নলি কেটে হাসপাতালে, রাতে ছুটে পালাল রোগী
ক দিন আগেই প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে গলায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেই রোগীই নিখোঁজ হয়ে গেলেন হাসপাতাল থেকে। বুধবার দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান শঙ্কর রজক নামে বছর সাঁইত্রিশের ওই রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা। রাতে বি-জোন ফাঁড়িতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগও দায়ের করেন তাঁরা। পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
শঙ্কর রজক
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুরের নিউটন-জেসি বসু রোড বস্তির বাসিন্দা শঙ্করবাবু সোমবার গলায় গভীর ক্ষত নিয়ে ভর্তি হন। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, গলার নলি কেটে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারের পরে তাঁকে আইসিইউ-তে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অক্সিজেন নল ও ক্যাথিটার খুলে দেওয়া হলেও স্যালাইন চলছিল। হাসপাতাল সূত্রে দাবি, গভীর রাতে হঠাৎ শঙ্করবাবু আইসিইউ থেকে বেরিয়ে পড়েন। কর্তব্যরত এক নার্স তা দেখে ছুটে গেলে তাঁকে স্যালাইন রাখার স্ট্যান্ড দিয়ে আঘাত করে শঙ্করবাবু দৌড় লাগান বলে অভিযোগ। তার পরে তাঁকে আর দেখা যায়নি।
এ দিন সকালে শঙ্করবাবুর বাড়ির লোকজন হাসপাতালে বিক্ষোভ শুরু করেন। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন তাঁরা। ওই রোগীর শ্যালক রাজেশ বৈঠার দাবি, পারিবারিক অশান্তির জেরে নিজের গলায় বঁটির কোপ মারেন পেশায় লন্ড্রি ব্যবসায়ী শঙ্করবাবু। রাজেশবাবুর অভিযোগ, “মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করি, কথাও বলি। অস্ত্রোপচার হওয়া এক রোগী আইসিইউ থেকে বেরিয়ে উধাও হয়ে গেল, অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা আটকাতে পারলেন না। তাহলে রোগীদের নিরাপত্তা কোথায়?” বিক্ষোভ দেখাতে আসা অ্যান্টনি ডি-সিলভা বলেন, “যে রোগীকে মোট আট বোতল রক্ত দিতে হয়েছে, পায়ের মাংস কেটে গ্রাফটিং করা হয়েছে গলায়। তেমন এক রোগীর এ ভাবে হাসপাতাল থেকে পালানোর ঘটনা খুবই উদ্বেগের।”
ডিএসপি হাসপাতালে বিক্ষোভ শঙ্কর রজকের পরিজনদের।
হাসপাতালের সিনিয়র নার্স গার্গী সরকারের দাবি, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ নার্সদের রাতে শিফটের ডিউটি বদল হচ্ছিল। সবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন নার্স কিরণ কুমারী। হঠাৎ তিনি দেখেন, আইসিইউ থেকে বারান্দায় দৌড়ে বেরিয়ে আসছেন শঙ্করবাবু। অভিযোগ, কিরণদেবী তাঁকে বাধা দিতে গেলে হাতের কাছে থাকা স্যালাইন স্ট্যান্ড দিয়ে শঙ্করবাবু কিরণদেবীর মাথায় মারেন। তিনি উঠে দাঁড়ানোর আগেই শঙ্করবাবু উধাও হয়ে যান। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রাতেই খবর দেওয় হলে পুলিশ এসে এক প্রস্থ তদন্ত করে।
এক দিন আগে অস্ত্রোপচার হওয়া এক রোগী এ ভাবে ছুটলেন কী ভাবে? কেনই বা তিনি পালিয়ে গেলেন? গার্গীদেবীর দাবি, “আমাদের ধারণা, উনি নিয়মিত মাদক নেন। এখানে তা না পেয়ে হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠেন।” দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগোরও বক্তব্য, “নেশার সামগ্রী না পেয়ে ঝামেলা পাকানোয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেওয়ার কথা বলেছিলেন ওই রোগীকে। এর পরেই তিনি পালিয়ে যান।” রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এই হাসপাতালে প্রহরার দায়িত্বে রয়েছে সিআইএসএফ। কিন্তু পিছনের গেটের দিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বরাবরই ঢিলেঢালা বলে হাসপাতালেরই একটি সূত্রের খবর। সেখান দিয়েই ওই রোগী পালিয়েছেন বলেও হাসপাতালের অনেকের অনুমান। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পুলিশ জানায়, ওই রোগীর খোঁজ চলছে।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.