্রাথমিক ভাবে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে ভবনটি সংস্কার করে তা রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবে।
মিশন কর্তৃপক্ষ সেখানে কলকাতার গোলপার্কের শাখার ধাঁচে একটি ভাষা শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র গড়বে। |
মহিলাদের জন্যও নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। একটি বালিকা বিদ্যালয় ও বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাসও সেখানে খুলবেন মিশন কর্তৃপক্ষ। জয়েন্ট এনট্রান্স, আইএএস, আইপিএস পরীক্ষার জন্য সুলভে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।
গুরুঙ্গদের আবেদন মেনে নিয়ে রাজ্য সরকারের যুব কল্যাণ দফতরের আওতায় থাকা দার্জিলিঙের জলাপাহাড়ের তেনজিং নোরগে যুব আবাসটি জিটিএ-কে দেওয়ার কথাও ওই চুক্তিতে রয়েছে। যুব আবাসটি সংস্কারের জন্য জিটিএ-কে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের তরফে ১ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে।
বস্তুত, ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতি বিজড়িত ভবনটি নিয়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র গড়তে বাম আমলেই উদ্যোগী হন মিশন কর্তৃপক্ষ। ১৯১১ সালে ভগিনী নিবেদিতা ওই বাড়িতেই প্রয়াত হন। ঐতিহ্যমন্ডিত বাড়িটিতে চা বাগান পরিচালনা নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়া হলেও তা ভাল চলেনি। জিএনএলএফ আমলে ভবনটির দখল নেন সুবাস ঘিসিং। সেই সময়ে ঘিসিংয়ের কাছে বহু বার আর্জি জানানো হলেও কাজের কাজ হয়নি বলে জানান মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ। তাঁর কথায়, “প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী লোকেশ্বরানন্দ ওই ভবনটি দেখে কিছু করার চেষ্টা করেন। সে যাত্রায় তা সফল হয়নি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী ও বিমল গুরুঙ্গের সহযোগিতায় সেই কাজটা আমরা করতে চলেছি। আমাদের গোলপার্কের শাখার ধাঁচে নানা কর্মকাণ্ড হবে রায় ভিলায়। সকলে মিলে কাজ করলে অর্থ ও লোকবলের কোনও অভাব হবে না।”
গুরুঙ্গ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ ফেলতে পারব না। আমরা আশা করি রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ দুর্দান্ত কিছু করবেন। রাজ্য, জিটিএ ও মিশন মিলে তা পরিচালনা করব।” |