কড়া রোদ আর ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার গুমোট গরমের সাঁড়াশি আক্রমণে একটানা পনেরো দিন ধরে হাঁসফাঁস করছিল নদিয়া। শুক্রবার থেকে নিয়ম করে বৃষ্টি ও সেই সঙ্গে ঝড় বদলে দিয়েছে ছবিটা। চার দিনের লাগাতার ঝড়-বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি এলেও অস্বস্তি বেড়েছে কৃষকদের। প্রবল ঝড়, বৃষ্টি, কোথাও আবার শিলাবৃষ্টির দাপটে বোরো ধান থেকে পাট, তিল, মরসুমি সবজি, আম, লিচু-সহ সব ধরনেরই ফসলেরই আংশিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী আফতাব কামাল বলেন, “বৃষ্টির থেকেও ঝড় অনেক বেশি ক্ষতি করছে। সব ধরনের ফসলের উপরেই প্রভাব পড়বে। শুধু বৃষ্টি হলে কোনও চিন্তা ছিল না। বোরো ধান কাটার ঠিক আগে এই ধরনের ঝড় অত্যন্ত খারাপ।” |
একই আশঙ্কা আম-লিচুর মতো মরসুমি ফল চাষিদের। জাহাঙ্গিরপুরের দুর্গা বৈরাগী, রুইপুকুরের প্রবীর হালদারেরা জানান, প্রথমে টানা রোদে লিচু পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে। এখন ঝড়ে খসে পড়ছে আম। দুর্গাবাবু বলেন, “এখন হিমসাগর, বোম্বাই আম পাকার সময়। পাকা আম পাইকারি হিসাবে কমপক্ষে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হত। কিন্তু ঝড়ে পড়া আম দেড় টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৩০ শতাংশ ফল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এক হাজার লিচু হাজার টাকার বদলে পাঁচশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে।” প্রাক্তন কৃষি আধিকারিক নিশীথ দে বলেন, “ধান, তিল বা পাটই শুধু নয়মাঠের সব ধরনের ফসলই এই ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
নদিয়া জেলার যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা হরেন্দ্রকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে চার দিনে জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে ১১ মে ৮.২ মিমি, ১২ মে ২৪.৪ মিমি, ১৩ মে ১৪.৬ মিমি এবং ১৪ মে ১৬.৮ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।”
ধান, পাট, তিল-সহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির বেশির ভাগই হয়েছে জেলার হাঁসখালি এবং কৃষ্ণনগর-১ নং ব্লকে। হরেন্দ্রবাবু জানান, হাঁসখালি ব্লকে ৪২২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। তার মধ্যে ২৯৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার পরিমাণ ৮৯১ মেট্রিক টন। ৩৯৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ৩৯০ হেক্টর জমির ফসলের। পরিমাণ ৯৫৫ মেট্রিক টন প্রায়। ২৫৪ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ২০৩ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্য দিকে কৃষ্ণনগর ১-নং ব্লকে ১০২০ হেক্টরে বোরো চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ৪৭৫ হেক্টর জমির ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাট চাষ হয়েচে ৬৮০ হেক্টর জমিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৪২ হেক্টরের ফসল। তিল চাষ হয়েছে ৫৫৩ হেক্টরে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৪৭
হেক্টরের ফসল। |