প্রেসিডেন্সিতে হাঙ্গামার পরে বেকার ল্যাবরেটরির পাশে পাওয়া বর্শাটি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় বলেই তদন্ত কমিটির দাবি। মানবাধিকার কমিশনের গড়া ওই তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার জানায়, বর্শাটি যে বাইরে থেকেই আনা হয়েছিল, তার প্রমাণ মিলেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি তদন্তের রিপোর্ট তৈরির কাজ শেষ করে ফেলবেন বলে আশা প্রকাশ করেন কমিটির সদস্য অমল মুখোপাধ্যায়।
১০ এপ্রিল প্রেসিডেন্সির মূল ফটকের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে হামলা চালায় এক দল বহিরাগত। অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র সমর্থক। ওই দিনই বেকার ল্যাবরেটরির সামনে একটি জ্যাভলিন বা বর্শা পাওয়া যায়। পরে বর্শাটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
বর্শাটি ক্যাম্পাসের ভিতরের, নাকি সেটি বাইরে থেকে আনা হয়েছিল তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের মতান্তর আগেই সামনে এসেছিল। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি জানিয়েছিলেন, বর্শাটি কেউ বাইরে থেকে নিয়ে ঢোকেনি। সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই। এবং তাঁর সন্দেহ, ওটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া বিভাগেরই বর্শা। মন্ত্রী প্রশ্ন তোলায় পুলিশ ১৮ এপ্রিল প্রেসিডেন্সির ক্রীড়া বিভাগের স্টক রেজিস্টার বাজেয়াপ্ত করে।
প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ অবশ্য শিল্পমন্ত্রীর দাবি মানতে চাননি। তাঁরা জানান, বর্শা এসেছিল বাইরে থেকে। মানবাধিকার কমিশনের গড়া তদন্ত কমিটিও এ দিন জানাল, ওই বর্শা বাইরে থেকেই আনা হয়েছিল। ওই হামলার ঘটনার পুলিশি তদন্ত করছেন জোড়াসাঁকো থানার অফিসারেরা। তাঁরা এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি। |
তদন্ত কমিটি কীসের ভিত্তিতে বলছে যে, বর্শাটি বাইরে থেকেই আনা হয়েছিল? কমিটির তরফে অমলবাবু বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সির বর্শার স্টক রেজিস্টার মিলিয়ে দেখেন। পরে জানান, ওই নথিতে বর্শার সংখ্যায় গরমিল নেই। এতেই প্রমাণিত হয় যে, বিতর্কিত বর্শাটি প্রেসিডেন্সির নয়, সেটি বাইরে থেকেই আনা হয়েছিল।
হামলার দিন প্রেসিডেন্সিতে ঠিক কী ঘটেছিল, সেটাই তদন্ত করে কমিশনকে জানাবেন অমলবাবু। ছাত্র-অধ্যাপক-অধ্যক্ষ হিসেবে অমলবাবু দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্সির সঙ্গে যুক্ত। তাই তাঁর কাজে নিরপেক্ষতা কতটা বজায় থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। অমলবাবুর বক্তব্য, তাঁর মতো ভাল করে প্রেসিডেন্সিকে কেউ চেনে না। তাই এই কাজের পক্ষে তিনি অন্যতম যোগ্য ব্যক্তি। এপ্রিলেই তিনি উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ছাত্র, শিক্ষাকর্মী এবং ঘটনার দিন উপস্থিত অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সব রকম সহযোগিতা পেলেও পুলিশ তা করেনি বলে তাঁর অভিযোগ। অমলবাবু বলেন, “কোন অধিকারে আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চাই, স্বরাষ্ট্রসচিব তা জানতে চেয়েছিলেন।”
পরে কমিশনের একটি নোটিসের জেরে পুলিশকর্মীদের তলব করেন কমিশনের পুলিশ সুপার। তার পরে পুলিশকর্মীরা আসেন এবং অমলবাবু তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে তাঁর অভিযোগ, পুলিশের কাছ থেকে খুব একটা সাহায্য মেলেনি। এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্যে তিনি সন্তুষ্টও নন।
অমলবাবুর মতে, পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্যে ফারাক রয়েছে। কোনও একটি পক্ষ ঠিক বলছে না বলে মনে করেন তিনি। সেই জন্যই বৃহস্পতিবার তিনি ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলেন। পরে অমলবাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেই আগের বার যা বলেছেন, এ দিনও তা-ই বললেন। ওঁদের উত্তরে আমি সন্তুষ্ট।”
|