নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বহুমূল্য বিদেশি প্রতিষেধক আর লাগবে না। ডায়েরিয়া ঠেকাতে এ বার মুঠোয় আসছে দেশজ প্রতিষেধক। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ আঠাশ বছরের প্রচেষ্টায় এই সাফল্য অবশেষে করায়ত্ত হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক।
ভারতে শিশুমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ ডায়েরিয়া। এতে আক্রান্ত যে সব শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের প্রায় ৫০ শতাংশের রোগের পিছনে রয়েছে বিশেষ একটি ভাইরাস রোটাভাইরাস। তার কবলে পড়া শিশুদের ৩৫%-৪০% মারা যায় সংখ্যায় যা লক্ষাধিক। সারা বিশ্বে ফি বছর অন্তত সাড়ে চার লাখ শিশুর প্রাণ কাড়ে রোটাভাইরাসের সংক্রমণ। বিদেশি প্রতিষেধক বাজারে আছে বটে, তবে চড়া দামের কারণে তা কার্যত ভারতীয় আমজনতার নাগালের বাইরে।
ফলে রোটাভাইরাসের দাপটও বল্গাহীন। সস্তায় দেশীয় প্রতিষেধক এক ধাক্কায় এ বার তাতে অনেকটা রাশ টানতে পারবে বলে মন্ত্রকের আশা। উপরন্তু ডায়েরিয়ার চিকিৎসার পিছনে ফি বছর সরকারের যে ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়, নতুন টিকা তার বহরও কমাতে পারে। কিন্তু বাজারে কবে আসবে? দামই বা পড়বে কত?
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের দাবি: দিল্লি-পুণে-ভেলোরের ৬৭৯৯ জন শিশুর উপরে প্রতিষেধকটি প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল (ডিসিজিআই)-এর ছাড়পত্র না-আসায় টিকাটি এখনই বাজারে মিলবে না। কর্তাদের আশা, জুলাইয়ের মধ্যে ডিসিজিআইয়ের ছাড়পত্র আসবে। তার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাজারে ছাড়া হবে ডায়েরিয়ার দেশজ প্রতিষেধক ‘রোটাভ্যাক।’ একটা ডোজের দাম পড়বে মোটামুটি ৫০ টাকা, লাগবে তিনটে ডোজ। মন্ত্রকের দাবি: প্রতিটি শিশুকে ৬, ১০ ও ১৪ সপ্তাহ বয়সে এটি পাল্স পোলিওর মতো খাওয়ালে তারা নতুন জীবন পাবে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই বলে তাঁদের দাবি। উল্লেখ্য, এখন বাজারে রোটাভাইরাসের যে বিদেশি প্রতিষেধক পাওয়া যায়, তার একটা ডোজের দাম প্রায় দু’হাজার টাকা! |
এই সাফল্য এল কী ভাবে?
কেন্দ্রীয় কর্তারা জানিয়েছেন, উদ্যোগের সূত্রপাত ১৯৮৫-তে। নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এ ডায়েরিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছিল একটি বাচ্চা। তার শরীর থেকে রোটাভাইরাস সংগ্রহ করে গবেষণায় নামেন এইমসের বিজ্ঞানীরা। তারই ফল মিলেছে এত দিনে। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রয়াসটিতে শরিক হয়েছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রকের বায়োটেকনোলজি বিভাগ। বিভাগের সচিব কে বিজয়রাঘবন জানান, গবেষণায় সাফল্যের কথা ঘোষণার আগে প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক ব্যবহার হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। প্রস্তুতকারী সংস্থার দাবি: গর্ভবতীদের থেকে আগাম অনুমতি নেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁদের সন্তানের উপরে এটি প্রয়োগ করা যায়। চূড়ান্ত ট্রায়াল হয়েছে দিল্লি, পুণে ও ভেলোরে। সংস্থার কর্তারা জানান, প্রত্যেক মাকে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছিল, যাতে টিকা খাওয়ানোর পরে বাচ্চার সমস্যা হলে তৎক্ষণাৎ জানাতে পারেন। কিন্তু তেমন কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর আসেনি বলে সংস্থার দাবি।
ডাক্তারেরা কী বলছেন? কতটা কার্যকরী হতে পারে রোটাভ্যাক?
শিশু-চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “রোটাভাইরাস থেকে যে ধরনের ডায়েরিয়া হয়, তাতে শরীর খুব তাড়াতাড়ি জলশূন্য হয়ে পড়ে। দ্রুত স্যালাইন চালানো না-গেলে তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। সমস্ত উন্নত দেশে বাচ্চাদের রোটাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়। এ দেশে খরচটা ছিল মস্ত সমস্যা। যেখানে প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি, সেই গ্রামের মানুষ তা কিনতে পারতেন না। এ বার সেই সমস্যা মিটবে।” এই প্রতিষেধক কি সব ধরনের (টাইপ) রোটাভাইরাসকে বাগ মানাতে পারবে?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড)-এর অধিকর্তা শেখর চক্রবর্তী অবশ্য নিশ্চিত নন। “আবিষ্কারটা ভাল, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারতে রোটাভাইরাসের পাঁচটি টাইপ সক্রিয়। টিকা প্রয়োগ হয়েছে একটার উপরে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে, তা সময়ই বলবে।” মন্তব্য শেখরবাবুর। |