হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে (এইচপিএল) রাজ্যের শেয়ার নিলামের পথে কাঁটা এ বার আইনি জট।
পেট্রোকেমে নিজেদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির জন্য গত ১০ মে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রাজ্য। তার বিরোধিতা করে ১৩ মে পাল্টা নোটিস জারি করেছিল চ্যাটার্জি গোষ্ঠীও। হুঁশিয়ারি দিয়েছিল মামলা-মোকদ্দমার পথে হাঁটার। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবারই আদালতের দ্বারস্থ হল তারা। নিজেদের পুরনো অবস্থানে অনড় থেকে পেট্রোকেমের অন্যতম এই অংশীদারের দাবি, বিক্রির জন্য এইচপিএলের ৬৭.৫০ কোটি শেয়ার নিলামে চড়াতে চাইছে রাজ্য। কিন্তু তার মধ্যে ১৫.৫০ কোটি আসলে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীরই। এই আবেদন শুনে এ দিন ওই বিতর্কিত শেয়ার বিক্রির উপর স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। রায়ে জানিয়ে দেন, পরবর্তী নির্দেশ না-পাওয়া পর্যন্ত ওই সাড়ে ১৫ কোটি শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না রাজ্য।
কিন্তু এ দিনই আবার এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সুযোগ চায় রাজ্য। অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়ের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে ইন্দ্রপ্রসন্নবাবুই এ জন্য ১০ জুন পর্যন্ত সময় দেন রাজ্য সরকারকে। নিজেরই দেওয়া রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে তিনি জানান, উচ্চতর আদালতে যাওয়ার জন্য রাজ্য ১০ জুন অবধি সময় তো পাবেই। চালিয়ে যেতে পারবে নিলামের প্রক্রিয়াও (যেমন, ইচ্ছাপত্র গ্রহণ, তা দেখা ইত্যাদি)। তবে আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত ওই সাড়ে ১৫ কোটি শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না তারা।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই আইনি লড়াইয়ে নিলামের গতি কিছুটা ধাক্কা খেল ঠিকই। কিন্তু আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে থাকল রাজ্য সরকারই। কারণ, দু’টি। এক, শনিবার থেকে আদালতে গরমের ছুটি। তা খুলবে ফের জুনের গোড়ায়। ফলে বিষয়টি গুছিয়ে নিতে এই সময়কে ব্যবহার করতে পারবে রাজ্য। আর দুই, বিক্রি করতে না-পারলেও চালিয়ে যেতে পারবে নিলাম প্রক্রিয়ার কাজ।
রাজ্য যে এই জোড়া সুবিধাকে ব্যবহার করতে চায়, তা স্পষ্ট পেট্রোকেমের চেয়ারম্যান তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেই। তিনি বলেন, “আইনি লড়াইয়ের কারণে শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়া থেমে থাকবে না। আমাদের আশা, আগ্রহী ক্রেতারা ইচ্ছাপত্র জমা দেবেন।” |
এ দিন এ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চায়নি চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। তবে তাদের মুখপাত্রের দাবি, বিতর্কিত শেয়ার নিয়ে মীমাংসা হওয়ার আগে শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা থেকেই যাবে। উল্লেখ্য, রাজ্য নিজেদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরই পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ওই শেয়ার কেউ কিনতে চাইলে, তার দায় ও ঝুঁকি বইতে হবে তাদেরই। কারণ, তার মধ্যেই রয়েছে বিতর্কিত ১৫.৫০ কোটি শেয়ার। যার মালিকানা দাবি করে রাজ্য ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী, দু’তরফই।
দিনভর এই আইনি জটিলতার মাঝেই হলদিয়া পেট্রোকেমকে চাঙ্গা করার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করতে বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন পার্থবাবু। সংস্থার দুর্দশা কাটাতে ফের ব্যাঙ্কগুলির কাছে ঋণ চেয়েছে রাজ্য। ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে বরাবরই ব্যাঙ্কগুলি চেয়েছে, সংস্থায় নতুন করে লগ্নি করুক রাজ্য এবং চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। পার্থবাবু জানান, অন্তত নিজেদের দিক থেকে এই শর্ত পূরণে রাজি রাজ্য। তাঁর কথায়, “ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিদের জানিয়েছি সরকার ১০০ কোটি টাকা ঢালতে তৈরি। শেয়ার নিলামের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় খুশি ব্যাঙ্কগুলিও।” এই বৈঠকে অবশ্য চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কোনও প্রতিনিধি আমন্ত্রিত ছিলেন না।
|