|
|
|
|
সময়সীমা শেষ, আত্মসমর্পণ খলনায়কের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
নায়কোচিত ভাবেই ধরা দিলেন খলনায়ক। আর সে সঙ্গে শেষ হল আশা-উত্তেজনা-কৌতূহল-উদ্বেগ।
ঘড়ির কাঁটায় তখন আড়াইটে হবে। টাডা আদালতের সামনে থিকথিক করছে ভিড়। জনসমুদ্রের মাঝখানে এসে থামল মুন্নাভাইয়ের কালো গাড়িটা। প্রাণহানির হুমকি রয়েছে বলে গত দু’দিন ধরেই সঞ্জয় দত্তের বাড়ির বাইরে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আদালতের বাইরে আজ পুলিশের টিকিটিও দেখা গেল না। শেষমেশ উপায় না দেখে গাড়ি থেকে নেমে এলেন স্বয়ং মুন্নাভাই। দু’হাত দিয়ে সামলালেন ভিড়। পথ করে নিলেন নিজেই। বললেন, “আপনারা দয়া করে শান্ত হন। যেতে দিন।” |
|
আত্মসমর্পণ করার জন্য বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে। |
পালি হিলে সঞ্জয় দত্তের ইম্পিরিয়াল হাইটসের বাইরে সকাল থেকেই বেশ ভিড় ছিল। দু’টো নাগাদ স্ত্রী মান্যতার হাত ধরে বেরিয়ে এলেন মুন্নাভাই। গায়ে সাদা কুর্তা, শেডেড জিন্স। জামার সামনে কায়দা করে আটকানো চশমা। সঞ্জয়ের চোখেমুখে আজ ভাঙনের ছাপ ছিল স্পষ্ট। যদিও আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন আবেগ লুকোনোর। মান্যতার হাত ধরে বেরিয়ে আসার সময় বারবারই পিছন ফিরে তাকাতে দেখা গেল তাঁকে। কখনও বা হাত নাড়লেন ভক্তদের উদ্দেশে। প্রতি বারের মতো এ বারও সঙ্গে ছিলেন প্রিয়া দত্ত, শালা ওয়েন রনকন। দেখা গেল মহেশ ভট্টকেও।
১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের সময়, সন্ত্রাসবাদীদের দেওয়া অস্ত্র বেআইনি ভাবে বাড়িতে মজুত রাখার অপরাধে গত ২১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট সঞ্জয়ের পাঁচ বছরের সাজা বহাল রাখে। আগেই ১৮ মাস জেল খাটা হয়ে গিয়েছে সঞ্জয়ের। তাই আর সাড়ে তিন বছর সাজা ভোগ করতে হবে। আত্মসমর্পণ করার জন্য সঞ্জয়কে এক মাস সময় দেয় আদালত। পরে আরও চার সপ্তাহ সময় পান সঞ্জয়। সেই সময়সীমা শেষ হল আজই।
বাড়ির বাইরে পা ফেলতেই সঞ্জয়ের গাড়ির পিছনে ধাওয়া করল সংবাদমাধ্যমে। প্রায় এক ঘণ্টার যাত্রাপথে গোটা রাস্তাটাই ক্যামেরার লেন্স ঘিরে রাখল কালো রঙের গাড়িটাকে। আর টাডা আদালতে পৌঁছতে ভয়াবহ চেহারা নিল পরিস্থিতি। প্রথম গাড়ি থেকে নামতে দেখা গেল মহেশ ভট্টকে। হাত জোড় করে সবাইকে সরে যেতে বললেন। তবে কাজে দিল না অনুরোধ। শেষমেশ গাড়ি থেকে নেমে এলেন স্বয়ং মুন্নাভাই।
সঞ্জয় আদালতে ঢুকতেই তাঁর আইনজীবী রিজওয়ান মার্চেন্ট বিচারককে জানালেন, বাইরের পরিস্থিতির কথা, কী ভাবে সঞ্জয়কে ছেঁকে ধরেছিল জনতা। এই প্রথম মুন্নাভাইয়ের চোখে জল দেখা গেল। মাথা নামিয়ে বিচারক জি এ সানাপকে সম্মান জানালেন তিনি। নিয়মমাফিক সানাপ আসামির নাম জানতে চাইলেন। উত্তর এল, “সঞ্জয় সুনীল দত্ত।” পরের প্রশ্ন, “আপনি কি নিজের সাজার বিষয়ে জানেন?” নিচু স্বরে সঞ্জয় জানালেন, “৫৫১ দিন জেল।” এর পরেই সঞ্জয়কে নিয়ে যেতে বললেন বিচারক। ঘরের পিছন দিকে নিয়ে গিয়ে বসানো হল তাঁকে। পাশে বসলেন মান্যতা। হাতে হাত রাখলেন। ও পাশে তখন ছলছলে মুখে প্রিয়া। |
|
বৃহস্পতিবার আদালতে পৌঁছনোর পর সঞ্জয় দত্ত। সংবাদমাধ্যমের সামনে। |
প্রাণহানির হুমকি পেয়েছেন সঞ্জয়। কিছু দিন আগে আর্থার রোড জেলে একটি বেনামী চিঠি এসেছিল। তাতে লেখা ছিল, মুন্নাভাইকে আর্থার রোডে রাখা হলে আক্রান্ত হতে পারেন তিনি। আজ রাতটা সেই জেলেই কাটাবেন সঞ্জয়। পরে তাঁকে ইয়েরওয়াড়া জেলে সরানো হবে বলে সরকারি সূত্রে খবর। ইয়েরওয়াড়া জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সুরক্ষা ছাড়া সেলিব্রিটি বন্দির জন্য অন্য কোনও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়নি। জেলের অন্য বন্দিরা যাতে হামলা চালাতে না পারেন, তাই আলাদা কক্ষে থাকতে দেওয়া হবে সঞ্জয়কে। অনেকটা ডিমের মতো দেখতে ঘরটি “আন্ডা সেল” নামে খ্যাত। কক্ষের অর্ধেকটা মাটির নীচে। একটা পাতলা গদি, বালিশ, ওষুধপত্র, কুর্তা-পাজামা, চটি, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট নিজের কাছে রাখতে পারবেন সঞ্জয়। হনুমান চালিশা, রামায়ণ ও ভাগবত গীতা রাখারও অনুমতি দিয়েছে আদালত। জেলে থাকবে পাখার ব্যবস্থাও। থাকবে মশা মারার ধূপ। এখানেই শেষ নয়। রোজ বাড়ির তৈরি খাবারই পাবেন সঞ্জয়। তা ছাড়া প্রতিদিন পরিবারের কেউ না কেউ দেখা করতে পারবেন তাঁর সঙ্গে।
সঞ্জয়ের শুধু একটি আর্জি খারিজ হয়েছে। ঘনঘন ধূমপান করেন বলে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন সঞ্জয়ের আইনজীবী, তাঁকে যদি ইলেকট্রনিক সিগারেট খেতে দেওয়া হয়। তাতে বিচারক সানাপ বলেন, “পারলে ধূমপানটাই ছেড়ে দিন।”
|
ছবি: এপি।
|
পুরনো খবর: ভিতরে ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছি |
|
|
|
|
|