আট বছর আগেই স্থানীয় সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায় ফিতে কেটে গিয়েছিলেন। শিলান্যাসের পর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও রঘুনাথগঞ্জ জল প্রকল্পের আড় ভাঙেনি। এখনও অর্ধেক কাজই হয়নি সে প্রকল্পের। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও আর তেমন ভরসা নেই সে প্রকল্পের উপরে।
কিন্তু ভোট বড় বালাই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সুবিশাল সবুজ সামিয়ানা খাটিয়ে নাম মাত্র জনা কয়েক দলীয় সমর্থকের উপস্থিতিতে অর্ধসমাপ্ত সেই প্রকল্পের একেবারে উদ্বোধন করে দিলেন মন্ত্রী সুব্রত সাহা। আর ‘দলীয় রেওয়াজ’ মেনেই আর পাঁচটা সরকারি অনুষ্ঠানের মতোই এ দিনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও নিমন্ত্রণ পেলেন না বিরোধী নেতাদের কেউই। স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ তো নয়ই, প্রকল্পটি গড়তে যারা জমি দিয়েছিল সিপিএমের দখলে থাকা সেই জঙ্গিপুর পুরসভার চেয়ারম্যানও নিমন্ত্রণ পত্র পেলেন না অনুষ্ঠানে। ভোটের মুখে প্রকল্পের পূর্ণ কৃতিত্ব নিতে মন্ত্রী সুব্রতবাবু একবার সৌজন্যবশতও তাঁদের নামোল্লেখ করলেন না। তবে তাঁর দাবি, বিরোধীদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তাঁরাই অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। |
প্রকল্প এখনও শেষের মুখ দেখতে ঢের দেরি। এ দিন পরিশুদ্ধ পানীয় জলের নমুনা হিসেবে প্যাকেট-বন্দি যে জল তুলে ধরা হল তাতেও দেখা গেল পোকা ভাসছে।
এই অবস্থায় ভোটের মুখে তড়িঘড়ি বিরোধীদের এক প্রকার উপেক্ষা করেই এই প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মন্ত্রী। এ দিনের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল এলাকার বিধায়ক ও কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের। তিনি অনুষ্ঠানে না এসে তোপ দাগেন শাসক দলের বিরুদ্ধে। তাঁর বক্তব্য, “সরকারি অনুষ্ঠান জেনে সম্মতি দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারি স্থানীয় সাংসদ আমন্ত্রণ পাননি। অথচ এই প্রকল্পের কাজ চলছে কেন্দ্রের টাকায়। তাই অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিই।”
একই পথ নিয়েছে সিপিএমও। জঙ্গিপুর পুরসভার পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “পুরসভার জমিতেই বছর আটেক আগে এই জল প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। অথচ উদ্বোধনের দিন ক্ষণ ঠিক করার ক্ষেত্রে পুরকর্তাদের সঙ্গে কোনও আলাপ আলোচনা করা হয়নি। অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন লোক মারফত আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই অসৌজন্যতা মেনে নেওয়া যায় না।” বিরোধীশূন্য এই অনুষ্ঠানে সাকুল্যে শ’দেড়েক লোক হাজির হন। অনুষ্ঠান শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দেড়েক পর। |
দফতরের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার শম্ভুনাথ প্রামাণিক বলেন, “রাজ্য সরকারের নির্দেশ মতো বিধায়ক ও পুরপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু কেন তাঁরা এলেন না তা বলতে পারব না। দর্শকদের এত কম এলেন কেন তাও বোধগম্য হচ্ছে না।” মন্ত্রী সুব্রত সাহার বক্তব্য, “ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিরোধীদের না আসার কারণ জানি না। উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি বাঞ্ছনীয় নয়।” শিয়রে ভোট বলেই কি অসম্পূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন? মন্ত্রীর জবাব, “এর মধ্যে রাজনীতি নেই।” |