হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে নিজেদের যে শেয়ার রয়েছে, তা নিলামে তুলবে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সে কথা জানিয়ে দিল তারা। তবে নিলামে যে সর্বোচ্চ দাম উঠবে, সেই দামে শেয়ার নেওয়ার জন্য প্রথমে হলদিয়ার অন্য অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে অনুরোধ করা হবে। এবং তা করা হবে হলদিয়ার অংশীদারি চুক্তি মেনেই।
হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে নিজেদের অংশীদারি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর রাজ্য। নিলাম করে তাদের শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্ত সমস্ত স্তরেই সিলমোহর পেয়ে গিয়েছে। এমনকী, কী ভাবে এই শেয়ার বিক্রি করা হবে, তার প্রথম থেকে শেষ পদক্ষেপ পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে দিয়েছে রাজ্যের অর্থ দফতর।
বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারির কথা ঘোষণা করে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, পেট্রোকেমে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের (রাজ্যের শেয়ার রয়েছে নিগমের নামেই) যে শেয়ার রয়েছে, তার সমস্তই বিক্রি করে দেওয়া হবে। তা নিয়ে আইনি পরামর্শও নেওয়া হবে। তার পর সচিব পর্যায়ের কমিটিতে আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা
হবে। তিন জনকে নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী এ দিন ফের বলেন, “ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়।”
সরকারের দাবি অনুযায়ী, এই শেয়ার বিক্রি করার যে পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তা সর্বাঙ্গীন ভাবে স্বচ্ছ। অর্থ দফতর থেকে পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি-র মতো বেশ কয়েকটি সংস্থা নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করে দিয়েছে। যে সংস্থাগুলিকে এই প্যানেলে রাখা হয়েছে, তাদের এ ধরনের নিলামে সহায়ক হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। এদের মধ্যে থেকে এক জনকে বেছে নেবে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। প্রাক্তন অর্থসচিব ও বর্তমান খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের সচিব চঞ্চলমল বাচাওয়াতের নেতৃত্বে সচিব পর্যায়ের একটি কমিটি নিলাম প্রক্রিয়ার উপর নজরদারি করবে।
তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি সংস্থার আর এক অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।
গত চার বছর ধরে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লোকসানে চলছে। সব মিলিয়ে লোকসানের বহর প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। ব্যাঙ্কগুলি রাজ্য সরকারকে পরিষ্কার জানিয়েছে, সংস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। পাশাপাশি নতুন পুঁজির উপরেও জোর দিচ্ছে তারা। সে ক্ষেত্রে সংস্থার দুই প্রধান অংশীদার, চ্যাটার্জি গোষ্ঠী বা রাজ্য সরকারকে এই টাকা ঢালতে হবে। আইনি বিবাদের জেরে সেই লগ্নি করতে পিছপা দু’পক্ষই। একই কারণে ইন্ডিয়ান অয়েল বা ওএনজিসি-র শাখা সংস্থা ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারিজকে বিনিয়োগকারী হিসেবে টানার চেষ্টাও সফল হয়নি।
নতুন সরকার হলদিয়া পেট্রোকেম নিয়ে যে মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করে, তারাই রাজ্যের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। সেখানে বলা হয়, এই শেয়ার খোলা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হোক। এ দিন প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথমে নিলামে নিজেদের শেয়ারের দাম ধার্য করবে রাজ্য সরকার। তার পরে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে সেই দামে শেয়ার কিনতে অনুরোধ করা হবে। তারা যদি না কেনে, তখন যে সংস্থা সর্বোচ্চ দাম দিয়েছে, তাকে বেচা হবে শেয়ার। প্রসঙ্গত, রাজ্যের শেয়ার বিক্রির আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী বরাবর বলে এসেছে, হলদিয়া পেট্রোকেমের চুক্তি অনুযায়ী আগে তাদের সেই শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব দিতে হবে। এই নিয়ে আদালতে মামলাও জারি রয়েছে। এমনকী, আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতেরও দ্বারস্থ হন সংস্থার অন্যতম মালিক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। ফলে সংস্থা চালাতে নয়া পুঁজি ঢালার প্রচেষ্টা শুধু মাত্র কথার কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্টে চলতি বছরেই বন্ধ হতে বসেছিল পেট্রোকেম। মে মাসে আর্থিক সঙ্কট এতটাই গভীর হয় যে, ন্যাপথা কেনার টাকায় টান পড়ে। প্রয়োজন ছিল ৩০০ কোটি টাকার। সামান্য হলেও কিছু ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ায় উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হয়।
গত সপ্তাহে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, পুজোর মধ্যে পেট্রোকেমের উৎপাদন বন্ধ রাখা হতে পারে। শিল্পমন্ত্রীর দাবি, আর্থিক কারণে নয়, প্রকল্পের যা অবস্থা তাতে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই কয়েক দিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন। ২০১১-১২ সালে প্রকল্প বন্ধ হয়েছে এগারো বার। রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মী অসন্তোষ-সহ নানা কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। |